বিদআতের কুফল সমূহ bidat

 

বিদআতের কুফল সমূহ

বিদআতের কুফল সমূহ

বিদআতের কুফল সমূহ

এমন অনেকের সাক্ষাত পাবেন যারা ইসলামী চেতনায় সমৃদ্ধ। কিন্তু বলেন,  বিদ‘আতের বিরোধিতায় এত বাড়াবাড়ির কি দরকার? কেহ একটু মীলাদ পড়লে, কুলখানি বা চল্লিশা-চেহলাম পালন কিংবা এ জাতীয় কিছু করলে দ্বীন ইসলামের কি এমন ক্ষতি হয়ে যায়?

আমি একদিন এক মাসজিদের ইমাম সাহেবের বক্তব্য শুনছিলাম। তিনি বলছিলেন শবে মিরাজ উপলক্ষ্যে এ রাতে কোন বিশেষ সালাত, ইবাদাত-বন্দেগী বা সিয়াম নেই। যদি শবে মিরাজ উপলক্ষ্যে কোন ‘আমল করা হয় তা বিদ‘আত হিসাবেই গণ্য হবে। তার এ বক্তব্য শেষ হতে না হতেই কয়েকজন শিক্ষিত শেণীর মুসল্লী বলে উঠলেন, হুজুর এ কি বলেন! রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বতে এ রাতে কিছুকরলে বিদ‘আত হবে কেন? প্রশ্নকারী লোকগুলোযে বিভ্রান্ত বা বিদ‘আতপন্থী তা কিন্তু নয়। তাদের খারাপ কোন উদ্দেশ্য নেই। কিন্তু তারা যা করার ইচ্ছা করেছেন, উহার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই।

অবশ্যই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহব্বত ঈমানের অঙ্গ। আর সব ধরনের মুহাব্বতেই আবেগ থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহব্বতেও থাকবে। কিন্তুসেই আবেগ যেন মুহব্বতের নীতিমালা লংঘন না করে। সেই আবেগভরা মুহাব্বত যেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ  ও সুন্নাহর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত না হয়। যদি এমনটি হয় তাহলে বুঝতে হবে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বতের নামে শয়তান তাকে ধোকায় ফেলেছে।

এ কথাতো মুসলিমদের কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, খৃষ্টানরা বিদ‘আতী কাজ-কর্ম  করে ও তাদের নবীর মুহব্বতে বাড়াবাড়ি করে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। এ কথা যেমন আল-কুরআনে এসেছে, তেমনি হাদীসেও আলোচনা করা হয়েছে। আমি অতি সংক্ষেপে এখানে বিদ‘আতের কতিপয় পরিণাম সম্পর্কে  আলোচনা করছি

(১) বিদআত মানুষকে পথভ্রষ্ট করে।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা উম্মতের জন্য নিয়ে এসেছেন তা হল হক্ক। এ ছাড়া যা কিছুধর্মীয় আচার হিসাবে পালিত হবে তা পথভ্রষ্টতা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : হক আসার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কি থাকে? (সূরা ইউনূস, ৩২)

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : সকল ধরনের বিদ‘আত পথভ্রষ্টতা। (মুসলিম, ইবনে মাজাহ)

(২) বিদআত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য থেকে মানুষকে বের করে দেয় এবং সুন্নাতের বিলুপ্তি ঘটায়।

কেননা বিদ‘আত অনুযায়ী কেউ ‘আমল করলে অবশ্যই সে এক বা একাধিক সুন্নাত পরিত্যাগ করে। উলামায়ে কিরাম বলেছেন : “যখন কোন দল সমাজে একটা বিদ‘আতের প্রচলন করে, তখন সমাজ থেকে কম করে হলেও একটি সুন্নাত বিলুপ্ত হয়ে যায়।”

আর এটা অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত যে, যখনই কোন বিদ‘আত ‘আমলে আনা হয়েছে তখনই সেই স্থান থেকে একটি সুন্নাত চলে গেছে বা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদ আলফেসানীর মাকতুবাত থেকে উদ্ধৃতি দেয়া যায়। তিনি লিখেছেন : এক ব্যক্তি আমাকে প্রশ্ন করল ‘আপনারা বলেছেন : যে কোন বিদ‘আত নাকি একটি সুন্নাতকে বিলুপ্ত করে। আচ্ছা, যদি মৃত ব্যক্তিকে কাফনের সাথে একটি পাগড়ী পড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে কোন সুন্নাতটি বিলুপ্ত হয়? কি কারণে এটা বিদ‘আত বলা হবে?’ আমি জবাবে লিখলাম : অবশ্যই একটি সুন্নাত বিলুপ্ত হয় যদি মৃতের কাফনে পাগড়ী দেয়া হয়। কারণ পুরুষের কাফনের সুন্নাত হল কাপড়ের সংখ্যা হবে তিন। পাগড়ী পড়ালে এ সংখ্যা আর ‘তিন’ থাকেনা, সংখ্যা দাড়ায় ‘চার।’

উদাহরণ হিসাবে আরো বলা যায়, এক ব্যক্তি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ল। ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এ সমস্যার জন্য এক পীর সাহেবের কাছে গেল। পীর সাহেব তাকে বললেন, তুমি এক খতম কুরআন বখশে দাও অথবা নির্দেশ দিলেন একটা মীলাদ দাও বা খতমে ইউনূসের ব্যবস্থা কর। সে তাই করল। ফলাফল কি দাড়াল? ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির জন্য একটি দু‘আ রয়েছে যা ‘আমল করা সুন্নাত। বিদ‘আত অনুযায়ী ‘আমল করার কারণে সে সেই সুন্নাতটি পরিত্যাগ করল। জানার চেষ্টা করলনা যে, এ ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি ব্যবস্থা দিয়ে গেছেন। অন্যদিকে সে মিলাদ, কুরআন খতম ইত্যাদি বিদ‘আতী কাজ করে আরও আর্থিক ঋণভারে জর্জরিত হলো।

রামাযানের শেষ দশ দিনের রাতসমূহে রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগী করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু ১৫ শাবানে রাত জাগাকে যেমন গুরুত্ব দেয়া হয় তেমনভাবে এ সুন্নাতী ‘আমলের প্রচলন দেখা যায় না। বরং শবে কদরের মূল্যায়ন শবে বরাতকে করা হচ্ছে। ফরয সালাত আদায়ের পর সর্বদা জামাতবদ্ধ হয়ে মুনাজাত করা একটি বিদ‘আত। এটা ‘আমল করার কারণে ফরয সালাত আদায়ের পর যে সকল যিকর-আযকার সুন্নাত হিসাবে বর্ণিত আছে তা পরিত্যাগ করা হয়।

আপনি দেখবেন এভাবে প্রতিটি বিদ‘আত একটি সুন্নাতকে অপসারিত করে উহার স্থান দখল করে নিয়েছে।

(৩) বিদআত আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করে।

এর জ্বলন্ত উদাহরণ আজকের খৃষ্টান ধর্ম। তারা ধর্মের  বিদ‘আত প্রচলন করতে করতে উহার মূল কাঠামো পরিবর্তন করে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পথভ্রষ্ট হিসাবে অভিহিত হয়েছে। তাদের বিদ‘আত প্রচলনের কথা আল-কুরআনে উলেখ− করা হয়েছে : আর সন্ন্যাসবাদ! ইহাতো তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় প্রচলন করেছিল। আমি তাদের এ বিধান দেইনি। (সূরা হাদীদ. ২৭)

সন্ন্যাসবাদ তথা বৈরাগ্যবাদের বিদ‘আত খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মের  প্রবর্তন করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ভাল ছিল; উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি। কিন্তু ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে নিজেদের ইচ্ছামত যে কোন কাজ করলেই তা গ্রহণযোগ্য হয় না। এ জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুমোদন প্রয়োজন। এভাবে যারা ধর্মের  বিদ‘আতের প্রচলন করে তাদের অনেকেরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভাল থাকে। কিন্তু তাতে নাজাত পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ইয়াহুদী ও খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মের  অন্য জাতির রসম-রেওয়াজ ও বিদ‘আত প্রচলন করে ধর্মকে এমন বিকৃত করেছে যে, তাদের নবীগণ যদি আবার পৃথিবীতে ফিরে আসেন তাহলে তাদের রেখে যাওয়া ধর্ম  তাঁরা নিজেরাই চিনতে পারবেন না।

আমাদের মুসলিম সমাজে শিয়া সম্প্রদায় বিদ‘আতের প্রচলন করে দ্বীন ইসলামকে কিভাবে বিকৃত করেছে তা নতুন করে বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই।

(৪) বিদআত ইসলামের উপর একটি আঘাত।

যে ইসলামে কোন বিদ‘আতের প্রচলন করল সে মূলতঃ অজ্ঞ লোকদের মত এ কথা স্বীকার করে নিল যে, ইসলাম পরিপূর্ণ  জীবন বিধান নয়, তাতে সংযোজনের প্রয়োজন আছে। যদিও সে মুখে এ ধরনের বক্তব্য দেয় না, কিন্তু তার কাজ এ কথার স্বাক্ষী দেয়। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ  করে দিলাম। (সূরা মায়িদা,৩)

(৫) বিদআত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে খিয়ানাতের এক ধরনের অভিযোগ।

যে ব্যক্তি কোন বিদ‘আতের প্রচলন করল বা ‘আমল করল আপনি তাকে জিজ্ঞেস করুন “এ কথা বা কাজটি যে ইসলাম ধর্মের  পছন্দের বিষয় এটা কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতেন? তিনি উত্তরে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ বলবেন। যদি ‘না’ বলেন তাহলে তিনি স্বীকার করে নিলেন যে, ইসলাম সম্পর্কে  আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কম জানতেন। আর যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন তাহলে তিনি স্বীকার করে নিলেন যে,আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি জানতেন, কিন্তু উম্মাতের মধ্যে প্রচার করেননি। এ অবস্থায় তিনি তাবলীগে শিথিলতা করেছেন। (নাউ‘যুবিল্লাহ!)

(৬) বিদআত মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে ও ঐক্য সংহতিতে আঘাত করে।

বিদ‘আত মুসলিম উম্মাহর মধ্যে শত্রুতা ও বিবাদ-বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে তাদের মারামারি হানাহানিতে লিপ্ত করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে, একদল লোক মীলাদ বা মীলাদুন্নবী পালন করল। আরেক দল বিদ‘আত হওয়ায় তা বর্জন বা বিরোধিতা করল। যারা এটা পালন করল তারা প্রচার করতে লাগল যে, অমুক দল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিনে আনন্দিত হওয়া পছন্দ করে না। তাঁর গুণ-গান করা তাদের কাছে ভাল লাগেনা। তাদের অন্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বত নেই। যাদের অন্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বত নেই তারা বেঈমান, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুশমন। আর এ ধরনের প্রচারনায় তারা দুটি দলে বিভক্ত হয়েএকে অপরের দুশমনে পরিণত হয়ে হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ল। এভাবে ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই বিদ‘আতকে গ্রহণ ও বর্জনের প্রশ্নে মুসলিম উম্মাহ শিয়া ও সুন্নি এবং পরবর্তী কালে আরো শত দলে বিভক্ত হয়ে গেল। কত প্রাণহানির ঘটনা ঘটল, রক্তপাত হল।

তাই মুসলিম উম্মাহকে আবার একত্র করতে হলে সকলকে কুরআন ও সুন্নাহর দিকে আহ্বান ও বিদ‘আত বর্জনের জন্য অহিংস ও শান্তিপূর্ণপন্থায় পরম ধৈর্য্যের সাথে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করতে হবে সকল মানুষ ও মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা প্রদর্শন করে । কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন আচরণ করা যাবে না। এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, যা হক ও সত্য তা-ই শুধু টিকে থাকবে। আর যা বাতিল তা দেরীতে হলেও বিলুপ্ত হবে।

(৭) বিদআত আমলকারীর তাওবা করার সুযোগ হয় না।

বিদ‘আত যিনি প্রচলন করেন বা সেই অনুযায়ী ‘আমল করেন তিনি এটাকে এক মহৎ কাজ বলে মনে করেন। তিনি মনে করেন এ কাজে আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট হবেন। যেমন আল্লাহ খৃষ্টানদের সম্পর্কে  বলেছেন তারা ধর্মের বৈরাগ্যবাদের বিদ‘আত চালু করেছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। যেহেতু বিদ‘আতে লিপ্ত ব্যক্তি বিদ‘আতকে পাপের কাজ মনে করেন না, তাই তিনি এ কাজ থেকে তাওবা করার প্রয়োজন মনে করেন না এবং তাওবা করার সুযোগও হয় না। অন্যান্য পাপের বেলায় কমপক্ষে যিনি পাপে লিপ্ত হন তিনি এটাকে অন্যায় মনে করেই করেন। পরবর্তীতে তার অনুশোচনা আসে, এক সময় তাওবা করে আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমা লাভ করেন। কিন্তুবিদ‘আতে লিপ্ত ব্যক্তির এ অবস্থা কখনো হয় না।

(৮) বিদআত প্রচলনকারী রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফাআত পাবে না।

রাহমাতুলি−ল আলামীন সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর গুনাহগার উম্মাতের শাফায়াতের ব্যাপারে হাশরের ময়দানে খুব আগ্রহী হবেন । আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে অনুমতি লাভ করার পর তিনি বহু গুনাহগার বান্দা-যাদের জন্য শাফাআত করতে আল্লাহ তা‘আলা অনুমতি দিবেন-তাদের জন্য শাফাআত করবেন। কিন্তু বিদ‘আত প্রচলনকারীর জন্য তিনি শাফাআত করবেন না।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : শুনে রেখ! হাউজে কাউছারের কাছে তোমাদের সাথে আমার দেখা হবে। তোমাদের সংখ্যার আধিক্য নিয়ে আমি গর্ব  করব। সেই দিন তোমরা আমার চেহারা মলিন করে দিওনা। জেনে রেখ! আমি সেদিন অনেক মানষু কে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালাব। কিন্তু তাদের অনেককে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হবে। আমি বলব : হে আমার প্রতিপালক! তারা তো আমার প্রিয় সাথী-সঙ্গী, আমার অনুসারী। কেন তাদের দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে? তিনি উত্তর দিবেন : আপনি জানেন না যে, আপনার চলে আসার পর তারা ধমের্র মধ্যে কি কি নতুন বিষয় আবিস্কার করেছে। (ইবনে মাজাহ)

অন্য এক বর্ণনায় আছে এর পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই তাদের উদ্দেশে বলবেন : দূর হও! দূর হও!!

(৯) বিদআত মুসলিম সমাজে কুরআন ও হাদীসের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়।

কুরআন ও সুন্নাহ হল মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামের রক্ষা কবচ। ইসলাম ধর্মের অস্তিত্বের একমাত্র উপাদান। তাইতো বিদায় হজ্জেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যতক্ষণ তোমরা তা আঁকড়ে রাখবে ততক্ষণ বিভ্রান্ত হবে না।

বিদ‘আত অনুযায়ী ‘আমল করলে কুরআন ও সুন্নাহর মর্যাদা মানুষের অন্তর থেকে কমে যায়। ‘যে কোন নেক ‘আমল কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে’ – এ অনুভূতি মানুষের অন্তর থেকে ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে। তারা কুরআন ও হাদীসের উদ্ধৃতি বাদ দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, পীর-মাশায়েখ ও ইমামদের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকে।

(১০) বিদআত প্রচলনকারী অহংকারের দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে ও নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে দ্বীনকে ব্যবহার ও বিকৃত করতে চেষ্টা করে।

বিদ‘আত প্রচলনকারী তার নিজ দলের একটি আলাদা কাঠামো দাঁড় করিয়ে ব্যবসায়িক বা আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য এমন কাজের প্রচলন করে থাকে যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মীয় রূপ লাভ করলেও কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা সমর্থিত হয় না। কারণ সেই কাজটা যদি কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা সমর্থিত হয় তাহলে তার দলের আলাদা কোন বৈশিষ্ট থাকে না। কেননা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত ‘আমল সকল মুসলিমের জন্যই প্রযোজ্য। তাই সে এমন কিছুআবিস্কার করতে চায় যার মাধ্যমে তার দলের আলাদা পরিচয় প্রতিষ্ঠা করা যায়।

এ অবস্থায় যখন হাক্কানী উলামায়ে কিরামগণ এর প্রতিবাদ করেন বা এ কাজটি চ্যালেঞ্জ করেন তখন তার ঔদ্ধত্য বেড়ে যায়। নিজেকে সে কুতুবুল আলম, ইমাম-সম্রাট, হাদীয়ে উম্মাত, রাহবারে মিল্লাত, যিল্লুর রহমান বলে দাবী করতে থাকে। প্রচার করতে থাকে এ দুনিয়ায় সে’ই একমাত্র হক পথে আছে, বাকী সবাই ভ্রান্ত।

মুখোশধারী বিদআতি কে চিনতে চান? তাঁদের সঙ্গীদের দেখুন

Image may contain: text

শুরু করছি মহান দয়ালু ও পরম করুণাময় আল্লাহর নামে। শান্তি অবতীর্ণ হোক নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর সঙ্গিসাথী ও পরিবারবর্গের ওপর।

পোস্টটি একটি বাস্তব ঘটনা উল্লেখ করে শুরু করা যাক। ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন আহলুল সুন্নাহর প্রখ্যাত ইমাম, ইমাম আবু নাসর ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু সা‘ঈদ ইবনু হাতিম আল-ওয়া‘ঈলী আল-বাকরী আস-সিজযী (রাহিমাহুল্লাহ)। ইমাম আস-সিজযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “এখানে মাক্কাহতে আমাদের সাথে এক লোক আছে যে হাদীস নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সে তার বেশীরভাগ সময় এই বলে চিল্লাফাল্লা করে শেষ করে যে, সে আশ‘আরী নয়। অতঃপর সে বলে, ‘আমি তাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তিবর্গ দেখেছি, এবং আমি (এমন আশ‘আরীদেরকে) দেখেছি যাদের পায়ের নীচের ধুলো সৃষ্টি থেকে উত্তম।’ এবং আশ‘আরীদের মধ্য থেকে কোনো লোক যখন শহরে আসতো তখন সে তাকে অনুসরণ করতো ও কাছে টেনে নিতো। এবং আমাদের সঙ্গীদের মধ্য থেকে কোন লোক যখন তার নিকট গমন করতো তখন সে তার থেকে দূরে থাকতো ও তার থেকে সতর্ক করতো। এবং যখনই হাম্বলীদের (আহলুস সুন্নাহ/আহলুল হাদীস/সালাফী) ‘উলামাদের মধ্য থেকে কোনো একজন ‘আলিমের ব্যাপারে উল্লেখ করা হতো সে তার দোষ খুঁজতো। এবং সে বলতো, ‘আহমাদ উত্তম ব্যক্তি, কিন্তু তিনি তাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত রয়েছেন যারা মিথ্যা বলে।’ এটি ছিলো তার একটি অপকৌশল। এর মাধ্যমে সে দুর্ভোগ ছাড়া অন্য কিছু বয়ে আনবে না।”

(ইমাম আস-সিজযী কর্তৃক আল-হারফ এবং আস-সাওত অস্বীকারকারীদের রাদ করে লেখা চিঠি, পৃষ্ঠা ২৩২)।

ইমাম আস-সিজযী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর উক্তিটি থেকে আমরা যেসব বিষয় বুঝতে পারলাম সেগুলো হলো: বিদ‘আতীদের কেউ কেউ আহলুস সুন্নাহর কাছে তাদের ‘আক্বীদাহ-মানহাজ গোপন করে আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ভান ধরে, আহলুস সুন্নাহর ইমামদের প্রতি তারা ভালোবাসা প্রদর্শন করে কিন্তু তাদের অনুসারীদের ঘৃণা করে, তারা তাদের বিদ‘আত গোপন করলেও তারা বাস্তবে যেই ‘আক্বীদাহ-মানহাজের অনুসারী, সেই ‘আক্বীদাহ-মানহাজের অন্যান্য অনুসারীদের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও মেলামেশা গোপন করতে অক্ষম হয়।

আর যেহেতু মুখোশধারী বিদ‘আতীরা এই দুটি বিষয়—তাদের ভালোবাসা ও ঘৃণা কাদের প্রতি এবং তাদের সঙ্গিসাথী কারা—গোপন করতে অক্ষম হয়, সেহেতু এই মুখোশধারী বিদ‘আতীদের মুখোশ উন্মোচনের অন্যতম পদ্ধতি হলো এই দুটি বিষয়ের ওপর লক্ষ্য রাখা। এবং আমাদের সালাফগণ ঠিক এই কাজটিই করতেন। আল্লাহ যদি তাওফীক্ব দেন তাহলে ভবিষ্যতে আমরা পূর্ববর্তী ইমামগণের উক্তিসমূহ উল্লেখ করে একটি পোস্ট করবো এই বিষয়ে যে – ব্যক্তির মান নির্ণয় করা হবে সে কাদের ভালোবাসে এবং কাদের ঘৃণা করে তার ভিত্তিতে, আর এই পোস্টে আমরা ব্যক্তির মান নির্ণয় যে তার সাহচর্যের ভিত্তিতে করা হবে এই ব্যাপারে রাসূল ﷺ-এর হাদীস, সাহাবাদের আছার এবং পূর্ববর্তী ইমামদের বেশ কিছু উক্তি উল্লেখ করবো। পোস্টের আসন্ন মূল অংশে উল্লিখিত উক্তিসমূহ শাইখ জামাল বিন ফুরাইহান আল হারিসী (হাফিযাহুল্লাহ)’র “লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর মিনাল ক্বওলিল মা‘সূর ফিল ই‘তিক্বাদি ওয়াস সুন্নাহ” গ্রন্থের “সালাফগণ ব্যক্তির মান নির্ণয় করতেন তার সঙ্গী ও সহচরদের অবস্থার ভিত্তিতে” শীর্ষক অধ্যায় থেকে সংগৃহীত হয়েছে। “লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর” গ্রন্থটি পড়েছেন এবং পুনঃসমীক্ষা করেছেন শাইখ হারিসীর সম্মানিত শাইখ যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আর এই অমূল্য গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দিয়েছেন সৌদি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মান্যবর মন্ত্রী মহোদয় আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ সালিহ বিন ‘আব্দুল ‘আযীয আলুশ-শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)।

ব্যক্তির মান নির্ণীত হবে তার সাহচর্যের ভিত্তিতে:

১. আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৫৯ হি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

”الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِل.“

‘‘মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’’

[আবূ দাউদ, হা/৪৮৩৩; তিরমিযী, হা/২৩৭৮; আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), সিলসিলাহ সাহীহাহ, হা/৯২৭; সনদ: হাসান]

২. ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) [মৃত: ৫৮ হি.] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে,

”الأَرْوَاحُ جُنُوْدٌ مُجَنَّدَةٌ فَمَا تَعَارَفَ مِنْهَا ائْتَلَفَ وَمَا تَنَاكَرَ مِنْهَا اخْتَلَف.“

‘‘সমস্ত রূহ সেনাবাহিনীর মত একত্রে সমবেত ছিল। সেখানে তাদের যে সমস্ত রূহের পরস্পর পরিচয় ছিল, এখানে তাদের মধ্যে পরস্পর পরিচিতি ও সৌহার্দতা থাকবে। আর সেখানে যাদের মধ্যে পরস্পর পরিচয় হয়নি, এখানে তাদের মধ্যে পরস্পর মতভেদ ও মতবিরোধ থাকবে।’’

[সাহীহ বুখারী, হা/৩৩৩৬; সাহীহ মুসলিম, হা/২৬৩৮]

{ইমাম খত্বত্বাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩৮৮ হি.] বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা (সুনির্ধারিত) পারস্পরিক সৌহার্দতার ভিত্তিতেই রূহসমূহকে সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের মধ্যে কারা সৌভাগ্যবান হবে (তথা জান্নাতে যাবে) এবং কারা দুর্ভাগা হবে (তথা জাহান্নামে যাবে) সেটাও সৃষ্টির শুরুতেই নির্ধারণ করেছেন। (রুহজগতে) রূহগুলো ছিলো দুইটি আলাদা ভাগে বিভক্ত। সুতরাং দুনিয়াতে যখন তাদের সাক্ষাৎ হবে, তখন তাদের মধ্যে সৌহার্দতা ও মতবিরোধ হবে ঐ রূহ জগতে তাদেরকে যে সৌহার্দতার উপর সৃষ্টি করা হয়েছে তার ভিত্তিতেই। ফলে ভালোরা ভালোদের দিকে ঝুঁকবে, আর খারাপরা খারাপদের দিকেই ঝুঁকবে।’’ (ইমাম নাওয়াউয়ীর শারহে মুসলিম, ২৬৩৮ নং হাদীছের ভাষ্য দ্রষ্টব্য) – অনুবাদক।}

৩. ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

”اعتبروا الناس بأخدانهم المسلم يتبع المسلم والفاجر يتبع الفاجر.“

‘‘তোমরা লোকদেরকে তাদের সঙ্গীবর্গের মাধ্যমে (ভালো বা মন্দ) গণ্য করো। যে ব্যক্তি মুসলিম, সে মুসলিমেরই অনুসরণ করে। আর যে ব্যক্তি পাপাচারী, সে পাপাচারীরই অনুসরণ করে।’’

[ত্ববারানী (রাহিমাহুল্লাহ), আল মু‘জামুল কাবীর, হা/৮৯১৯; ইবনু বাত্তাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল ইবানাহ, আছার নং: ৫০২]

৪. ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

”إنما يمشي الرجل ويصاحب من يحبه ومن هو مثله.“

‘‘প্রকৃতপক্ষে একজন ব্যক্তি তার সাথেই চলাফেরা করে এবং তারই সঙ্গী হয়, যাকে সে পছন্দ করে এবং যে হয় (স্বভাবচরিত্রে) তারই অনুরূপ।’’

[বাইহাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ), শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৪৩৯; আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৯৯, ৫০০]

৫. ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] আরো বলেন,

”اعتبروا الناس بأخدانهم فإن الرجل لا يخادن إلا من يعجبه نحوه.“

‘‘তোমরা লোকদেরকে তাদের সঙ্গীবর্গের মাধ্যমে (ভালো বা মন্দ) গণ্য করো। নিশ্চয়ই মানুষ তার সাথেই বন্ধুত্ব করে, যে (স্বীয় কথাবার্তা বা চলাফেরায়) তাকে মুগ্ধ করে।’’

[আল ইবানাহ; আছার নং: ৩৭৬, ৫০১]

৬. শাইখুল ইসলাম ইমাম আবূ ক্বিলাবাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১০৭ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ দারদা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] বলেছেন,

”من فقه الرجل ممشاه ومدخله مجلسه.“ ثم قال أبو قلابة: ”قاتل الله الشاعر حين يقول:
عن المرء لا تسئل وأبصر قرينه ~ فإن القرين بالمقارن يقتدي.“

‘‘এটা একজন ব্যক্তির ফিক্বহের (বুঝের) অন্তর্ভুক্ত যে, সে কাদের সাথে চলাফেরা করে, কাদের কাছে গমন করে এবং কাদের সাথে ওঠাবসা করে।’’
এরপর আবূ ক্বিলাবাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘‘আল্লাহ্ ধ্বংস করুন ঐ কবিকে, যে বলেছিল-
কোনো ব্যক্তির (হালচাল জানতে) তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস কোরো না, বরং লক্ষ্য করো কে তার সঙ্গী। কারণ, সকল সঙ্গী তার নিজ সঙ্গীরই অনুসরণ করে থাকে।’’

[ইবনুল মুবারাকের আয-যুহ্‌দ; আছার নং: ৯৮৮; ইবনু আবী ‘আসািমের আয-যুহ্‌দ, আছার নং: ৭৭; আল ইবানাহ; আছার নং: ৩৬৮, ৩৭৭, ৪৫৯]

{শাইখ হারিছী (হাফিয্বাহুল্লাহ) বইটির ১ম সংস্করণে কিছু কথা বলেছেন, যা ২য় সংস্করণে নেই। উপরিউক্ত উক্তিটি আরো স্পষ্ট করার জন্য সেই অংশটুকু তুলে ধরা হলো। তিনি বলেছেন,

“ইমাম আসামা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২১৫ হি.] ‘আদী বিন যাইদের পঙক্তিটির ব্যাপারে বলেন,

”لم أر بيتا قط أشبه بالسنة من قول عدي.“

‘‘আমি কখনও এমন পঙক্তি দেখিনি, যা সুন্নাহর সাথে ‘আদী বিন ঝাইদের এই কথার চেয়ে বেশী সাদৃশ্য রাখে।’’ (আল ইবানাহ; আছার নং: ৩৭৮)

আমি (শাইখ হারিছী) বলছি, ‘আদী বিন যাইদের পঙক্তিটি সম্ভবত আবূ ক্বিলাবাহ (রাহিমাহুল্লাহ্) কে মুগ্ধ করেছিল।’

দ্র.: লাম্মুদ দুর্রিল মানছূর (১ম সংস্করণ), পৃষ্ঠা: ১৭; সংগৃহীত: সাহাব ডট নেটের ‘‘হুকমুস সালাফ ‘আলাল মার’ই বিক্বরীনিহ’’ শীর্ষক আর্টিকেল।

{‘আদী বিন ঝাইদ [মৃত: ৩৫ হি.] ছিল এক হীরাবাসী খ্রিষ্টান কবি। সে আরবি, ফার্সি ও রোমক ভাষায় পারঙ্গম ছিল। ‘আদীই সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যে তৎকালীন পারস্য সম্রাটের আদেশক্রমে আরবি ভাষায় দীওয়ানে কিসরা লিখে। পরবর্তীতে এই কাজই তাকে পারস্য সম্রাটের দোভাষী হতে সাহায্য করেছিল। তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া। – অনুবাদক।}

৭. ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] বলেন,

”لو أن مؤمنا دخل مسجدا فيه ماية نفس ليس فيهم إلا مؤمن واحد لجاء حتى يجلس إليه . ولو أن منافقا دخل مسجدا فيه ماية ليس فيهم إلا منافق واحد لجاء حتى يجلس إليه.“

‘‘একজন মু’মিন যদি কোনো মাসজিদে প্রবেশ করে, যেখানে ১০০ জন মুনাফিক্ব আছে, কিন্তু মু’মিন আছে স্রেফ ১ জন। তবে অবশ্যই সে মু’মিন (মাসজিদের) ঐ মু’মিন ব্যক্তিটির কাছেই বসবে। পক্ষান্তরে একজন মুনাফিক্ব যদি কোন মাসজিদে প্রবেশ করে, যেখানে ১০০ জন মু’মিন আছে, কিন্তু মুনাফিক্ব আছে স্রেফ ১ জন। তবে অবশ্যই সে মুনাফিক্ব (মাসজিদের) ঐ মুনাফিক্ব ব্যক্তিটির কাছেই বসবে’’।

[আর রদ্দু ‘আলাল মুবাতাদি‘আহ, ইবনুল বান্নার পাণ্ডুলিপি (জামি‘আহ ইসলামিয়্যাহর ১৬২৯ নং পাণ্ডুলিপি); সামান্য শব্দের পরিবর্তনে- আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২৮]

৮. ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] আরো বলেন,

”اعتبروا الأرض باسمائها واعتبروا الصاحب بالصاحب.“

‘‘কোন ভূখণ্ডকে (ভালো বা মন্দ) গণ্য করো তাকে যে নাম দেয়া হয়েছে তার ভিত্তিতে। আর ব্যক্তিকে (ভালো বা মন্দ) গণ্য করো তার সঙ্গীর ভিত্তিতে।’’

[শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৪৪০; কাশফুল খফা, হা/৪১৪; আল ইবানাহ; আছার নং: ৫০৩]

৯. ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৮৭ হি.] বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত রূহের হাদীছটির টিকায় বলেছেন,

”فلا يمكن أن يكون صاحب سنة يمالي صاحب بدعة إلا من النفاق.“

‘‘সুতরাং মুনাফিক্বী ছাড়া কোনো আহলুস সুন্নাহর লোকের দ্বারা বিদ‘আতীর সাথে বন্ধুত্ব সম্ভব নয় (অর্থাৎ, বিদ‘আতীর সাথে বন্ধুত্ব করতে হলে অবশ্যই তাকে মুনাফিক্বী করতে হবে)।’’

[আর রদ্দু ‘আলাল মুবাতাদি‘আহ, ইবনুল বান্নার পাণ্ডুলিপি (জামি‘আহ ইসলামিয়্যাহর ১৬২৯ নং পাণ্ডুলিপি); আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২৯]

{ইমাম ইবনু বাত্তাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩৮৭ হি.] এই আছারটি বর্ণনা করার পর বলেন, ‘‘ফুদ্বাইল (রাহিমাহুল্লাহ) সত্যই বলেছেন। আমরা এটা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছি।’’ (আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২৯ এর টিকা) – অনুবাদক}

১০. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ ইমাম ইয়াহ্ইয়া বিন আবূ কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১২৯ হি.] বলেছেন,

”قال سليمان بن داود عليه السلام : لا تحكموا على أحد بشيء حتى تنظروا من يخادن.“

‘‘সুলাইমান বিন দাউদ (‘আলাইহিমাস সালাম) বলেছেন, তোমরা কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে ততক্ষণ পর্যন্ত মন্তব্য কোরো না, যতক্ষণ না তুমি তার বন্ধুদেরকে প্রত্যক্ষ করছো।’’[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৬০]

১১. ইমাম আবূ হাতিম আর রাযী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৭৭ হি.] বলেছেন,

”قدم موسى بن عقبة الصوري بغداد فذكر لأحمد بن حنبل فقال : انظروا على من نزل وإلى من يأوي.“

‘‘মূসা বিন ‘উক্ববাহ আসা সূরী বাগদাদে আগমন করল। বিষয়টি আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ্) কে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘দেখো, ও কাদের বাড়িতে যাচ্ছে এবং কাদের কাছে আশ্রয় নিচ্ছে।’”[আল ইবানাহ; আছার নং: ৫১৪]

১২. তাবি‘ঈদের মধ্যে অন্যতম মুহাদ্দিছ ও মুফাসসির ইমাম ক্বাতাদাহ বিন দি‘আমাহ আস সাদওয়াসী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১১৮ হি.] বলেন,

”إنا والله ما رأينا الرجل يصاحب من الناس إلا مثله، فصاحبوا الصالحين من عباد الله، لعلكم أن تكونوا معهم أو مثلهم.“

‘‘আল্লাহর ক্বসম, আমরা মানুষকে তাদেরই সাহচর্য গ্রহণ করতে দেখেছি যারা (চলাফেরায় ও সাভাবচরিত্রে) তার অনুরূপ। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সৎ বান্দাদের সাহচর্য গ্রহণ করো। হয়তো তোমরা তাঁদের সাথী হবে অথবা তাঁদের মতই (সৎ বান্দা) হয়ে যাবে।’’[আল ইবানাহ; আছার নং: ৫১১]

১৩. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ আমীরুল মু’মিনীনা ফিল হাদীস আল ইমামুল হাফিয শু‘বাহ বিন হাজ্জাজ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৬০ হি.] বলেছেন,

”وجدت مكتوبا عندي : إنما يصاحب الرجل من يحب.“

‘‘আমি আমার কাছে একটি লিখিত (নীতিকথা) পেয়েছি। আর তা হলো, ‘প্রকৃতপক্ষে মানুষ তার সাথেই বন্ধুত্ব করে, যাকে সে পছন্দ করে বা ভালোবাসে।’।”[আল ইবানাহ; আছার নং: ৫০০]

১৪. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ শাইখুল ইসলাম ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৭ হি.] বলেছেন,

”من ستر عنا بدعته لم تخف عنا ألفته.“

‘‘যেই আমাদের কাছে তার বিদ‘আতকে গোপন করুক না কেনো, তার মেলামেশা ও বন্ধুত্ব আমাদের কাছে গোপন থাকবে না।’’

[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২০, ৫০৮; সামান্য শব্দের পরিবর্তনে- ইমাম আল লালাকাঈর শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আছার নং: ২৫৭]

১৫. শাইখুল ইসলাম ইমাম আ‘মাশ (রাহিমাহুল্লাহ্) [মৃত: ১৪৭ হি.] বলেছেন,

”كانوا لا يسألون عن الرجل بعد ثلاث : مـمــشـــاه، ومدخـــلـــه، وألفه من الناس.“

‘‘সালাফগণ একজন ব্যক্তি সম্পর্কে তিনটি বিষয় জিজ্ঞেস করার পর আর কিছু জিজ্ঞেস করতেন না। আর সেগুলো হলো: (১) সে কাদের সাথে চলাফেরা করে, (২) সে কোথায় যায় তথা তার গমনস্থল কোথায়, (৩) লোকদের মধ্যে কাদের সাথে তার সখ্যতা রয়েছে।’’[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪১৯]

১৬. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ আল ইমামুল হাফিয হিশাম বিন হাসান আল আযদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৮ হি.] বলেছেন,

”دعي أيوب السختياني إلى غسل ميت فخرج مع القوم فلما كشف عن وجه الميت عرفه فقال : أقبلوا قبل صاحبكم، فلست أغسله، رأيته يماشي صاحب بدعة.“

‘‘(তাবি‘ঈ) আইয়ূব আস সাখতিয়ানী (রাহিমাহুল্লাহ্) [মৃত: ১৩১ হি.] কে একটি লাশ গোসল করানোর জন্য ডাকা হল। তিনি লোকদের সাথে বের হলেন। যখন তিনি লাশের চেহারার পর্দা সরালেন, তখন মৃত ব্যক্তিটিকে চিনে ফেললেন। তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের লাশের দিকে অগ্রসর হও। আমি তাকে গোসল করাবো না। কারণ আমি তাকে বিদ‘আতীর সাথে চলাফেরা করতে দেখেছি।’’[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৯৮]

১৭. মুহাম্মাদ বিন ‘উবাইদুল্লাহ আল গুল্লাবী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেছেন,

”يتكاتم أهل الأهواء كل شيء إلا التآلف والصحبة.“

‘‘বিদ‘আতীরা বন্ধুত্ব ও সাহচর্য ছাড়া সবকিছুই গোপন করে।’’[আল ইবানাহ; আছার নং: ৫১০]

১৮. ইমাম মু‘আয বিন মু‘আয (রাহিমাহুল্লাহ্) [মৃত: ১৯৬ হি.] ইয়াহ্ইয়া বিন সা‘ঈদ (রাহিমাহুল্লাহ্) কে বলেন,

”يا أبا سعيد، الرجل وإن كتم رأيه، لم يخف ذلك في ابنه ولا صديقه ولا في جليسه.“

‘‘হে আবূ সা‘ঈদ, যদিও মানুষ তার মতাদর্শকে লোকদের থেকে গোপন করে, তবুও সে মতাদর্শ তার ছেলে, বন্ধু এবং সহচরের কাছে গোপন থাকে না।’’[আল ইবানাহ; আছার নং: ৫০৯]

১৯. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ হাফিয ‘আমর বিন ক্বাইস আল মুলাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

”إذا رأيت الشاب أول ما ينشأ مع أهل السنة والجماعة فارجه، فإذا رأيته مع أهل البدع فايأس منه، فإن الشاب على أول نشوئه.“

‘‘যখন তুমি কোনো যুবককে দেখবে যে, সে (তার যৌবনের) শুরুতে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের লোকদের সাথে বেড়ে উঠছে, তখন তুমি তার (কল্যাণের) আশা করো। আর যখন তুমি (ঐ সময়) তাকে বিদ‘আতীদের সাথে চলাফেরা করতে দেখো, তখন তার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাও। কেননা যুবক তার বেড়ে ওঠার সূচনায় যে আদর্শে গড়ে উঠে, পরবর্তীতে সে ঐ আদর্শ অনুযায়ীই নিজেকে পরিচালিত করে।’’

[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৪, ৫১৮; ইবনু বাত্তাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আশ শারহু ওয়াল ইবানাহ; আছার নং: ৯২; একই বক্তব্য সামনে ইমাম আহমাদ থেকে আসছে]

২০. ‘আমর বিন ক্বাইস মুলাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেছেন,

”إن الشاب لينشأ، فإن آثر أن يجالس أهل العلم كاد أن يسلم، وإن مال إلى غيرهم كاد أن يعطب.“

‘‘যুবক (তার যৌবনেই) বেড়ে উঠে। সেই সময় সে যদি ‘আলিমদের মাজলিস বেছে নেয়, তবে সে বেঁচে যায়। পক্ষান্তরে সে যদি অন্যদের (বিদ‘আতীদের) মাজলিসের দিকে ঝুঁকে, তবে সে ধ্বংসে নিপতিত হয়।’’

[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৫, ৫১৮; ইবনু বাত্তাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আশ শারহু ওয়াল ইবানাহ; আছার নং: ৯৩]

২১. আমীরুল মু’মিনীনা ফিল হাদীছ আল ইমামুল হাফিয ইয়াহইয়া বিন সা‘ঈদ আল ক্বাততান (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৯৮ হি.] বলেছেন,

”لما قدم سفيان الثوري البصرة جعل ينظر إلى أمر الربيع ـ يعني ابن صبيح ـ وقدره على الناس ، سأل : أي شيء مذهبه ؟ قالوا : ما مذهبه إلا السنة قال : من بطانته ؟ قالوا : أهل القدر قــال : هو قدري .“

‘‘সুফইয়ান ছাওরী [মৃত: ১৬১ হি.] যখন বসরায় আসলেন, তখন তিনি রবী‘ বিন সাবীহ সম্পর্কে এবং তার ব্যাপারে লোকদের ধারণার ব্যাপারে খোঁজ নেয়া শুরু করলেন। তিনি লোকদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তার মাযহাব কী ?’ তারা বললো, ‘তার মাযহাব সুন্নাহ্ ছাড়া আর কিছুই নয়।’তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তার সঙ্গীসাথী কারা ?’ তারা বলল, ‘ক্বাদারীরা (তাক্বদীর অস্বীকারকারীরা)।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে সেও ক্বাদারী।’’’[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২১]

২২. ইমাম ইবনু বাত্তাহ আল ‘আবকারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩৮৭ হি.] ইমাম সুফইয়ান ছাওরীর উক্তিটি বর্ণনা করার পর বলেছেন,

”رحمة الله على سفيان الثوري، لقد نطق بالحكمة فصدق وقال بعلم، فوافق الكتاب والسنة وما توجبه الحكمة ويدركه العيان ويعرفه أهل البصيرة، قال الله تعالى : يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِنْ دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ؛ الآية.“

‘‘সুফইয়ান সাওরীর উপর আল্লাহ রহম করুন। তিনি (স্বীয়) প্রজ্ঞার ভিত্তিতে সত্য ও যথার্থই বলেছেন এবং কথাটি তিনি বলেছেন ‘ইলমের ভিত্তিতে। আর তা ক্বুরআন ও সুন্নাহ সম্মত, প্রজ্ঞাপূর্ণ, বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং জ্ঞানবানদের নিকট সুবিদিত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘হে মু’মিনগণ, তোমরা তোমাদের নিজেদের লোক ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কোরো না। কারণ তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে ত্রুটি করবে না, তারা কেবল তোমাদের দুর্ভোগই কামনা করে।’’ (সূরাহ আলে ‘ইমরান: ১১৮)’’[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২১ এর টিকা]

২৩. ইমাম আবূ দাউদ সুলাইমান বিন আশ’আছ আস সিজিস্তানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৭৫ হি.] বলেন,

’’ﻗﻠﺖ ﻷﺑﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ : ﺃﺭﻯ ﺭﺟﻼً ﻣﻦ ﺃﻫـﻞ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﻣﻊ ﺭﺟﻞ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺒﺪﻉ، ﺃﺗﺮﻙ ﻛﻼﻣﻪ؟ ﻗﺎﻝ : ﻻ، ﺃﻭ – ﺑﻤﻌﻨﻲ ﺑﻞ – ﺗُﻌْﻠِﻤﻪ ﺃﻥ ﺍﻟﺬﻱ ﺭﺃﻳﺘﻪ ﻣﻌﻪ ﺻﺎﺣﺐ ﺑﺪﻋﺔ، ﻓﺈﻥ ﺗﺮﻙ ﻛﻼﻣﻪ ﻭ ﺇﻻ ﻓﺄﻟﺤﻘﻪ ﺑﻪ، ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ : ﺍﻟﻤﺮﺀ ﺑﺨﺪﻧﻪ.‘‘

‘‘আমি আবূ ‘আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন হাম্বালকে বললাম, ‘আমি পরিবারের একজন লোককে বিদ’আতীদের সাথে দেখছি। আমি কি তার সাথে কথা বলা বর্জন করব ?’ তিনি বললেন, ‘না। বরং তুমি তাকে জানাবে যে, তুমি তার সাথে যাকে দেখেছ, সে হল বিদ’আতী। সে যদি ঐ বিদ’আতীর সাথে কথা বলা বন্ধ করে, তাহলে ভালো। নতুবা তুমি তাকে ঐ বিদ’আতীর সাথেই যুক্ত করে দিবে (অর্থাৎ, তার মতাবলম্বী মনে করবে)। ইবনু মাস’ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, ব্যক্তিকে তার গোপন সঙ্গীর মাধ্যমেই চেনা যায়’।’’

[ত্ববাক্বাতুল হানাবিলাহ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৬০; আছার নং: ২১৬; ইমাম ইবনু মুফলিহ আল মাক্বদিসী (রাহিমাহুল্লাহ), আল আদাবুশ শার‘ইয়্যাহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৫১; মুআসসাসাতুর রিসালাহ, বাইরূত, ছাপা; সন: ১৪১৯ হি./১৯৯৯ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]

২৪. শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,

”ومن كان محسناً للظن بهم وادعى أنه لم يعرف حالهم، عرف حالهم، فإن لم يباين ويظهر لهم الإنكار، وإلا ألحق بهم وجعل منهم.“

‘‘যে ব্যক্তি তাদের (বিদ’আতীদের) প্রতি সুধারণা রাখে এবং এই দাবি করে যে, সে তাদের অবস্থা জানেনা, তাহলে তাকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানাতে হবে। এরপরেও সে যদি নিজেকে তাদের থেকে পৃথক না করে এবং প্রকাশ্যে তাদের প্রত্যাখ্যান না করে, তাহলে তাকে তাদেরই মতাবলম্বী মনে করতে হবে এবং তাকে তাদেরই একজন হিসেবে গণ্য করা হবে।’’

[ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৩৩; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ ছাপা; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (বাদশাহ ফাহাদ রাহিমাহুল্লাহর রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত)]

২৫. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ ইমাম ইবনু ‘আওন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫১ হি.] বলেছেন,

”من يجالس أهل البدع أشد علينا من أهل البدع.“

‘‘যারা বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা করে, তারা স্বয়ং বিদ‘আতীদের চেয়েও আমাদের নিকট বেশি বিপদজনক।’’[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৮৬]

২৬. ইমাম হাম্মাদ বিন যাইদ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৭৯ হি.] বলেন, একদা (তাবি‘ঈ) ইউনুস বিন ‘উবাইদ [মৃত: ১৩৯ হি.] আমাকে বললেন,

”يا حماد، إني لأرى الشاب على كل حالة منكرة ولا آيس من خيره؛ حتى أراه يصحب صاحب بدعة، فعندها أنه قد عطب.“

‘‘হে হাম্মাদ, আমি যুবককে সকল প্রকার খারাপ অবস্থায় (কর্মে) দেখেও তার (কল্যাণের ব্যাপারে) নিরাশ হইনা। কিন্তু যখনই আমি তাকে বিদ‘আতীর সাথে মিশতে দেখি, তখনই জেনে নিই যে, এবার সে ধ্বংসে নিপতিত হয়েছে।’’

[📚আর রদ্দু ‘আলাল মুবাতাদি‘আহ, ইবনুল বান্নার পাণ্ডুলিপি (জামি‘আহ্ ইসলামিয়্যাহর ১৬২৯ নং পাণ্ডুলিপি); আশ শারহু ওয়াল ইবানাহ; আছার নং: ৯৪]

২৭. ইমাম আহমাদের ছাত্র আবুল ফার্‌জ আশ শীরাযী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৪৮৬ হি.] তাঁর লেখা ‘আত তাবসিরাহ’ গ্রন্থে বলেছেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] বলেন,

”إذا رأيت الشاب أول ما ينشأ مع أهل السنة والجماعة فارجه، فإذا رايته مع أهل البدع فايأس منه، فإن الشاب على أول نشوئه.“

‘‘যখন তুমি কোনো যুবককে দেখবে যে, সে (তার যৌবনের) শুরুতে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের লোকদের সাথে বেড়ে উঠেছে, তখন তুমি তার (কল্যাণের) আশা কোরো। আর যখন তুমি (ঐ সময়) তাকে বিদ‘আতীদের সাথে চলাফেরা করতে দেখো, তখন তার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাও। কেননা যুবক তার বেড়ে ওঠার সূচনায় যে আদর্শে গড়ে উঠে, পরবর্তীতে সে ঐ আদর্শ অনুযায়ীই নিজেকে পরিচালিত করে।’’

[ইবনু মুফলিহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল আদাবুশ শারী‘আহ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৫৭৭; এই আছারটি ‘আমর বিন ক্বইস আল মুলাঈর উক্তিরূপে গত হয়ে গেছে, ১৯ নং উক্তি দ্রষ্টব্য]

২৮. ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন শাওযাব আল খুরাসানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৬ হি.] বলেছেন,

”من نعمة الله على الشاب والأعجمي إذا تمسكا أن يوفقا لصاحب سنة، يحملهما عليها.“

‘‘একজন যুবক এবং একজন অনারব লোকের উপর এটা আল্লাহর নি‘আমত (অনুগ্রহ) যে, তারা যখন ‘ইবাদত শুরু করে তখন আহলুস সুন্নাহর একজন লোককে (সাথী হিসেবে পেয়ে) সাহায্যপ্রাপ্ত হয়; যিনি তাদের দু’জনকে সুন্নাহর পথ অবলম্বন করতে উদ্বুদ্ধ করেন।’’[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৩; আশ শারহু ওয়াল ইবানাহ; আছার নং: ৯১; শারহু উসাূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ্; আছার নং: ৩১]

২৯. ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন শাওযাব আল খুরাসানী (রাহিমাহুল্লাহ্) [মৃত: ১৫৬ হি.] থেকে বর্ণিত, আইয়ূব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

”إن من سعادة الحدث والأعجمي أن يوفقهما الله لعالم من أهل السنة.“

‘‘অল্প বয়স্ক যুবক এবং অনারব লোকের এটা সৌভাগ্য যে, আল্লাহ তাদেরকে আহলুস সুন্নাহর কোনো ‘আলিমের সাহচর্য লাভ করার তাওফীক্ব দান করেন।’’

[আল লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আছার নং: ৩০]

বি.দ্র.: ‘ব্যক্তির মান নির্ণয় হবে তার সাহচর্যের ভিত্তিতে’ শিরোনামটির আওতায় উল্লিখিত ২৯টি উক্তি শাইখ হারিসী (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত ‘‘লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর…’’ গ্রন্থের ৩৬ নং অধ্যায় ‘‘হুকমুস সালাফ ‘আলাল মার’ই বি ক্বরীনিহী ওয়া মামশাহু’’ থেকে নেয়া হয়েছে। উল্লিখিত গ্রন্থের ১৭৪-১৮০ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য; দারুল মিনহাজ, কায়রো ছাপা (২য় সংস্করণ)।

আল্লাহ আমাদের সালাফদের মানহাজ পরিপূর্ণরূপে অনুসরণের তাওফীক্ব দান করুক, এবং যারা সালাফদের মানহাজের অনুসারী না হয়েও তা হওয়ার ভান করে লোকদের ধোঁকা দিতে চায়, তাদের ধোঁকা থেকে আমাদের রক্ষা করুক। আমীন।

উৎস:
sahab.net
salafipublications.com
sunnahpublishing.net

অনুবাদক:
মুহাম্মাদ ‘আবদুল্লাহ মৃধা
রিফাত রাহমান সিয়াম

fb.com/SunniSalafiAthari

দু’আর সময় দুই হাত উঠানো

Image result for হাত তুলে মুনাজাত

দু‘আর সময় দু’খানা হাত উঠানো

وَقَالَ أَبُو مُوسَى الأَشْعَرِيُّ دَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ، وَرَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ.

وَقَالَ ابْنُ عُمَرَ رَفَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ خَالِدٌ

আবূ মূসা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’খানা হাত এতটুকু উঠিয়ে দু‘আ করতেন যে, আমি তাঁর বগলের ফর্সা রং দেখতে পেয়েছি। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, নাবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’খানা হাত উঠিয়ে দু‘আ করেছেনঃ হে আল্লাহ! খালিদ যা করেছে আমি তা থেকে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।-সহীহ বুখারী (তাওহীদ) হাদিস নম্বরঃ 6341

অন্য এক সূত্রে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ হাত এতটুকু তুলে দু‘আ করেছেন যে, আমি তার বগলের শুভ্রতা দেখতে পেয়েছি। [১০৩১] (আধুনিক প্রকাশনী- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচেছদ)

Narrated Anas, “The Prophet (ﷺ) raised his hands (in invocation) till I saw the whiteness of his armpits.”

*দু‘আর সময় দু’খানা হাত উঠানো যে সকল স্থানে হাত তুলে দু‘আ করা যায়

১) বৃষ্টি প্রার্থনার জন্যঃ আনাস ইবনু মালেক (রাযিঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নাবী কারীম (ﷺ)-এর যামানায় এক বছর দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। সে সময় একদিন নাবী (ﷺ) খুৎবা প্রদানকালে জনৈক বেদুঈন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, পরিবার পরিজন অনাহারে মরছে। আপনি আমাদের জন্য দু‘আ করুন। অতঃপর রসূল (ﷺ) স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন পূর্বক দু‘আ করলেন। সে সময় আকাশে কোন মেঘ ছিল না। রাবী বলেন) আল্লাহর কসম করে বলছি, তিনি হাত না নামাতেই পাহাড়ের মত মেঘের খন্ড এসে একত্র হয়ে গেল এবং তাঁর মিম্বর থেকে নামার সাথে সাথেই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগল। এভাবে দিনের পর দিন ক্রমাগত পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত হ’তে থাকল। অতঃপর পরবর্তী জুম‘আর দিনে সে বেদুঈন অথবা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লহর রসূল (ﷺ) অতি বৃষ্টিতে আমাদের বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে, ফসল ডুবে যাচ্ছে। অতএব আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দু‘আ করুন। তখন তিনি দু’হাত তুললেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৃষ্টি দাও, আমাদের এখানে নয়। এ সময় তিনি স্বীয় অঙ্গুলি দ্বারা মেঘের দিকে ইশারা করেছিলেন। ফলে সেখান থেকে মেঘ কেটে যাচ্ছিল। বুখারী, ১ম খন্ড, পৃঃ ১২৭, হা/৯৩৩ জুম‘আর ছালাত’ অধ্যায়)

আনাস ইবনু মালেক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জুম‘আর দিন জনৈক বেদুঈন রসূল (ﷺ)এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! বৃষ্টির অভাবে গৃহপালিত পশুগুলো মারা যাচ্ছে। মানুষ খতম হয়ে যাচ্ছে। তখন রসূল (ﷺ) দু‘আর জন্য দু’ হাত উঠালেন। আর লোকেরাও রসূল (ﷺ)-এর সাথে হাত উঠাল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বেই বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেল। এমনকি পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত বৃষ্টি বর্ষিত হ’তে থাকল। তখন একটি লোক রসূল (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লহর রসূল! রাস্তা-ঘাট অচল হয়ে গেল’। (বুখারী ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪০, হা/১০২৯ ‘ইসতিস্কা’

অধ্যায়) আনাস (রাযিঃ) বলেন, কোন এক জুম‘আয় কোন এক ব্যক্তি দারুল কোযার দিক হ’তে মসজিদে প্রবেশ করল এমতাবস্থায় যে, রসূল (ﷺ) তখন খুৎবা দিচ্ছিলেন। লোকটি রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে গেল। আপনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন, আল্লাহ আমাদেরকে বৃষ্টি দান করবেন। আনাস (রাযিঃ) বলেন, তখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন করতঃ প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান করুন! হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান করুন! বুখারী ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৭; মুসলিম ১ম খন্ড, পৃঃ ২৯৩-২৯৪)

আনাস রাযিঃ) বলেন, আমি রসূল (ﷺ)-কে হস্তদ্বয়ের পিঠ আকাশের দিকে করে পানি চাইতে দেখেছি। মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৯৮ ‘ইসতিস্কা’ অনুচ্ছেদ) আনাস রাযিঃ) বলেন, নাবী কারীম (ﷺ) বৃষ্টির জন্য ছাড়া অর্থাৎ বৃষ্টির জন্য দু‘আ ছাড়া জামাতবদ্ধভাবে অন্য কোথাও হাত তুলতেন না। আর হাত এত পরিমাণ উঠাতেন যে, তার বগলের শুভ্র অংশ দেখা যেত। বুখারী, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪০, হা/১০৩১; মিশকাত হা/১৪৯৯)

২)বৃষ্টি বন্ধের জন্যঃ আনাস রাযিঃ) বলেন, পরবর্তী জুম‘আয় ঐ দরজা দিয়েই এক ব্যক্তি প্রবেশ করল রসূল (ﷺ) এর দাঁড়িয়ে খুৎবা দান রত অবস্থায়। অতঃপর লোকটি রসূল (ﷺ)-এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে গেল। আপনি আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন, আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করে দিবেন। রাবী আনাস রাযিঃ) বলেন, তখন রসূল (ﷺ) স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন পূর্বক বললেন, হে আল্লহ! আমাদের নিকট থেকে বৃষ্টি সরিয়ে দিন, আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন না। হে আল্লাহ! অনাবাদী জমিতে, উঁচু জমিতে উপত্যকায় এবং ঘন বৃক্ষের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন। বুখারী, ১ম খন্ড, ১৩৭ পৃঃ; মুসলিম, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৯৩-২৯৪)

৩) চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময়ঃ আব্দুর রহমান ইবনু সামুরাহ রাযিঃ) বলেন, আমি রসূল (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় এক সময় তীর নিক্ষেপ করছিলাম। হঠাৎ দেখি সূর্যগ্রহণ লেগেছে। আমি তীরগুলো নিক্ষেপ করলাম এবং বললাম, আজ সূর্যগ্রহণে রসূল (ﷺ)-এর অবস্থান লক্ষ্য করব। অতঃপর আমি তাঁর নিকট পৌছলাম। তিনি তখন দু’হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করছিলেন এবং তিনি ‘আল্লাহু আকবার’, ‘আল হামদুলিল্লাহ’, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলছিলেন। শেষ পর্যন্ত সূর্য প্রকাশ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি দু’টি সূরা পড়লেন এবং দু’রাক‘আত সলা-ত আদায় করলেন’। (মুসলিম ১ম খন্ড, পৃঃ ২৯৯ হা/৯১৩, ‘চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের ছালাত’ অধ্যায়)

৪) উম্মাতের জন্য রসূল(ﷺ) এর দু‘আঃ আবদুল্লা-হ ইবনু আমর ইবনু ‘আস (রাযিঃ) বলেন, একদা রসূল সূরা ইবরাহীমের ৩৫ নং আয়াত পাঠ করে দু’হাত উঠিয়ে বলেন, আমার উম্মাত, আমার উম্মাত এবং কাঁদতে থাকেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদের নিকট যাও এবং জিজ্ঞেস কর, কেন তিনি কাঁদেন। অতঃপর জিবরীল তাঁর নিকটে আগমন করে কাঁদার কারণ জানতে চাইলেন। তখন রসূল (ﷺ) তাঁকে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তা অবগত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা জিবরীলকে বললেন, যাও, মুহাম্মাদকে বল যে, আমি তার উপর এবং তার উম্মতের উপর সন্তুষ্ট আছি। আমি তার অকল্যাণ করব না’। (মুসলিম, ১ম খন্ড, পৃঃ ১১৩, হা/ ৩৪৬ ‘ ঈমান’ অধ্যায়)

৫)কবর যিয়ারতের সময়ঃ আয়েশা রাযিঃ) বলেন, একদা রাতে রসূল আমার নিকটে ছিলেন। শোয়ার সময় চাদর রাখলেন এবং জুতা খুলে পায়ের নিচে রেখে শুয়ে পড়লেন। তিনি অল্প সময় এ খেয়ালে থাকলেন যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। অতঃপর ধীরে চাদর ও জুতা নিলেন এবং ধীরে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লেন এবং দরজা বন্ধ করে দিলেন। তখন আমিও কাপড় পরে চাদর মাথায় দিয়ে তাঁর পিছনে চললাম। তিনি ‘‘বাক্বীউল গারক্বাদে’’ জান্নাতুল বাক্বী) পৌঁছলেন এবং দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তিন তিন বার হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করলেন। (মুসলিম ১ম খন্ড, পৃঃ ৩১৩, হা/৯৭৪ ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৫)

‘আয়েশা (রাযিঃ) বলেন, কোন এক রাতে রসূল বের হ’লেন, আমি বারিরা (রাযিঃ) কে পাঠালাম, তাঁকে দেখার জন্য যে, তিনি কোথায় যান। তিনি জান্নাতুল বাক্বীতে গেলেন এবং পার্শ্বে দাঁড়ালেন। অতঃপর হাত তুলে দু‘আ করলেন। তারপর ফিরে আসলেন। বারিরাও ফিরে আসলো এবং আমাকে খবর দিল। আমি সকালে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি গত রাতে কোথায় গিয়েছিলেন? তিনি বললেন, জান্নাতুল বাক্বীতে গিয়েছিলাম কবরবাসীর জন্য দু‘আ করতে। [ইমাম বুখারী, রাফ‘উল ইয়াদায়েন, পৃঃ ১৭, হাদীস ছহীহ; মুসলিম হা/ ৯৭৪ মর্মার্থ)]।

৬) কারো জন্য ক্ষমা চাওয়ার লক্ষ্যে হাত তুলে দু‘আঃ আউতাসের যুদ্ধে আবু আমেরকে তীর লাগলে আবূ আমের স্বীয় ভাতিজা আবূ মূসার মাধ্যমে বলে পাঠান যে, আপনি আমার পক্ষ থেকে রসূল (ﷺ)-কে সালাম পৌঁছে দিবেন এবং ক্ষমা চাইতে বলবেন। আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছালে তিনি পানি নিয়ে ডাকলেন এবং ওযূ করলেন। অতঃপর হাত তুলে প্রার্থনা করলেন ‘হে আল্লাহ! উবাইদ ও আবূ আমেরকে ক্ষমা করে দাও। রাবী বলেন) এ সময়ে আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! ক্বিয়ামতের দিন তুমি তাকে তোমার সৃষ্টি মানুষের অনেকের ঊর্ধ্বে করে দিও’। (বুখারী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৯৪৪, হা/৪৩২৩ ও ৬৩৮৩ ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়)

৭) হজ্জে পাথর নিক্ষেপের সময়ঃ আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিঃ) তিনটি জামারায় সাতটি পাথর খন্ড নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। প্রথম দু’ জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর ক্বিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে দু‘আ করতেন। তবে তৃতীয় জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর দাঁড়াতেন না। শেষে বলতেন, আমি রসূল ﷺ-কে এগুলো এভাবেই পালন করতে দেখেছি’। (বুখারী ১ম খন্ড পৃঃ ২৩৬, হা/১৭৫১ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)

৮) যুদ্ধক্ষেত্রেঃ ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূল (ﷺ) বদরের যুদ্ধে মুশরিকদের দিকে লক্ষ্য করে দেখলেন, তাদের সংখ্যা এক হাজার। আর তাঁর সাথীদের সংখ্যা মাত্র তিনশত ঊনিশ জন। তখন তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দু‘আ করতে লাগলেন। এ সময় তিনি বলছিলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সাহায্য করার ওয়াদা করেছ। হে আল্লাহ! তুমি যদি এই জামা‘আতকে আজ ধ্বংস করে দাও, তাহ’লে এই যমীনে তোমাকে ডাকার মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। এভাবে তিনি উভয় হাত তুলে ক্বিবলামুখী হয়ে প্রার্থনা করতে থাকলেন। এ সময় তাঁর কাঁধ হ’তে চাদরখানা পড়ে গেল। আবূ বকর তখন চাদরখানা কাঁধে তুলে দিয়ে রসূল (ﷺ)-কে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতিপালক প্রার্থনা কবুলে যথেষ্ট। নিশ্চয়ই তিনি আপনার সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করবেন। (মুসলিম, ২য় খন্ড, পৃঃ ৯৩, হা/১৭৬৩, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৮)।

৯) কোন গোত্রের জন্য দু‘আ করাঃ আবূ হুরায়রা বলেন, একদা আবূ তুফাইল রসূল (ﷺ) এর কাছে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল ! দাঊস গোত্রও অবাধ্য ও অবশীভূত হয়ে গেছে, আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে বদ দু‘আ করুন। তখন রসূল (ﷺ) ক্বিবলামুখী হ’লেন এবং দু’হাত তুলে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি দাঊস গোত্রকে হেদায়াত দান কর এবং তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আস’। (বুখারী, মুসলিম, ছহীহ আল আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ ২০৯, হা/৬১১ সনদ ছহীহ)

১০) সাফা-মারওয়া সায়ী করার সময়ঃ আবূ হুরায়রা বলেন, রসূল (ﷺ) মাক্কায় প্রবেশ করলেন এবং পাথরের নিকট এসে পাথর চুম্বন করলেন, বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন এবং ছাফা পাহাড়ে এসে তার উপর উঠলেন। অতঃপর তিনি বায়তুল্লাহর দিকে লক্ষ্য করে দু’হাত উত্তোলনপূর্বক আল্লাহ্কে ইচ্ছামত স্মরণ করতে লাগলেন এবং প্রার্থনা করতে লাগলেন। (ছহীহ আবূ দাঊদ, হা/১৮৭২ সনদ ছহীহ মিশকাত হা/২৫৭৫ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)

১১) কুনূতে নাযেলার সময়ঃ আবূ ওসামা হতে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) কুনূতে নাযেলায় হাত তুলে দু‘আ করেছিলেন। (ইমাম বুখারী, রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন সনদ ছহীহ) হাত তুলে দু‘আ করার অন্যান্য সহীহ হাদীসসমূহঃ

১২) খালিদ বিন ওয়ালিদ -এর অপসন্দ কর্মের কারণে হাত তুলে দু‘আঃ সালেমের পিতা হ’তে বর্ণিত, নাবী কারীম (ﷺ) খালেদ ইবনু ওয়ালীদকে বনী জাযীমার বিরুদ্ধে এক অভিযানে পাঠালেন। খালেদ তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তারা এ দাওয়াত গ্রহণ করে নিল। কিন্তু ‘ইসলাম গ্রহণ করেছি’ না বলে তারা বলতে লাগল, ‘আমরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছি’ ‘আমরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছি। তখন খালেদ তাদেরকে কতল ও বন্দী করতে লাগলেন এবং বন্দীদেরকে আমাদের প্রত্যেকের হাতে সমর্পণ করতে থাকলেন। একদিন খালেদ আমাদের প্রত্যেককে স্ব স্ব বন্দী হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি নিজের বন্দীকে হত্যা করব না এবং আমার সাথীদের কেউই তার বন্দীকে হত্যা করবে না। অবশেষে আমরা নাবী কারীম-এর খেদমতে হাযির হ’লাম তাঁর কাছে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করলাম। তখন নাবী কারীম (ﷺ) স্বীয় হস্ত উত্তোলন পূর্বক প্রার্থনা করলেন, ‘হে আল্লাহ! খালেদ যা করেছে তার দায় থেকে আমি মুক্ত। এ কথা তিনি দু’বার বললেন। (বুখারী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৬২২, হা/৪৩৩৯ ‘মাগাযী’ অধ্যায়)

১৩) সদাক্বাহ আদায়কারীর ভুল মন্তব্য শুনে হাত তুলে দু‘আঃ আবূ হুমায়েদ সায়েদী বলেন, একবার নাবী (ﷺ) ইবনু লুত্ববিইয়াহ নামক ‘আসাদ’ গোত্রের এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়ের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করলেন। তখন সে যাকাত নিয়ে মাদীনায় ফিরে এসে বলল, এ অংশ আপনাদের প্রাপ্য যাকাত, আর এ অংশ আমাকে হাদিয়া স্বরূপ দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে নাবী (ﷺ) ভাষণ দানের জন্য দাঁড়ালেন এবং প্রথমে আল্লাহর গুণগান বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেন, আমি তোমাদের কোন ব্যক্তিকে সে সকল কাজের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করি, যে সকল কাজের দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর সমর্পণ করেছেন। অতঃপর তোমাদের সে ব্যক্তি এসে বলে যে, এটা আপনাদের প্রাপ্য যাকাত, আর এটা আমাকে হাদিয়া স্বরূপ দেয়া হয়েছে। সে কেন তার পিতা-মাতার ঘরে বসে থাকল না? দেখা যেত কে তাকে হাদিয়া দিয়ে যায়। আল্লাহর কসম, যে ব্যক্তি এর কোন কিছু গ্রহণ করবে, যে নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন তা আপন ঘাড়ে বহন করে হাযির হবে। যদি আত্মসাৎকৃত বস্তু উট হয়, উটের ন্যায় ‘চি চি’ করবে, যদি গরু হয় তবে ‘হাম্বা হাম্বা’ করবে। আর যদি ছাগল-ভেড়া হয়, তবে ‘ম্যা ম্যা’ করবে। অতঃপর রসূল (ﷺ) স্বীয় হস্তদ্বয় উঠালেন, তাতে আমরা তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই তোমার নির্দেশ পৌঁছে দিলাম। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি পৌঁছে দিলাম’। (বুখারী পৃঃ ৯৮২,হা/৬৬৩৬ ‘কসম ও মানত’ অধ্যায়)

১৪) মুমিনকে কষ্ট বা গালি দেয়ার প্রতিকারে হাত তুলে দু‘আঃ আয়েশা রসূল (ﷺ)-কে হাত তুলে দু‘আ করতে দেখেন। তিনি দু‘আয় বলছিলেন, নিশ্চয়ই আমি মানুষ। কোন মুমিনকে গালি বা কষ্ট দিয়ে থাকলে তুমি আমাকে শাস্তি প্রদান কর না’। ছহীহ আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৬১০, পৃঃ ২০৯; সিলসিলা ছহীহা, হা/৮২-৮৩ সনদ ছহীহ)

সম্মানিত পাঠকগণ! আলোচ্য অধ্যায়ে হাত তুলে দু‘আ করার প্রমাণে অনেকগুলো হাদীস পেশ করা হল, যদ্দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাত তুলে দু‘আ করার বিধান শরী‘আতে রয়েছে।

উক্ত হাদীসগুলোতে এককভাবে হাত তুলে দু‘আ করার কথা এসেছে। শুধু প্রথম হাদীসটিতে সম্মিলিতভাবে হাত তুলার কথা এসেছে যা ইসতিসক্বা বা পানি চাওয়া সংক্রান্ত। ইসতিসক্বা বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত যাতে সম্মিলিতভাবে দু‘আ করার কথা আছে। তাই এ দু‘আ করতে গিয়ে রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিয়ম-পদ্ধতির এক চুলও ব্যতিক্রম করা যাবে না যে ক্ষেত্রে যেভাবে দু‘আ করার কথা সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে সেভাবেই দু‘আ করতে হবে। কেননা দু‘আও ইবাদতেরই অংশ বিশেষ। অতএব এর ব্যতিক্রম ঘটলে তা বিদ‘আতে পরিণত হবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭ ‘ঈমান’ অধ্যায়)

হাত তুলে দু‘আর প্রমাণে পেশকৃত য‘ঈফ হাদীসসমূহঃ

১) আনাস ইবনু মালিক বলেন, নাবী (ﷺ) বলেছেনঃ যখন কোন বান্দা প্রত্যেক সলাতের পর দু’হাত প্রশস্ত করে, অতঃপর বলে, হে আমার মা‘বূদ এবং ইবরাহীম, ইসহাক্ব ‘আ.-এর মা‘বূদ এবং জিবরীল, মীকাইল ও ইসরাফীল ‘আ.-এর মা‘বূদ, তোমার কাছে আমি চাচ্ছি, তুমি আমার প্রার্থনা কবুল কর। আমি বিপথগামী, তুমি আমাকে আমার দ্বীনের উপর রক্ষা কর। তুমি আমার উপর রহমত বর্ষণ কর। আমি অপরাধী, তুমি আমার দরিদ্রতা দূর কর। আমি দৃঢ়ভাবে তোমাকে গ্রহণ করি। তখন আল্লাহর উপর হক্ব হয়ে যায় তার খালি হাত দু’খানা ফেরত না দেয়া। (ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াম ওয়াল লাইল ৪৯ পৃঃ) হাদীসটি য‘ঈফ। হাদীসটির সনদে ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুর রহমান ও খাদীফ নামে দু’জন দুর্বল রাবী রয়েছে। তা সত্ত্বেও অত্র দুর্বল হাদীসে একক ব্যক্তির হাত তুলে দু‘আ প্রমাণিত হয়, দলবদ্ধভাবে দু‘আ প্রমাণিত হয় না।

২) আবূ হুরাইরাহ হতে বর্ণিত, একদা রসূল (ﷺ) সালাম ফিরার পর ক্বিবলা মুখ হয়ে দু’হাত উঠালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদকে পরিত্রাণ দাও। আইয়াশ, ইবনু আবী রবী‘আহ, সালাম ইবনু হিশাম এবং দুর্বল মুসলমানদের পরিত্রাণ দাও। যারা কোন কৌশল জানে না। যারা কাফিরদের হাত হতে কোন পথ পায় না- ইবনু কাসীর ২য় খন্ড, পৃঃ ৫৫৫; সূরা নিসা ৯৭ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ)। হাদীসটি য‘ঈফ [ইবনু হাজার আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব বৈরুত ছাপা ১৯৯৪), ৭/২৭৪ রাবী নং ৪৯০৫]

আলোচ্য হাদীসে ‘আলী ইবনু যায়দ ইবনু জাদ‘আন য‘ঈফ রাবী। [ইবনু হাজার আসক্বালানী, তাক্বরীব বৈরুত ছাপা ১৯৮৮), পৃঃ ৪০১ রাবী নং ৪৭৩৪। এ ‘আলীকে শাইখ আলবানীও দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন, (দেখুন ‘‘যিলালিল জান্নাহ্’’ ৬৩০), ‘‘আল-ইসরা ওয়াল মি‘রাজ’’ পৃঃ ৫২) ও কিসসাতু মাসীহিদ দাজ্জাল’’ গ্রন্থে পৃঃ ৯৪) অন্য প্রসঙ্গে বর্ণিত একটি হাদীসে] আলোচ্য হাদীসটি মুনকার তথা সহীহ্ বুখারী ও মুসলিম সহ বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত সহীহ্ হাদীস বিরোধী। আবূ হুরাইরাহ রাযিঃ) বর্ণিত বুখারীর হাদীসে সলাতের মধ্যে রুকূ‘র পর দু‘আ করার কথা রয়েছে। অথচ এ দুর্বল হাদীসে সালামের পরের কথা রয়েছে। বুখারীর হাদীসে হাত তোলার কথা নেই, কিন্তু এ হাদীসে হাত তোলার কথা বলা হয়েছে। অথচ ঘটনা একটিই এবং দু‘আ হ’ল কুনূতে নাযিলা। (সহীহুল বুখারী হাঃ ২৯৩২, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ৯৮, মুসলিম ৬৭৫, নাসাঈ ১০৭৪, আবূ দাঊদ ১৪৪২, ইবনু মাজাহ্ ১২৯৪, আহমাদ ৭৪১৫ ও দারেমী ১৫৯৫)

অতএব সলাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আর প্রমাণ পেশ করা শরীয়ত বিকৃত করার শামিল।

৩) ইবনু ‘আববাস বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, সলাত দু’ দু’ রাক‘আত এবং প্রত্যেক দু’রাক‘আতেই তাশাহহুদ, ভয়, বিনয় ও দীনতার ভাব থাকবে। অতঃপর তুমি ক্বিবলামুখী হয়ে তোমার দু’হাতকে তোমার মুখের সামনে উঠাবে এবং বলবে, হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! যে এরূপ করবে না তার সলাত অসম্পূর্ণ- (মিশকাত পৃঃ ৭৭, হাঃ ৮০৫ ‘সলাতের বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ)। হাদীসটি য‘ঈফ।

‘আবদুল্লাহ ইবনু নাফি‘ ইবনিল আময়া য‘ঈফ রাবী। (আলবানী যঈফ আবী দাঊদ হাঃ ১২৯৬, য‘ঈফ ইবনে মাজাহ্ ১৩২৫, সহীহ্ ইবনে খুযায়মাহ্ ১২১২ য‘ঈফ), যঈফুল জামে‘ আস-সগীর হাঃ ৩৫১২; তাহক্বীক্ব মিশকাত হাঃ ৮০৫-এর টীকা নং ৩; তাক্বরীবুত তাহযীব পৃঃ ৩২৬, রাবী নং ৩৬৫৮) হাদীসটি দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও এতে নফল সলাতের কথা বলা হয়েছে এবং এককভাবে দু‘আর কথা এসেছে।

৪) খাল্লাদ ইবনু সায়িব হ’তে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) যখন দু’আ করতেন, তখন তাঁর দু’হাত মুখের সামনে উঠাতেন- মাযমাউয যাওয়ায়েদ ১ম খন্ড, পৃঃ ১৬৯)। (হাদীসটি য‘ঈফ। হাফস্ ইবনু হাশি ইবনু ‘উত্বাহ্ য‘ঈফ রাবী। তাক্বরীবুত তাহযীব পৃঃ ১৭৪, রাবী নং ১৪৩৪)

৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস বলেন, রসূল (ﷺ)বলেছেন, তোমরা হাতের পেট দ্বারা চাও পিঠ দ্বারা চেয়ো না। অতঃপর তোমরা যখন দু‘আ শেষ কর তখন তোমাদের হাত দ্বারা চেহারা মুছে নাও’। [হাদীসটি দুর্বল, দেখুন ‘‘য‘ঈফ আবী দাঊদ’’ ১৪৮৫, উল্লেখ্য দাগ দেয়া অংশ বাদে হাদীসটি দুর্বল। দাগ দেয়া অংশটুকু সহীহ্, দেখুন ‘‘সহীহ্ আবী দাঊদ’’ ১৪৮৬, ‘‘সহীহ্ জামে‘ইস সাগীর’’ ৫৯৩, ৩৬৩৪ ও ‘‘ সিলসিলা আহাদীসিস সহীহাহ’’ ৫৯৫)।] প্রকাশ থাকে যে, হাত তুলে দু‘আ করার পর হাত মুছার প্রমাণে কোন সহীহ হাদীস নেই। বিস্তারিত দেখুন- ইরওয়াউল গালীল ২/১৭৮-১৮২, হাঃ ৪৩৩ ও ৪৩৪-এর আলোচনা তাহক্বীক মিশকাত হাঃ ২২৫৫ এর টীকা নং ৪।

৬) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রসূল (ﷺ) যখন দু‘আ করতেন তখন দু’হাত উঠাতেন এবং দু’হাত দ্বারা চেহারা মুছে নিতেন- (আবূ দাঊদ, হাঃ ১৪৯২, মিশকাত হাঃ ২২৫৫)। হাদীসটি য‘ঈফ। আলোচ্য হাদীসে ‘আবদুল্লাহ ইবনু লাহইয়াহ নামক রাবী য‘ঈফ। (যঈফ আবূ দাঊদ হাঃ ১৪৯২, পৃঃ ১১২; আউনুল মা‘বূদ ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৬০; তাক্বরীব পৃঃ ৩১৯ রাবী নং ৩৫৬৩) ৭) ‘আসওয়াদ ‘আমিরী তার পিতা হ’তে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেন, আমি রসূল (ﷺ)-এর সাথে ফজরের সলাত আদায় করেছি। যখন তিনি সালাম ফিরালেন এবং ঘুরলেন তখন হাত উঠিয়ে দু‘আ করলেন। ইবনু আবী শায়বা ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৩৭) প্রকাশ থাকে যে, رفع يديه ودعا রসূল (ﷺ) তাঁর দু’হাত উঠালেন এবং দু‘আ করলেন’ এ অংশটুকু মূল হাদীসে নেই (ইবনু আবী শায়বা) [ইবনু আবী শায়বা, আল-মুছান্নাফ বৈরুতঃ দারুল ফিকর, ১৯৮৯), ১/৩৩৭, ছালাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৬]

মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভী এবং আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী তাঁরা নিজ নিজ গ্রন্থে হাদীসগুলো আলোচনা করেছেন। কিন্তু সহী জঈফের মানদন্ডে হাদীসগুলো সহীহ নয়। তাই এখনো যারা এ হাদীস বক্তব্য বা লিখনীর মাধ্যমে প্রচার করতে চাইবেন তাদেরকে অবশ্যই হাদীসের মূল কিতাব দেখে পরিত্যাগ করতে হবে অন্যথা তারা হবেন নাবীর উপর মিথ্যারোপকারী এবং মিথ্যা প্রচারকারী, যাদের পরিণতি ভয়াবহ’। (মুসলিম, মিশকাত হাঃ ১৯৮, ১৯৯ ‘ইলম অধ্যায়)

৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের একজন লোককে সলাত শেষের পূর্বে হাত তুলে দু‘আ করতে দেখলেন। যখন তিনি দু‘আ শেষ করলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের তাকে বললেন, রসূল (ﷺ) ছালাত শেষ না করা পর্যন্ত হাত তুলে দু‘আ করতেন না- মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১ম খন্ড, পৃঃ ১৬৯)। হাদীসটি য‘ঈফ, মুনকার), সহীহ হাদীস বিরোধী। সহীহ হাদীসে সলা-তের মধ্যে রুকুর পর কুনুতে নাযেলা পড়ার সময় হাত তুলার কথা আছে- (আহমাদ, তাবরানী, সনদ ছহীহ, ইরওয়াল গালীল, ২/১৮১, হা/৮৩৮-এর আলোচনা দ্রঃ)। তবে সলাতের পর হাত তুলার কোন সহীহ হাদীস নেই।

৯) ‘আবূ নুঈম বলেন, আমি ওমর ও ইবনু যুবায়ের -কে তাদের দু’হাতের তালু মুখের সামনে করে দু‘আ করতে দেখেছি’। অত্র হাদীসে মুহাম্মাদ ইবনু ফোলাইহ এবং তার পিতা তারা দু’জনই য‘ঈফ রাবী। (আল আদাবুল মুফরাদ তাহক্বীক্ব হা/৬০৯ পৃঃ ২০৮ ‘দু‘আয় দু’হাত তুলা অনুচ্ছেদ, পৃঃ ২০৮)

১০) আবূ হুরায়রা বলেন, আমি রসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, যখন আদম সন্তানের কোন দল একত্রিত হয়ে কেউ কেউ দু‘আ করে আর অন্যরা আ-মীন বলে, আল্লাহ তাদের দু‘আ কবুল করেন- (মুস্তাদরাক হাকেম, ৩/৩৯০ পৃঃ হা/৫৪৭৮ ‘ছাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা অধ্যায়; তারগীব ওয়া তারহীব, ১ম খন্ড, পৃঃ ৯০)। হাদীসটি য‘ঈফ। (ইবনু লাহইয়াহ নামে রাবী দুর্বল। তাক্বরীবুত তাহযীব, পৃঃ ৩১৯ রাবী নং ৩৫৬৩)

১১) একদা আলী হাজরামী ছাহাবী লোকদের নিয়ে সলা-ত আদায় করেন। সলা-ত শেষে হাঁটু গেড়ে বসেন, লোকেরাও হাঁটু গেড়ে বসে। তিনি হাত তুলে দু‘আ করেন এবং লোকেরা তার সাথে ছিল- (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ, ৩য় জিলদ, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ৩৩২)। অত্র ঘটনাটি ইতিহাসে বর্ণিত থাকলেও এর কোন সনদ নেই। প্রকাশ থাকে যে, হাদীসের সনদ থাকা সত্ত্বও কোন রাবী য‘ঈফ হ’লে তার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। আর অত্র ঘটনাটির কোন সনদই নেই। তাহ’লে তা দলীলের যোগ্য হয় কী করে? এ বিবরণকে হাদীস বললে ছাহাবীর উপর মিথ্যারোপ করা হবে।

১২) হুসাইন ইবনু ওয়াহওয়াহ হ’তে বর্ণিত, ত্বালহা ইবনু বারায়া মৃত্যুবরণ করলে তাকে রাতে দাফন করা হয়। সকালে রসূল (ﷺ)-কে সংবাদ দেয়া হ’লে রসূল (ﷺ) এসে কবরের পার্শ্বে দাঁড়ান এবং লোকেরাও তাঁর সাথে সারিবদ্ধ হয়। অতঃপর তিনি দু’হাত তুলে বলেন, হে আল্লা-হ! ত্বালহা তোমার উপর সন্তুষ্ট ছিল, তুমি তার উপর রহমত বর্ষণ কর- (তাবারানী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ)। (হাদীসটি য‘ঈফ, মুনকার, সহীহ হাদীস বিরোধী)। সহীহ হাদীসে কবরের পাশে জানাযা পড়ার কথা রয়েছে। (বুখারী, ১ম খন্ড, ‘জানাযা’ অধ্যায়)।

উল্লেখ্য কবর যিয়ারাতে গিয়ে মৃত ব্যক্তিকে সালাম প্রদানের পরে একাকী হাত তুলে দু‘আ করার সমর্থনে সহীহ্ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে কবরকে সামনে না করে কিবলাকে সামনে করে মৃত ব্যক্তিদের জন্য দু‘আ করতে হবে এবং দু‘আ শেষে হাত মুখে মুছবে না। দেখুন ‘‘আহকামুল জানায়েয’’ মাসআলা নং ১২০ ও পৃষ্ঠা নং ২৪৬।

১৩) তোফায়েল -এর গোত্রের জনৈক ব্যক্তি তার সাথে হিজরত করেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সে তার কাঁধের রগ কেটে ফেলে এবং মৃত্যুবরণ করেন। তোফায়েল একদা স্বপ্নে তাকে জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? তিনি বললেন, নাবী ﷺ-এর নিকট হিজরত করার কারণে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তোফায়েল রাযিঃ) বললেন, আপনার দু’হাতের খবর কী? তিনি বললেন, আমাকে বলা হয়েছে, তুমি যে অংশ নিজে নষ্ট করেছ, তা আমি কখনো ঠিক করব না। এ স্বপ্ন তোফায়েল রাযিঃ) রসূল সা) -এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি তার জন্য দু’হাত তুলে ক্ষমা চাইলেন- হাদীসটি য‘ঈফ। (য‘ঈফ আদাবুল মুফরাদ হা/৬১৪, পৃঃ ২১০)

প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত য‘ঈফ হাদীস সমূহের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে বুঝা যায় যে, কোন কোন সময় সলা-তের পর এককভাবে হাত তুলে দু‘আ করা যায়। কিন্তু য‘ঈফ হওয়ার কারণে হাদীসগুলো রসূল (ﷺ)-এর কি-না, তা স্পষ্ট নয়। সে কারণে এর উপর ‘আমল করা থেকে বিরত থাকা যরূরী। বাংলা লিখনী জগতের রত্ন মাওলানা আব্দুর রহীম বলেন, কেবলমাত্র সহীহ হাদীস ব্যতীত অন্য কোন হাদীস গ্রহণ করা যাবে না। এ কথায় হাদীসের সকল ইমাম একমত ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। (হাদীস সংকলনের ইতিহাস, পৃঃ ৪৪৫) সিরিয়ার মুজাদ্দেদ আল্লামা জামালুদ্দীন কাসেমী, ইমাম বুখারী, মুসলিম, ইয়াহইয়া, ইবনু মুঈন, ইবনুল আরাবী, ইবন হযম ও ইবনু তায়মিয়া রহঃ) সহ অনেক হাদীসের পন্ডিত দৃঢ়কণ্ঠে ব্যক্ত করেছেন, ফাযীলাত কিংবা আহকাম কোন ব্যাপারেই য‘ঈফ হাদীস ‘আমলযোগ্য নয়। (ক্বাওয়াইদুত তাওহীদ পৃঃ ৯৫)

যারা সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু‘আ করার পক্ষে মত পোষণ করেন, তারা পবিত্র কুরআন থেকে কিছু আয়াত এবং কিছু য‘ঈফ হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। নিম্নে তাদের দলীল সমূহের পর্যালোচনা তুলে ধরা হ’ল। কুরআন থেকে দলীলঃ

১) তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমার নিকট দু‘আ কর, আমি তোমাদের দু‘আ কবূল করব। যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ‘ইবাদত হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরাহ্ মু’মিন ৬০)

২) হে নাবী! আমার বান্দারা যদি আমার সম্পর্কে নিকট জিজ্ঞেস করে, তাহলে আপনি বলে দিন যে, আমি তাদের নিকটেই আছি। যে আমাকে ডাকে, আমি তার ডাক শ্রবণ করি এবং তার ডাকে সাড়া দেই। কাজেই তাদের আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং আমার উপর ঈমান আনা উচিত। তবেই তারা সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে। (সূরাহ্ বাক্বারাহ ১৮৬)

৩) তোমরা তোমাদের রবকে ভীতি ও বিনয় সহকারে গোপনে ডাক, নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করেন না। সূরাহ্ আ‘রাফ ৫৫)

৪) অতঃপর যখন অবসর পাও পরিশ্রম কর এবং তোমার পালনকর্তার প্রতি মনোনিবেশ কর। (সূরাহ্ ইনশিরাহ ৭-৮) উল্লিখিত আয়াতসমূহ হাত তোলার প্রমাণে পেশ করা হয়। অথচ আয়াতসমূহের কোথাও হাত তোলার প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। বরং সাধারণভাবে আল্লাহর নিকট প্রার্থনার কথা বলা হয়েছে মাত্র। তাছাড়া কোন মুফাসসিরই উক্ত আয়াতসমূহের তাফসীর করতে গিয়ে হাত তুলার কথা বলেননি। এমনকি এ সম্পর্কিত কোন হাদীসও দলীল হিসেবে পেশ করেননি। সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, উপরে বর্ণিত আয়াতসমূহ ফরয সলাতের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু‘আ করা প্রমাণ করে না। কাজেই হাত তুলে দু‘আ করার প্রমাণে অত্র আয়াতগুলো পেশ করা শরী‘আত বিকৃত করার নামান্তর মাত্র।

ফরয সলাতের পরে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু‘আ করা সম্বন্ধে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেমগণের অভিমতঃ

১) আহমাদ ইবনু তায়মিয়াহ রহঃ)-কে ফরয সলাতের পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা জায়েয কি-না জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, ‘ছালাতের পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা বিদ‘আত। রসূলুল্লাহﷺ-এর যুগে এরূপ দু‘আ ছিল না। বরং তাঁর দু‘আ ছিল সলাতের মধ্যে। কারণ সলা-তের মধ্যে) মুসল্লী স্বীয় প্রতিপালকের সাথে নীরবে কথা বলে আর নীরবে কথা বলার সময় দু‘আ করা যথাযথ’। (মাজমূ‘আ ফাতাওয়া ২২/ ৫১৯ পৃঃ)

২) শায়খ আবদুল্লাহ বিন বায রহঃ) বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সলাত ও নফল সলাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করা স্পষ্ট বিদ‘আত। কারণ এরূপ দু‘আ রসূলুল্লাহﷺ-এর যুগে এবং তাঁর ছাহাবীদের যুগে ছিল না। যে ব্যক্তি ফরয সলাতের পর অথবা নফল সলাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করে সে যেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বিরোধিতা করে’। (হাইয়াতু কেবারিল ওলামা ১/২৪৪ পৃঃ)

তিনি আরো বলেন,‘ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করার প্রমাণে রসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে, কথা, কর্ম ও অনুমোদনগত (কাওলী, ফে‘লী ও তাক্বরীরী) কোন হাদীস সম্পর্কে আমরা অবগত নই। আর একমাত্র রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আদর্শের অনুসরণেই রয়েছে সমস্ত কল্যাণ। সলাত আদায়ের পর ইমাম-মুক্তাদীর দু‘আ সম্পর্কে রসূল ﷺ-এর আদর্শ সুস্পষ্ট আছে, যা তিনি সালামের পর পালন করতেন। চার খলীফাসহ ছাহাবীগণ এবং তাবেঈগণ যথাযথভাবে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেছেন। অতঃপর যে ব্যক্তি তাঁর আদর্শের বিরোধিতা করবে, তাঁর আমল পরিত্যাজ্য হবে। রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নির্দেশ ব্যতীত কোন আমল করবে তা পরিত্যাজ্য। কাজেই যে ইমাম হাত তুলে দু‘আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ হাত তুলে আ-মীন আ-মীন বলবেন তাদের নিকটে এ সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য দলীল চাওয়া হবে। অন্যথায় (তারা দলীল দেখাতে ব্যর্থ হ’লে) তা পরিত্যাজ্য’। (হাইয়াতূ কেবারিল ওলামা ১/২৫৭)

৩) বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ আল্লামা শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী রহঃ) বলেন, দু‘আয়ে কুনূতে হাত তুলার পর মুখে হাত মুছা বিদ‘আত। সলাতের পরেও ঠিক নয়। এ সম্পর্কে যত হাদীস রয়েছে, এর সবগুলিই য‘ঈফ। এজন্য ইমাম আযউদ্দীন বলেন, সলাতের পর হাত তুলে দু‘আ করা মূর্খদের কাজ। (ছিফাতু ছালাতিন নাবী,০ পৃঃ ১৪১)

৪) শায়খ উসায়মিন রহঃ) বলেন, সলাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করা বিদ‘আত। যার প্রমাণ রসূল (ﷺ) ও তাঁর সহাবীগণ থেকে নেই। মুসল্লীদের জন্য বিধান হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে যিকর করবে। (ফাতাওয়া উসায়মীন, পৃঃ ১২০) ৫) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহঃ) বলেন, ফরয সলাতের পর হাত তুলে দু‘আ করা ব্যতীত অনেক দু‘আই রয়েছে। (রফুস সামী পৃঃ ৯৫)

৬) আল্লামা আব্দুল হাই লক্ষ্ণৌভী রহঃ) বলেন, বর্তমান সমাজে প্রচলিত প্রথা যে, ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেন এবং মুক্তাদীগণ ‘আ-মীন’ ‘আ-মীন’ বলেন, এ প্রথা রসূল(ﷺ) এর যুগে ছিল না। (ফৎওয়ায়ে আব্দুল হাই, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০০)

৭) আল্লামা ইউসুফ বিন নূরী বলেন, অনেক স্থানেই এ প্রথা চালু হয়ে গেছে যে, ফরয সলাতের সালাম ফিরানোর পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা হয় যা রসূল (ﷺ) হ’তে প্রমাণিত নয়। (মা‘আরেফুস সুনান, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৪০৭)

৮) আল্লামা আবুল কাসেম নানুতুবী রহঃ) বলেন, ফরয সলা-তের সালাম ফিরানোর পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা নিকৃষ্ট বিদ‘আত। (এমাদুদ্দীন পৃঃ ৩৯৭)

৯)আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম ৬৯১-৮৫৬ হিঃ) বলেন, ইমাম পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করা কখনও রসূল (ﷺ)-এর তরীকা নয়। এ সম্পর্কে একটিও সহীহ অথবা হাসান হাদীস নেই। [ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ বৈরুত ছাপা ১৯৯৬), ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪৯ ‘ফরয ছালাতের পর দু‘আ করা সম্পর্কে লেখকের মতামত’ অনুচ্ছেদ]

১০) আল্লামা মাজদুদ্দীন ফিরোযাবাদী রহঃ) বলেন, ফরয সলাতের সালাম ফিরানোর পর ইমামগণ যে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেন, তা কখনও রসূল (ﷺ) করেননি এবং এ সম্পর্কে কোন হাদীসও পাওয়া যায় না। (ছিফরুস সা‘আদাত, পৃঃ ২০)

১১) আল্লামা শাত্বেবী ৭০০ হিঃ) বলেন, শেষ কথা হ’ল এই যে, ফরয সলাতের পর সম্মিলিতভাবে রসূল (ﷺ) নিজেও মুনাজাত করেননি, করার আদেশও দেননি। এমনকি তিনি এটা সমর্থন করেছেন, এ ধরনেরও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। (আল-ই‘তেসাম, ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৫২)

১২)আল্লামা ইবনুল হাজ মাক্কী বলেন, নিঃসন্দেহে এ কথা বলা চলে যে, রসূল (ﷺ) ফরয সলাতের সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেছেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন আ-মীন বলেছেন, এরূপ কখনো দেখা যায় না। চার খলীফা থেকেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই এ ধরনের কাজ, যা রসূল ﷺ করেননি, তাঁর সহাবীগণ করেননি, নিঃসন্দেহে তা না করা উত্তম এবং করা বিদ‘আত। (মাদখাল, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৮৩)

১৩) আল্লামা আশরাফ আলী থানাবী (রহঃ) বলেন, ফরয সলাতের পর ইমাম সাহেব দু‘আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন আ-মীন বলবেন, এ সম্পর্কে ইমাম আরফাহ এবং ইমাম গাবরহিনী বলেন, এ দু‘আকে সলাতের সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব মনে করা না জায়েয। (ইস্তিহবাবুদ দাওয়াহ পৃঃ ৮)

কুরআনে চুমু খাওয়ার বিধান কি?

FB_IMG_1577060834530

কুরআনে চুমু দেওয়ার বিধান

পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হচ্ছে, আল-কুরআন। প্রতিটি মুসলিম হৃদয়স্পন্দন হচ্ছে আল-কুরআন। আমরা প্রতিনিয়তই দেখি, মুসলিমরা কুরআনকে ভক্তি সহকারে চুমু দিয়ে থাকেন। আমরা আজকে এর বিধান সম্পর্কে অবগত হবো, ইন-শা-আল্লাহ।
▪ চার মাযহাবে কুরআনে চুমু দেওয়ার বিধান:
১) হানাফী মাযহাব অনুযায়ী কুরআনে চুমু দেওয়ার কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।
২) মালেকী মাযহাব অনুযায়ী কুরআনে চুমু দেওয়া মাকরুহ।
৩) শাফেয়ী মাযহাব অনুযায়ী কুরআনে চুমু দেওয়া মুস্তাহাব।
৪) হাম্বলী মাযহাব অনুযায়ী কুরআনে চুমু দেওয়া মুবাহ।

ইমাম বিন বায রাহি-এর মত:
ﺍﻟﺘﻘﺒﻴﻞ ﻟﻠﻘﺮﺁﻥ ﻟﻴﺲ ﻟﻪ ﺃﺻﻞ ﻣﻌﺘﻤﺪ ﻭﻟﻴﺲ ﺑﻤﺸﺮﻭﻉ، ﻳﺮﻭﻯ ﺃﻥ ﻋﻜﺮﻣﺔ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺟﻬﻞ ﺃﺣﺪ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻛﺎﻥ ﻳﻘﺒﻠﻪ ﻭﻳﻘﻮﻝ : ﻫﺬﺍ ﻛﺘﺎﺏ ﺭﺑﻲ ‏» ، ﻟﻜﻦ ﻻ ﺃﻋﻠﻢ ﻟﻪ ﺳﻨﺪﺍً ﺻﺤﻴﺤﺎً ﺛﺎﺑﺘﺎً ﻋﻨﻪ ﻭﺃﺭﺿﺎﻩ، ﻭﺑﻜﻞ ﺣﺎﻝ ﻓﺘﻘﺒﻴﻠﻪ ﻻ ﺣﺮﺝ ﻓﻴﻪ، ﻟﻜﻦ ﻟﻴﺲ ﺑﻤﺸﺮﻭﻉ، ﻭﻟﻮ ﻗﺒﻠﻪ ﺇﻧﺴﺎﻥ ﻻ ﺣﺮﺝ ﻋﻠﻴﻪ، ﻟﻜﻦ ﻟﻴﺲ ﻫﺬﺍ ﺑﻤﺸﺮﻭﻉ، ﻭﻟﻢ ﻳﻨﻘﻞ ﻋﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﷺ ﺑﺄﺳﺎﻧﻴﺪ ﺛﺎﺑﺘﺔ، ﻓﺎﻷﻭﻟﻰ ﺗﺮﻙ ﺫﻟﻚ،

কুরআনে চুমু দেওয়ার কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই। তাই তা শরীয়াতসম্মত নয়। সাহাবী ইকরিমা বিন আবূ জাহল রাযি.-এর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, তিনি চুমু দিতেন আর বলতেন, এটা আমার রবের কিতাব। কিন্তু তার কোনো সহীহ সানাদ আছে বলে জানি না। যাহোক, কুরআনে চুমু দেওয়াতে অসুবিধা নেই কিন্তু তা শরীয়াতসম্মত নয়। যদি কেউ চুমু দিয়ে ফেলে, তবে অসুবিধা নেই। তবে তা শরীয়াতসম্মত নয়। কোনো সাহাবী থেকে তা সঠিক সানাদে বর্ণিত হয়নি। তাই তা ত্যাগ করাই উত্তম।

ফাতাওয়ার লিঙ্ক:- https://binbaz.org.sa/fatwas/13483/حكم-تقبيل-المصحف-والانحناء-له

ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালেহ উসাইমিন রাহি-এর মত:

ﺗﻘﺒﻴﻞ ﺍﻟﻤﺼﺤﻒ ﺑﺪﻋﺔ ﻷﻥ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﻘﺒﻞ ﺇﻧﻤﺎ ﺃﺭﺍﺩ ﺍﻟﺘﻘﺮﺏ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﺑﺘﻘﺒﻴﻠﻪ ﻭﻣﻌﻠﻮﻡ ﺃﻧﻪ ﻻ ﻳﺘﻘﺮﺏ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻻ ﺑﻤﺎ ﺷﺮﻋﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻭﻟﻢ ﻳﺸﺮﻉ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺗﻘﺒﻴﻞ ﻣﺎ ﻛﺘﺐ ﻓﻴﻪ ﻛﻼﻣﻪ ﻭﻓﻲ ﻋﻬﺪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻋﻠﻰ ﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺘﺐ ﺍﻟﻤﺼﺤﻒ ﻛﺘﺐ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻟﻜﻨﻪ ﻟﻢ ﻳﺠﻤﻊ ﺇﻧﻤﺎ ﻛﺘﺐ ﻓﻴﻪ ﺁﻳﺎﺕ ﻣﻜﺘﻮﺑﺔ ﻭﻣﻊ ﺫﻟﻚ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻳﻘﺒﻠﻬﺎ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻋﻠﻰ ﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻳﻘﺒﻠﻮﻧﻪ ﻓﻬﻲ ﺑﺪﻋﺔ ﻭﻳﻨﻬﻰ ﻋﻨﻬﺎ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺃﻳﻀﺎ ﺃﺭﻯ ﻳﻘﺒﻠﻪ ﻭﻳﻀﻊ ﺟﺒﻬﺘﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻛﺄﻧﻤﺎ ﻳﺴﺠﺪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻫﺬﺍ ﺃﻳﻀﺎ ﻣﻨﻜﺮ.

কুরআনে চুমু দেওয়া বিদ’আত। কারণ, চুমুদাতা এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইচ্ছা রাখে। আর জানা কথা যে, আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় শুধুমাত্র যার বিধান আল্লাহ দিয়েছেন তার মাধ্যমে। অথচ আল্লাহর কালাম যাতে লিখা হয়েছে তাতে চুমু দেওয়ার বিধান আল্লাহ দেননি। নাবী সা.-এর যুগে কুরআন লেখা হয়েছিল, যদিও গোটা কুরআন জমা করা হয়নি; শুধুমাত্র আয়াত লেখা হয়েছিল।

কিন্তু রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাতে চুমু দেননি; সাহাবীগণও চুমু দেননি। তাই তা বিদ’আত ও নিষিদ্ধ। আমি কতক মানুষকে দেখি তারা চুমু দেয় এবং কপালে লাগায়৷ যেন তার ওপর সাজদাহ দিচ্ছে। এটাও গর্হিত কাজ।

ইমাম উসাইমিন রাহি-এর বক্তব্য লিঙ্ক:-

ইমাম নাসিরুদ্দিন আলবানী রাহি-এর মতঃ
ইমাম নাসিরুদ্দিন আলবানী রাহি এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, এটি বিদ’আত। চুমু দেওয়ার পক্ষে যেসব দলীল ও যুক্তি উপস্থাপন করা হয়, তিনি তার খণ্ডন করেছেন। দেখুন, কায়ফা য়াজিবু আলাইনা আন নুফাসসিরাল কুরআন, ২৮-৩৫ পৃষ্ঠা

সৌদি স্থায়ী ফাতওয়া বোর্ডের মত:

ﻻ ﻧﻌﻠﻢ ﻟﺘﻘﺒﻴﻞ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺃﺻﻼ .
কেউ কুরআনে চুমু দিবে- এব্যাপারে কোনো প্রমাণের কথা জানি না।

আরও বলা হয়েছে:
ﻻ ﻧﻌﻠﻢ ﺩﻟﻴﻼ ﻋﻠﻰ ﻣﺸﺮﻭﻋﻴﺔ ﺗﻘﺒﻴﻞ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭﻫﻮ ﺃﻧﺰﻝ ﻟﺘﻼﻭﺗﻪ ﻭﺗﺪﺑﺮﻩ ﻭﺗﻌﻈﻴﻤﻪ ﻭﺍﻟﻌﻤﻞ ﺑﻪ .

কুরআনুল কারীমে চুমু দেওয়া শরীয়াতস্মত হওয়ার ব্যাপারে কোনো দলীলের কথা জানি না। কুরআন নাযিল করা হয়েছে, তেলাওয়াত, বুঝা, সম্মান দেওয়া ও আমল করার উদ্দেশ্যে।
( ফাতওয়া নাম্বার, ৪১৭২)

যেহেতু কুরআনে চুমু দেওয়ার কোনো দলীল পাওয়া যায় না আর একে বিদ’আতও বলা হয়েছে, সেহেতু তা ত্যাগ করাই উত্তম।

লেখকঃ-উস্তায আব্দুল্লাহ মাহমুদ। হাফিয্বাহুল্লাহ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর মসজিদে দাখিল করাকে কবর পূজারীদের দলীল হিসেবে পেশ করা ও তার উত্তর

55-800x445

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর মসজিদে দাখিল করাকে কবর পূজারীদের দলীল হিসেবে পেশ করা ও তার উত্তর 

‘মসজিদে দাফন করা বৈধ’ কবরপূজারীদের এ সংশয়ের ভিত্তি হচ্ছে, পূর্বসূরিদের পক্ষ থেকে নবীর কবর মসজিদে দাখিল করা, যা প্রমাণ করে কবরকে মসজিদ বানানো বৈধ। অতএব, নবীর মসজিদকে আদর্শ মেনে অন্যান্য মসজিদে দাফন করা বৈধ। এটা হচ্ছে কবরপূজারীদের সংশয় ও সন্দেহ যা দিয়ে তারা দলীল পেশ করে থাকে।

উত্তর: এতে সন্দেহ নেই যে, নবীর মসজিদ ও তার কবর একসাথ করাকে যেভাবে দেখা হোক তার ওপর কিয়াস করে পূর্বের হুকুম আরোপ করা একেবারে ভুল। কারণ, বাস্তবতা অনুসন্ধান করে জানা যায় নবীর মসজিদ ও তার কবর তিন অবস্থার ব্যতিক্রম নয়:

১. নবীর কবর মসজিদে নয়, বরং মসজিদের পাশে ও তার সাথে মিলিত।

২. নবীর কবর মসজিদে নয়, বরং মসজিদ তাকে ঘিরে রেখেছে।

৩. কবর মসজিদের ভেতর।

এ তিন অবস্থা থেকে যে কোনো অবস্থায় কবর পূজারীদের উল্লিখিত হুকুম বাতিল ও কিয়াস অশুদ্ধ।

এ কথার ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:

প্রথম অবস্থা: নবীর কবর মসজিদে নয়, বরং মসজিদের পাশে ও তার সাথে মিলে আছে, তাতে প্রবিষ্ট নয়। এ অবস্থার ভিত্তিতেও কবর পূজারীরা যে বলেছে ‘মসজিদে মৃতদের দাফন করা বৈধ’ তা সঠিক নয়। সান‘আনি বলেন: “গবেষণায় জানা যায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা হয় নি, কারণ তার দাফনের স্থান মসজিদ নির্মাণ করার পূর্ব থেকে নির্ধারিত স্থান ছিল। অতএব, তার কবরকে মসজিদ বা উপাস্য প্রতিমা বানানো হয় নি, বরং আল্লাহ তার দো‘আ কবুল করেছেন, তার প্রমাণ তাকে তার ঘর ও বাড়িতে দাফন করা হয় যার মালিক তিনি নিজে কিংবা আয়েশা, তবে মসজিদ তার অতি সন্নিহিত। অতঃপর যখন মসজিদ সম্প্রসারণ করা হয় তিনি তার ঘর থেকে বের হন নি, আবার তার ঘরকেও মসজিদ বানানো হয় নি, বরং অতিরিক্ত বলা যায় মসজিদ তার ঘরের সাথে পূর্বাপেক্ষা অধিক মিলে গেছে”।
সম্ভবত শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ এ অর্থই বুঝিয়েছেন, যখন তিনি বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর তার মসজিদের পার্শ্ববর্তী”।

মিলে যাওয়ার ব্যাখ্যা: ইতোপূর্বে মসজিদ হুজরার পশ্চিম পাশের দেয়ালের সাথে মিশে ছিল। সম্প্রসারণ করার পর হুজরার তিন দিক থেকে মসজিদ মিলে যায়: পশ্চিম, দক্ষিণ ও উত্তর।
অলীদ ইবন আব্দুল মালিকের সম্প্রসারণ কালে হুজরার দক্ষিণ পাশের অংশ, যা কিবলার দিকে অবস্থিত ছিল, অনুরূপ হুজরার উত্তর দিকের অংশ এবং ফাতিমার হুজরার উত্তর দিকের অংশও ভেঙ্গে মসজিদের সাথে সংযুক্ত করা হয়, ফলে আয়েশার হুজরার তিন পার্শ্ব পশ্চিম, দক্ষিণ ও উত্তর দিক মসজিদের সাথে একাকার হয়ে যায়।

এ হিসেবে বলা যায়, হুজরার দিক থেকে তথা মসজিদের পূর্ব পাশের সীমানা হুজরার পশ্চিম পাশের দেয়াল পর্যন্ত, হুজরার পূর্ব পাশে মসজিদের কোনো অংশ নেই।

এ ব্যাখ্যার ওপর দু’টি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়:

১. আলেমদের একাধিক কিতাব থেকে জানা যায় খলিফা অলীদ আয়েশার হুজরা মসজিদে দাখিল করেছে, যা পূর্বের ব্যাখ্যার বিপরীত। (কারণ, পূর্বের ব্যাখ্যা বলছে হুজরা মসজিদের সাথে মিলিত, তাতে দাখিল নয়)। এ প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর: “হয়তো তাদের উদ্দেশ্য বাহ্যিকভাবে হুজরা মসজিদে প্রবেশ করেছে বাস্তবিক পক্ষে নয়। কারণ, সম্প্রসারণ করার পরও হুজরার আকৃতি মসজিদ থেকে ভিন্ন ছিল। বস্তুত হুজরা মসজিদের সাথে মিলিত, তবে মসজিদ তাকে তিন দিক থেকে বেষ্টন করে নিয়েছে। (এ জন্য লেখকগণ বলেছেন অলীদ মসজিদে হুজরা দাখিল করেছে)।

এ কথার আরো প্রমাণ, আমি গ্রহণযোগ্য কোনো আলেম সম্পর্কে জানি না, যিনি বলেছেন হুজরা মসজিদের বিধান গ্রহণ করেছে, অথবা মসজিদের অংশ হয়ে গেছে, অথবা হুজরায় সালাত আদায় করা, যদি সম্ভব হয়, মসজিদের মত বহুগুণ সাওয়াব রাখে! (এ জাতীয় কথা কেউ বলেন নি, তাই সাব্যস্ত হয় তাদের নিকটও মসজিদ ও হুজরা পৃথক বিধানের পৃথক দু’টি ঘর)।

অতএব, হুজরা পূর্ববৎ স্বীয় হুকুম ও বাস্তবতা নিয়ে আছে। অধিক এতটুকু হয়েছে যে, মসজিদের সাথে তা পূর্বাপেক্ষা অধিক মিলে গেছে, যার কথা আমরা পূর্বে বলেছি।

এ বিষয়টি যে গভীরভাবে ভাববে, সে অবশ্যই দেখবে সত্যিকারভাবে হুজরা মসজিদে প্রবেশ করে নি। সম্প্রসারণকারীগণ চেয়েছেন যেন হুজরা মসজিদে প্রবেশ না করে। কারণ, সম্প্রসারণ দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য ছিল মসজিদের পরিধি বাড়িয়ে মানুষের সুবিধা করা। এ জন্য তারা মুমিনদের মায়েদের সকল ঘর ভেঙ্গে ফেলেছেন, যেগুলো অক্ষত রাখা আহলে-ইলম ও সকল মানুষের নিকট প্রিয় ও চাহিদার বিষয় ছিল। তারা ইচ্ছা করলে পূর্ব দিক থেকে মসজিদ সম্প্রসারণ করতে পারতেন অর্থাৎ হুজরার দিক থেকে। কারণ মসজিদের পূর্ব দেয়ালের পর থেকে সম্প্রসারণ করলে কোনো বাধা ছিল না, কারণ সেখানে জানাযার সালাতের নির্দিষ্ট জায়গা ব্যতীত কিছুই নেই।

এভাবে মুসলিম উম্মাহ বারোটি শতাব্দী অতিক্রম করে, বিভিন্ন সময় মসজিদ সম্প্রসারণ করা হয়, কিন্তু কেউ পূর্ব দিক থেকে মসজিদ সম্প্রসারণ করেন নি, অথচ তার প্রয়োজন ছিল। এর একমাত্র কারণ হুজরার স্বীয় অবস্থা ও স্বকীয়তা বজায় রাখা এবং মসজিদ থেকে তাকে পৃথক রাখা। এ বক্তব্যের সমর্থন মিলে ঐতিহাসিক সামহুদির কথায়, তিনি দারাবযীন নামক মাকসুরার পাথরের সমালোচনায় বলেন, যা হুজরার সাথে মিলিত রওজার একটি অংশ: “সাধারণের নিকট, বরং মসজিদের অবস্থা সম্পর্কে যাদের জ্ঞান নেই তাদের নিকট, প্রসিদ্ধ মাকসুরা মসজিদের অংশ নয়, বরং হুজরার অংশ। এ জন্য তারা মাকসুরার সাথে গায়রে মসজিদ তথা হুজরার আচরণ করে”। তার কথা থেকে স্পষ্ট হলো যে, হুজরা মসজিদের অংশ নয়। (বরং হুজরার পাশে থাকার কারণে রওজার অংশ মাকসুরার সাথে পর্যন্ত অনেকে হুজরার ন্যায় আচরণ করত বলে তিনি আক্ষেপ ও অভিযোগ করেছেন)।

দ্বিতীয় প্রশ্ন: চতুর্দিক থেকে আয়েশার হুজরাকে বেষ্টন করে রাখা দারাবযীন নামক মাকসুরার দেওয়াল ও মসজিদের পূর্ব পাশের দেয়ালের মাঝে দৃশ্যমান প্রশস্ত জায়গা, যেখানে সালাতও পড়া হয়, তা প্রমাণ করে যে হুজরা শুধু মসজিদের সীমানায় নয়, বরং তার ভেতরে।

উত্তর: হুজরার পূর্বপাশের দেয়াল এবং আরো পূর্বে মসজিদের পূর্বপাশের দেয়ালের মাঝে সালাত কিংবা ইবাদতের জন্য কখনো কোনো জায়গা ছিল না, তবে ১২৭৭ হি. সমাপ্ত সুলতান আব্দুল মাজীদের সম্প্রসারণ কালে এ জায়গা সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ হুজরার পূর্ব পাশে যে জায়গাটি দেখা যায় তার বয়স মাত্র দেড় শতাব্দী, বারো শতাব্দী পর্যন্ত তার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। ঐতিহাসিক বারযানজি বর্ণনা করেছেন, যিনি সুলতান আব্দুল মাজিদ উসমানীর সম্প্রসারণের সমকালীন ছিলেন, ৮৮৬হি. মসজিদের পূর্ব পাশের দেয়াল সোয়া দুই হাত হুজরাকে অতিক্রম করে নির্মাণ করা হয়। অতঃপর তিনি বলেন: আমাদের জামানায় তারা এ দেয়ালকে মেঝ (পাথরের ফ্লোর) ছাড়িয়ে পাঁচ হাত পর্যন্ত বৃদ্ধি করবে। পূর্ব দিক থেকে এতটুকু বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়”।
এ তথ্য স্পষ্ট বলছে যে, হুজরার পূর্ব পাশের স্থান সুলতান আব্দুল মাজীদ উসমানীর সম্প্রসারণের সময় সৃষ্টি হয়। আর তার পূর্বে ৮৮৬ হি. সম্প্রসারণের সময় হুজরার পূর্ব পাশে খুঁটির জন্য সামান্য একটু জায়গা বৃদ্ধি করা হয়, যা দেড় হাতের অধিক ছিল না।

ঐতিহাসিক সামহুদি বলেছেন: ৮৮৬ হি. সুলতান কায়তবাঈর সম্প্রসারণ কালে হুজরার পূর্বপাশ থেকে মসজিদ বৃদ্ধি করা হয়। তিনি এ সম্প্রসারণের সমকালীন ছিলেন, তখন শুধু দেড় হাত বৃদ্ধি করা হয়। কারণ মসজিদের উপর কবর বরাবর গম্বুজ তৈরির জন্য পূর্ব দিক থেকে এ সম্প্রসারণ ব্যতীত তাদের কোনো গত্যন্তর ছিল না।

ঐতিহাসিক সামহুদি বলেন: মসজিদের পূর্ব পাশের দেয়াল ও খুঁটিগুলোর মাঝে সংকীর্ণতা সৃষ্টি হয়। কারণ কতক খুঁটি একেবারে মিলে ছিল, তাই কর্তৃপক্ষ মসজিদের পূর্ব পাশের দেয়াল দেড় হাত বাইরের দিকে নিয়ে যান। অর্থাৎ তারা দেয়ালটি ভেঙ্গে বাবে জিবরীলের সাথে সংযুক্ত করেন, তবে বাবে জিবরীলকে তার স্থান থেকে হটান নি”। এ সামান্য বৃদ্ধি, যার উল্লেখ সামহুদি করেছেন, তার উদ্দেশ্য কখনো ইবাদতের স্থান তৈরি করা ছিল না, বরং খুঁটির জন্য তার প্রয়োজন হয়। লক্ষ্য করুন, তারা দেয়াল বাঁকা করে পশ্চিম দিকে বাবে জিবরীলের সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু বাবে জিবরীলকে তার স্থান থেকে পূর্ব দিকে হটান নি। যদি (হুজরা ও মসজিদের পূর্ব পাশের দেয়ালের মাঝে) ইবাদতের স্থান তৈরি করা উদ্দেশ্য হত, যেন সবদিক থেকে হুজরা মসজিদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে পূর্ব দিক থেকে সম্প্রসারণ করার প্রয়োজন বেশি ছিল, অথবা কমপক্ষে বাবে জিবরীলকে (পূর্ব দিকে) পিছিয়ে নিত যেন (পূর্ব পাশের) দেয়াল (উত্তর-দক্ষিণে) বরাবর হয়।

উপরের আলোচনার সারাংশ: হুজরা ও মসজিদের পূর্ব পাশের দেয়ালের মধ্যবর্তী স্থান বর্তমান যেখানে সালাত আদায় করা হয়, সুলতান আব্দুল মাজীদের সম্প্রসারণ করার ফল। তার পূর্বে অনেক শতাব্দী গত হয়েছে, কিন্তু পূর্ব দিক থেকে মুসলিম শাসকরা মসজিদ বৃদ্ধি করেন নি, অথচ তাতে কোনো বাধা ছিল না, বরং তাদের ইচ্ছা ছিল কবরকে ধারণ করে রাখা হুজরা যেন মসজিদ থেকে বিচ্ছিন্ন এক কর্নারে থাকে।

অতএব, বলা যায়, সুলতান আব্দুল মাজিদের বৃদ্ধি মুসলিমদের আমলি (তথা কর্মগত) ঐক্যের বিপরীত (বিদ‘আত), যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে হুজরার পূর্ব দিক থেকে মসজিদ বৃদ্ধি করা ঠিক নয়, সুতরাং শরী‘আতের দৃষ্টিতে হুজরার পূর্ব পাশ ও মসজিদের পূর্ব পাশের মধ্যবর্তী স্থানের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।

এটা ছিল এক বিবেচনায়, দ্বিতীয় বিবেচনা হচ্ছে এ জায়গা বৃদ্ধি করে তাদের হয়তো বিদ‘আত ও কুসংস্কার চালু করা উদ্দেশ্য ছিল, যার স্বপক্ষে আল্লাহ কোনো অহী নাযিল করেন নি। মিসরীয় কর্মকর্তা: মুহাম্মাদ পাশা সাদিক বলেন: “হুজরার নিকট বিদআতি জিয়ারতের যে মেলা বসে, যেমন পূর্ব পাশের এ জায়গায় আসা এবং হুজরার পূর্ব পাশের দেয়াল বরাবর অবস্থান ও দো‘আ করা, যে দেয়ালের নাম দিয়েছে তারা: ‘শুব্বাকু মাহবাতিল অহি (অর্থাৎ অহি অবতরণ করার জানালা)। অতঃপর উত্তর দিকে কয়েক কদম যাওয়া, যার নামকরণ করেছে তারা: মাকামু ফাতিমাতুয যাহরা, (অর্থাৎ ফাতিমার স্থান) অতঃপর কিবলার দিকে মুখ করে –দক্ষিণ দিকে- ফিরে আসা…” (শেষ পর্যন্ত)।

পূর্বের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হল, বারো শতাব্দী থেকে চলে আসা উম্মতের কর্মগত ঐকমত্যের বিপরীত এ জায়গা বৃদ্ধি করা হয়, অধিকন্তু তাতে সালাত আদায়কালে কাতারে বিচ্ছেদ ঘটে। অতএব, শরীয়তের দৃষ্টিতে অত্র অংশকে মসজিদ হিসেবে গণ্য না করা এবং তাকে মসজিদের হুকুম প্রদান না করাই দালিলিক ও যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত। আল্লাহ ভালো জানেন।

মুদ্দাকথা: মসজিদের পাশে হুজরার অবস্থান কোনো সন্দেহ নেই, সেই ওয়ালীদ ইবন আব্দুল মালিকের সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে বারো শতাব্দীরও অধিক যুগ পর্যন্ত হুজরা মসজিদের পাশেই অবস্থিত, (অর্থাৎ মসজিদের অংশ নয়) এতে কোনো সংশয় ও দ্বিমত নেই।

বস্তুত মসজিদ ও হুজরার পৃথক অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি হয় তুর্কী সম্প্রসারণ থেকে এবং যা বর্তমান সময় পর্যন্ত চলমান। কেউ বলতে পারে, এটা (অর্থাৎ তুর্কিদের আয়েশার হুজরার পূর্বপাশকে অতিক্রম করে মসজিদের পূর্বপাশের দেয়াল নির্মাণ করে মসজিদের জায়গা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্য বিদ‘আত ও কুসংস্কার চালু করা) নিছক ধারণা বৈ কিছু নয়, তবে আমরা শুধু ধারণার ওপর ভিত্তি করে এ কথা বলি নি, তার পশ্চাতে একাধিক দলীল রয়েছে, পূর্বের আলোচনায় যা সুস্পষ্ট। আল্লাহ ভালো জানেন।

দ্বিতীয় অবস্থা: (অর্থাৎ মসজিদ সম্প্রসারণ করার পর নবীর কবর ও মসজিদের মাঝে প্রাগুক্ত তিন অবস্থা থেকে যে কোনো এক অবস্থা সৃষ্টি হয়, তার দ্বিতীয় অবস্থা) মসজিদে কবর দাখিল করা হয় নি, বরং মসজিদের দেয়াল হুজরা ঘিরে রেখেছে, আর হুজরাই কবরকে মিলিয়েছে মসজিদের সাথে।

যদিও মেনে নেওয়া হয়, মসজিদের দেয়াল সকল দিক থেকে হুজরা ঘিরে রেখেছে, -সেটাও উসমানী সম্প্রসারণের পর থেকে-, তবুও প্রমাণিত হয় না যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার দুই সাথীর কবর মসজিদের অংশ হয়ে গেছে, কারণ তাদের কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা হয় নি। ((আবার তাদের কবরও মসজিদের সীমানায় স্থানান্তর করা হয় নি)), বরং কবর সম্বলিত আয়েশার হুজরা মসজিদ থেকে পৃথক। তার প্রমাণ হুজরা ও মসজিদের মাঝে দেয়াল ও একাধিক আড়াল থাকা। হ্যাঁ, মসজিদ সম্প্রসারণ করার ফলে হুজরা সকল দিক থেকে পরিবেষ্টিত হয়ে যায়। এ কারণে বাস্তবতা পাল্টে যায় নি, বরং মসজিদের জন্য মসজিদের বিধান আর হুজরার জন্য হুজরার বিধান।

অতএব, বাহ্যত কবর মসজিদের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, সুতরাং তার কবর এখনো তার ঘরেই রয়েছে, যেমন মসজিদ সম্প্রসারণ করার পূর্বে ছিল।

নবীর হুজরা ও তার মসজিদের উদাহরণ: যেমন ‘যায়েদ’ নামধারী জনৈক ব্যক্তির জমির পাশে ‘আমর’ নামধারী জনৈক ব্যক্তির জমি, অতঃপর যায়েদ আমরের জমির চারপাশের জমি খরিদ করে নেয়, ফলে চতুর্দিক থেকে জায়েদের জমি আমরের জমিকে ঘিরে নেয়, আমরের জমি তার মাঝে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হবে আমরের জমি জায়েদের জমির এক অংশ, বস্তুত আমরের জমি সম্পূর্ণ পৃথক, তবে তার প্রতিবেশীর জমি দ্বারা বেষ্টন করা।
হুবহু এরূপ ঘটনা ঘটেছে নবীর মসজিদ ও তার হুজরার সাথে।

শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদে তার ও তার দুই সাথীর কবর থাকায় কতক জাহিল এটাকে দলীল হিসেবে পেশ করে, এতে তাদের কোনো দলীল নেই। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাফন করা হয়েছে তার ঘরে, মসজিদে নয়। অতঃপর তার দুই সাথী আবু বকর ও উমারকে তার পাশে দাফন করা হয়; কিন্তু যখন ওয়ালীদ ইবন আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ান মসজিদ সম্প্রসারণ করেন, ঘরটি মসজিদে দাখিল করে দেন, সম্প্রসারণ করার স্বার্থে, এতে তিনি ভুল করেছেন। কবর মসজিদে দাখিল না করা ওয়াজিব ছিল, যেন জাহিল ও তাদের ন্যায় লোকেরা দলীল পেশ করার সুযোগ না পায়।

আহলে-ইলমগণ তার কর্মকে প্রতিবাদ করেছেন। অতএব, এ ক্ষেত্রে তার অনুসরণ করা বৈধ নয়। আবার কারো মনে করার সুযোগ নেই যে, এটা কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা কিংবা কবরকে মসজিদ বানানোর শামিল। কারণ আয়েশার হুজরা সম্পূর্ণ পৃথক ঘর, যা মসজিদে দাখিল করা হয় সম্প্রসারণ করার স্বার্থে। অনেকটা মসজিদের সামনে মসজিদ থেকে পৃথক কবরস্থানের মত। অতএব, তার দ্বারা মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরও দেয়াল ও আড়ালের কারণে মসজিদ থেকে পৃথক”।

তৃতীয় অবস্থা: অর্থাৎ মসজিদ সম্প্রসারণ করার পর নবীর কবর ও মসজিদের মাঝে প্রাগুক্ত তিন অবস্থা থেকে যে কোনো এক অবস্থা সৃষ্টি হয়, তার তৃতীয় অবস্থা) মসজিদে কবর দাখিল করা হয়েছে। তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নেওয়া হয় যে, সম্প্রসারণ করার পর বাস্তবিকপক্ষে মসজিদের ভেতর কবর ঢুকে গেছে, কবর পূজারীরা যা প্রমাণ করতে চায়, তবুও এটা কবরকে মসজিদ বানানোর শামিল নয়, কারণ কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা হয় নি, আবার দাফনও মসজিদে সংঘটিত হয় নি।

অতএব, নবীর কবর ও তার মসজিদের এটা বিশেষ অবস্থা, তার ওপর কিয়াস করা যাবে না এবং তার সাথে দ্বিতীয় বস্তুকে জোড়া যাবে না।

এ কথার ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:

প্রথমত: নবীর মসজিদ কবরের উপর নির্মাণ করা হয় নি, যেমন পূর্বে বলেছি, আবার কবরও মসজিদে দাখিল করা হয় নি। বস্তুত এ দু’টি অবস্থা (কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা কিংবা মসজিদে কবর দাখিল করা) এর কারণে শরয়ী বিধান প্রভাবিত হয়, যা নবীর মসজিদ ও তার কবরে নেই, অতএব, অপর মসজিদ ও কবর তার ওপর কিয়াস করা দুরস্ত নয়, কারণ নবীর মসজিদ ও কবর ব্যতীত যে মসজিদে কবর রয়েছে, সেখানে অবশ্যই আছে দু’টি কারণ থেকে একটি কারণ:

হয়তো কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা হয়, অর্থাৎ কবরকে কেন্দ্র করে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। অথবা মসজিদে দাফন করা হয়, অর্থাৎ এ স্থানে দাফন করার কারণ মসজিদ। নবীর মসজিদে এটিও ঘটেনি সেটিও নয়, আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা। কবর খনন করার আগেই মসজিদ প্রস্তুত ছিল।

বস্তুত মসজিদের বাইরে ছিল কবর, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার মারা যাওয়ার স্থান হুজরায় দাফন করা হয়েছে, যা তার মৃত্যুর পূর্বে নির্মিত ছিল অর্থাৎ আয়েশার হুজরা। অতঃপর আল্লাহর ফয়সালা মোতাবেক মসজিদ সম্প্রসারণ ও হুজরাকে তার অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার ওপর কেউ যদি বলে: কোনো মৃত ব্যক্তিকে যদি ঘরে দাফন করা হয় যার পাশে মসজিদ রয়েছে, পরবর্তীতে মসজিদ সম্প্রসারণ করার সময় উক্ত ঘর মসজিদের অন্তর্ভুক্ত করা বৈধ, যেমন ঘটেছে নবীর মসজিদে। অতএব, উক্ত ঘর ও আয়েশার হুজরার হুকুম সমান।

উত্তর: ঘরে দাফন করা নিষেধ, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাফন ছিল অহি নির্ভর, যা একমাত্র তার সাথেই খাস। তিনি ব্যতীত অন্যান্য মৃত ব্যক্তিকে মুসলিমদের কবরে দাফন করা হবে, যা নবুওয়তি যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত মুসলিমদের মাঝে ব্যবহারিক সুন্নত হিসেবে প্রচলিত।

দ্বিতীয়ত: নবীর মসজিদের ঘটনা কবরকে মসজিদ বানানো নয়, তাই তার সাথে অন্যান্য মসজিদ তুলনা করা দুরস্ত নয়। কারণ, ইচ্ছাকৃতভাবে মসজিদে নবীর কবর দাখিল করা হয় নি, বরং অনুগামী হিসেবে তাতে দাখিল হয়েছে। আর শরী‘আতের বিধান আরোপ হয় ইচ্ছা ও নিয়তের ওপর।

এ কথার ব্যাখ্যা: নবীর মসজিদ ব্যতীত যে মসজিদে কবর রয়েছে সেখানে নিয়ত অবশ্যই আছে। হয়তো কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করার নিয়ত, অথবা বরকত হাসিল করার জন্য মৃত ব্যক্তিকে মসজিদে দাফন করার নিয়ত, অথবা তার নিকট বসে আল্লাহর ইবাদত করার নিয়ত, অথবা ইবাদত হিসেবে তার সান্নিধ্য অর্জন করার নিয়ত, যা নবীর মসজিদের সম্পূর্ণ বিপরীত। এ জাতীয় কোনো উদ্দেশ্য তাতে নেই। কারণ এখানে ইচ্ছা ছিল হুজরা নবীর মসজিদে দাখিল করা, তার অনুগামী হয়ে কবর প্রবেশে করেছে। এটা প্রথম কথা।

দ্বিতীয়ত: মসজিদ সম্প্রসারণ করার উদ্দেশ্যে হুজরা দাখিল করা হয়, কবর দাখিল করার উদ্দেশ্যে নয়।

তৃতীয়ত: এককভাবে আয়েশার হুজরা মসজিদে দাখিল করা হয় নি; বরং মুমিনদের অন্যান্য মায়েদের ঘরের অনুগামী হিসেবে তার ঘরও মসজিদে দাখিল করা হয়, এককভাবে তার ঘর দাখিল করা উদ্দেশ্য ছিল না।

অতএব, হুজরা মসজিদে দাখিল করার ইচ্ছা নেই, তার বৈশিষ্ট্যের কারণেও তাকে দাখিল করা হয় নি, বরং মসজিদের স্বার্থে দাখিল করা হয়। আর কবর দাখিল করার তো ইচ্ছাই ছিল না, অনুগামী হিসেবে তাতে দাখিল হয়েছে। বস্তুত কতক কাজ অনুগামী হিসেবে করা হয়, যা এককভাবে করা হয় না।

নবীর কবর ও মসজিদের প্রাগুক্ত তিন অবস্থা প্রমাণ করে: মসজিদে কবর দাখিল করার পশ্চাতে কোনো দাবি ও ইচ্ছা সংশ্লিষ্ট নেই, যা কবর পূজারীদের অবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত, যে মসজিদে কবর আছে তাতে নবীর মসজিদের কারণ কোথায় পাবেন?!

অতএব, কবর পূজারীদের দলীল বাতিল।

তৃতীয়ত: নবীর মসজিদের সাথে শরয়ী বিধান সংশ্লিষ্ট রয়েছে, যা এখনো বিদ্যমান বাতিল করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ নবীর মসজিদ বরকত ও ফজিলতপূর্ণ, তাতে সালাতের সাওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়। তার জন্য দূর থেকে সফর করে আসা হয়, তাতে জান্নাতের একটি বাগান রয়েছে, আরো অনেক ফজিলত।

অতএব, নবীর মসজিদ অন্যান্য মসজিদের মত নয়, সুতরাং কবর বিশিষ্ট অন্যান্য মসজিদে সালাত বৈধ নয় বিশুদ্ধ মতে। যদি পরে মসজিদ নির্মাণ করা হয় মসজিদ ধ্বংস করা জরুরি, অন্যথায় কবর খুড়ে মৃতকে বের করা জরুরি যদি কবর পরে হয়। নবীর মসজিদে এরূপ করা সম্ভব নয়। কারণ, নবীর কবর খনন করা বৈধ নয়, যেমন তার মসজিদের স্থানও পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, যেহেতু তা অহী নির্ভর।

নবীর মসজিদে যা ঘটেছে তা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, আবার মসজিদকেও সালাতহীন রাখা সম্ভব নয়। কারণ, তার ফযীলত প্রমাণিত।

অতএব, প্রমাণিত হয়, এ মাসআলায় নবীর মসজিদের সাথে কোনো মসজিদকে তুলনা করা যাবে না।

চতুর্থত: নবীর মসজিদ বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন তার সাথে কোনো মসজিদকে সম্পৃক্ত করা দুরস্ত নয়, যেসব দলীল প্রমাণ করে তন্মধ্যে একটি হচ্ছে: উম্মতে মুসলিমার ঐক্যমত্যে নবীর মসজিদে সালাত আদায় করা বৈধ, এ ছাড়া কবর বিশিষ্ট অন্যান্য মসজিদে সালাত আদায় করা হারাম।

অতএব, উম্মতের ইজমা দ্বারা নবীর মসজিদ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যর অধিকারী, আর ইজমা গ্রহণযোগ্য দলীল।

মুদ্দাকথা: নবীর মসজিদ কবরের উপর নির্মাণ করা হয় নি, অনুরূপ নবীর কবরও পবিত্র তাকে মসজিদ বানানো হয় নি।

অতএব, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কবর পূজারীদের দলীল পেশ করা বাতুলতা বৈ কিছু নয়।
এটা বুঝার জন্য পূর্বের বিষয়ের সাথে নিম্নের দু’টি বিষয় চিন্তা করাই যথেষ্ট:
প্রথম বিষয়: যদি মসজিদে দাফন করা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট পছন্দনীয় হত, অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরকে মসজিদের সাথে সংযুক্ত করার নির্দেশ দিতেন কিংবা তার মৃত্যুর পর হুজরাকে তার সাথে সংযুক্ত করার নির্দেশ দিতেন, যা তার কবরকে বেষ্টন করে আছে।

অথবা তিনি নির্দেশ দিতেন, কারণ তিনি মৃত্যু টের পেয়ে ছিলেন, যেন তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় মসজিদে রাখা হয়, যখন মারা যাবেন তাতে দাফন করা হবে, কিন্তু তিনি এরূপ করেন নি; বরং তার থেকে এর বিপরীত প্রমাণিত অর্থাৎ মুমূর্ষ অবস্থায় তিনি সতর্ক করেছেন যেন কবরকে মসজিদ বানানো না হয়। এ দলীলের চেয়ে বড় দলীল কী?!

অতঃপর আরো বলা যায়: যদি মসজিদে দাফন করা আল্লাহর পছন্দনীয় ও সন্তুষ্টির বস্তু হত, তাহলে অবশ্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিপরীত করতেন না, যখন তিনি দাফন করেছেন স্বীয় ছেলে ইবরাহীমকে, অথবা নিজ স্ত্রী খাদিজাকে অথবা স্বীয় চাচা হামযাকে অথবা যখন দাফন করেছেন অন্যান্য সাহাবীগণকে।
কোথায় সেসব মসজিদ যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃতদের দাফন করেছেন, মক্কা, মদিনা বা আরবের মাটিতে?!

অতএব, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চূড়ান্ত সুন্নত: তিনি কবরস্থানে মৃতদের দাফন করতেন, মসজিদে নয়। এ সম্পর্কে অনেক হাদীস রয়েছে, যার বিপরীত কোনো দলীল নেই।

কবর পূজারীদের কি হল, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ পরিহার করে, যা দলীল ও অনুকরণীয় আদর্শ, তাদের কর্মকে আঁকড়ে ধরেছে যাদের কর্ম দলীল নয়, বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর প্রায় আশি বছর পর্যন্ত যার অস্তিত্ব ছিল না?!

দ্বিতীয় বিষয়: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরকে যদি মসজিদে দাখিল করা আল্লাহ ও তার রাসূলের নিকট পছন্দনীয় হত তাহলে সাহাবায়ে কেরাম এতে কখনো বিলম্ব করতেন না। কারণ, তারাই কল্যাণ সম্পর্কে সবচেয়ে জ্ঞানী ও সাওয়াব অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রগামী ছিলেন।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খিলাফত শেষ হল, কিন্তু মসজিদে কবর দাখিল করা হল না।

যখন উমার ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমা মসজিদ সম্প্রসারণ করেন হুজরায় কোনো পরিবর্তন করেন নি, যদিও সম্প্রসারণ করার জন্য সেটা জরুরি ছিল। অধিকন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের ঘর সম্পর্কে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন: “তাতে হাত দেওয়া যাবে না”।

আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর যুগেও হুজরা সেভাবে ছিল, যেভাবে ছিল তার পূর্বসূরীদের যুগে।
তারা সবাই হিদায়াতপ্রাপ্ত ও সঠিক পথ লাভকারী খলিফা ছিলেন, যাদের অনুসরণ করার নির্দেশ উম্মতকে প্রদান করা হয়েছে।

এভাবেই ছিল নেককার ফকিহ খলিফা মু‘আওয়িয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর যুগে।
এটা ছিল সাহাবীগণের থেকে যারা খলিফা ছিলেন তাদের যুগ, তারাই ফকীহ, সুদৃঢ় ও আমানতদার উম্মত। তারা গত হয়েছেন কিন্তু নবীর কবর আয়েশার ঘরেই সংরক্ষিত ছিল, কেউ তাতে পরিবর্তন করে নি। যদি কবরকে কিংবা হুজরাকে মসজিদের সাথে যুক্ত করা কল্যাণকর হত অবশ্যই তারা সবার আগে সেটা আঞ্জাম দিত।

ওয়ালীদের সম্প্রসারণ করার সময় মদিনায় কোনো সাহাবী জীবিত ছিলেন না, এতে উপস্থিত থাকা ও সমর্থন করার অপরাধ থেকে তারা মুক্ত। এটাই সঠিক ইতিহাস।
অর্থাৎ সম্প্রসারণ আরম্ভ হয় ৯১ হিজরি। তিন বছর সম্প্রসারণ কার্যক্রম চলে, তখন মদিনায় কোনো সাহাবী ছিলেন না, যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত স্বচক্ষে দেখেছেন ও ভালো করে বুঝেছেন।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন: সাহাবীগণের যুগে আয়েশার হুজরা মসজিদের সাথে মিলিত বাইরে ছিল, ওয়ালীদ ইবন আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ানের যুগে হুজরা মসজিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যখন আব্দুল্লাহ নামধারী কোনো সাহাবী জীবিত ছিল না। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন উমার, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়ের ও আব্দুল্লাহ ইবন আমর; বরং মদিনায় থাকা সকল সাহাবীর মৃত্যুর পর তার সম্প্রসারণ হয়, মদিনায় সর্বশেষ সাহাবী জাবের ইবন আব্দুল্লাহ হিজরি ৮০ দশকে মারা যান, মসজিদ সম্প্রসারণ করা হয় হিজরি ৯০ দশকে”।

তিনি আরো বলেন: “মদিনায় জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ব্যতীত কেউ জীবিত ছিল না, তিনি ৭৮ হিজরি সর্বশেষ মদিনায় মারা যান, অর্থাৎ মসজিদে আয়েশার হুজরা দাখিল করার দশ বছর পূর্বে”।

তিনি আরো বলেন: সঠিক পথের উপর পরিচালিত খলিফা ও সাহাবীগণের যুগে নবীর হুজরা মসজিদের বাইরে ছিল। (মসজিদে অবস্থান করা) সাহাবী ও (ঘরে অবস্থান করা) নবীর মাঝে দেয়াল ব্যতীত কোনো আড়াল ছিল না, অতঃপর খলিফা ওয়ালীদ ইবন আব্দুল মালিকের যুগে মদিনায় থাকা সাহাবীদের মৃত্যুর পর তাঁর হুজরা মসজিদে দাখিল করা হয়। ৭৮ হিজরি খলিফা আব্দুল মালিকের যুগে মদিনায় সর্বশেষ সাহাবী জাবের ইবন আব্দুল্লাহ মারা যান, পক্ষান্তরে ৮৬ হিজরি তার ছেলে ওয়ালীদ খলিফা হন এবং মারা যান ৯৬ হিজরি। অতএব, এর মধ্যেই মসজিদ বৃদ্ধি ও তাতে হুজরা দাখিল করার ঘটনা ঘটে”।

সাহাবীগণ এ সম্প্রসারণ দেখেন নি তার আরেকটি প্রমাণ: এ সম্পর্কে তাদের থেকে কোনো বাণী বর্ণিত নেই, না স্বীকৃতি না অস্বীকৃতি। কতক তাবে‘ঈ এ সম্পর্কে কথা বলেছেন, যদি সাহাবীগণ উপস্থিত থাকতেন অবশ্যই কথা বলতেন এবং তাদের কথাই অপেক্ষাকৃত অধিক গুরুত্বসহ সংরক্ষণ করা হত।

“মুদ্দাকথা আমাদের নিকট এমন কোনো দলীল নেই, যার দ্বারা প্রমাণ হয় এ পরিবর্তন করার সময় কোনো সাহাবী বেঁচে ছিলেন। এ কথার বিপরীত যে বলবে তার দলীল পেশ করা জরুরি”।

 

রচনায় ও সম্পাদনায়ঃ সাজ্জাদ সালাদীন

বিদ‘আতীদের খণ্ডন করা আবশ্যক, আর তাদের ব্যাপারে চুপ থাকা নিষিদ্ধ

বিদ‘আতীদের খণ্ডন করা আবশ্যক, আর তাদের ব্যাপারে চুপ থাকা নিষিদ্ধ

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

এটি সুবিদিত যে, বিদ‘আত একটি গর্হিত অপরাধ এবং অন্যায় কাজ। বিদ‘আতের ভয়াবহতা উপলব্ধি করার জন্য এই দুটি হাদীসই যথেষ্ট, ইনশাআল্লাহ:
ক. নাবী ﷺ বলেছেন, “(দ্বীনের মধ্যে) যাবতীয় নবআবিষ্কৃত বিষয় থেকে সাবধান! কারণ প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয় হলো বিদ‘আত, আর প্রত্যেক বিদ‘আত হলো ভ্রষ্টতা।” [আবূ দাউদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ]
খ. নাবী ﷺ বলেছেন, “আমি তোমাদের আগে হাউযের নিকট পৌঁছব। যে আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে, সে হাউযের পানি পান করবে। আর যে পান করবে সে কখনো পিপাসার্ত হবে না। নিঃসন্দেহে কিছু সম্প্রদায় আমার সামনে (হাউযে) উপস্থিত হবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারব আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। এরপর আমার এবং তাদের মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে। আমি তখন বলব, এরা তো আমারই উম্মত। তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না আপনার পরে এরা (দ্বীনের মধ্যে) কী সব নতুন নতুন কথা ও কাজ (বিদ‘আত) সৃষ্টি করেছে। রাসূল ﷺ বলেছেন, তখন আমি বলব, আমার পরে যারা দ্বীনের ভিতর পরিবর্তন এনেছে, তারা দূর হও, দূর হও!” [সাহীহ বুখারী, হা/৬৫৮৩-৬৫৮৪]

আর মহান আল্লাহ বলেছেন, لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرائيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُدَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ كَانُوا لا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ، كَانُواْ لاَ يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُواْ يَفْعَلُونَ “বানী ইসরাঈলের মধ্যে যারা অবিশ্বাস করেছিল, তারা দাঊদ ও মারইয়াম তনয় ‘ঈসা কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল। কেননা তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী। তারা যেসব গর্হিত কাজ করত তা থেকে তারা একে অন্যকে নিষেধ করত না। নিশ্চয় তারা যা করত তা কতইনা নিকৃষ্ট!” [সূরাহ মাইদাহ: ৭৮-৭৯]
ত্বারিক্ব ইবনু শিহাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন,

أَوَّلُ مَنْ بَدَأَ بِالْخُطْبَةِ يَوْمَ الْعِيدِ قَبْلَ الصَّلاَةِ مَرْوَانُ فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَقَالَ الصَّلاَةُ قَبْلَ الْخُطْبَةِ.‏ فَقَالَ قَدْ تُرِكَ مَا هُنَالِكَ‏.‏ فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ أَمَّا هَذَا فَقَدْ قَضَى مَا عَلَيْهِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ.

মারওয়ান সর্বপ্রথম ‘ঈদের দিন সালাতের পূর্বে খুত্ববাহ দেয়ার (বিদ‘আতী) প্রথা প্রচলন করেন। এ সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, খুত্ববাহ’র আগে সালাত (সম্পন্ন করুন)। মারওয়ান বললেন, এখন থেকে সে নিয়ম পরিত্যাগ করা হল। তখন সাহাবী আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বললেন, ওই ব্যক্তি তার কর্তব্য পালন করেছে। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ গৰ্হিত কাজ হতে দেখলে সে যেন স্বহস্তে (শক্তি প্রয়োগে) তা পরিবর্তন করে, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে, তবে জবান দ্বারা তা পরিবর্তন করবে। আর যদি সে সাধ্যও না থাকে, তখন অন্তর দ্বারা করবে, তবে এটা ঈমানের সবচেয়ে দুর্বলতম অবস্থা।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৪৯; ‘ঈমান’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ২০]

‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا مِنْ نَبِيٍّ بَعَثَهُ اللَّهُ فِي أُمَّةٍ قَبْلِي إِلاَّ كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُونَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوفٌ يَقُولُونَ مَا لاَ يَفْعَلُونَ وَيَفْعَلُونَ مَا لاَ يُؤْمَرُونَ فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنَ الإِيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ‏.

“আমার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা যে নাবীকেই কোনো উম্মতের মধ্যে পাঠিয়েছেন, তাদের মধ্যে তাঁর জন্য একদল অনুসারী ও সঙ্গী ছিল। তারা তাঁর আদর্শকে সমুন্নত রাখত এবং তাঁর নির্দেশের অনুসরণ করত। তারপর তাদের অবর্তমানে কতগুলো মন্দ লোক স্থলাভিষিক্ত হয়। তারা মুখে যা বলে নিজেরা তা করে না। আর (দ্বীনের ব্যাপারে) যা করে, তার জন্য তাদেরকে নির্দেশ করা হয়নি (অর্থাৎ, বিদ‘আত)। অতএব যে ব্যক্তি তাদেরকে হাত (শক্তি) দ্বারা মোকাবিলা করবে, সে মু’মিন। যে ব্যক্তি জবান দারা মোকাবিলা করবে সে মু’মিন এবং যে ব্যক্তি অন্তর দ্বারা মোকাবিলা করবে সেও মু’মিন। এরপর আর সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও নেই।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৫০; ‘ঈমান’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ২০]
মুহাম্মাদ বিন বুনদার সাব্বাক আল-জুরজানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, একদা আমি আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] কে বললাম,
إنه ليشتد علي أن أقول: فلان ضعيف، فلان كذاب، قال أحمد: إذا سكت أنت و سكت أنا فمن يعرف الجاهل الصحيح من السقيم.
“অমুক দ্ব‘ঈফ (দুর্বল), অমুক কাযযাব (মিথ্যুক)– বলা আমার কাছে খুব ভারী মনে হয়।” আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, “কিন্তু তুমি যদি চুপ থাক, আর আমিও যদি চুপ থাকি, তাহলে অজ্ঞ মানুষকে সাহীহ-দ্ব‘ঈফ জানাবে কে?” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ২৩১; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (বাদশাহ ফাহাদ রাহিমাহুল্লাহ’র রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত)]

ইমাম আবূ মুহাম্মাদ হাসান বিন ‘আলী বিন খালফ আল-বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩২৯ হি.] বলেছেন,
واعلم أن الخروج عن الطريق على وجهين: أما أحدهما فرجل قد زل عن الطريق، وهو لا يريد إلا الخير؛ فلا يقتدى بزلته فإنه هالك، ورجل عاند الحق وخالف من كان قبله من المتقين؛ فهو ضالّ مضِلّ، شيطان مريد في هذه الأمة، حقيقٌ على من عرفه أن يحذر الناس منه، ويبين للناس قصته، لئلا يقعَ في بدعته أحدٌ فيهلكَ.
“জেনে রেখো, সঠিক পথ থেকে বের হয়ে যাওয়া দুই ধরনের হয়ে থাকে। হয় ব্যক্তি পথ ভুল করেছে, অথচ সে স্রেফ কল্যাণের অভিলাষীই ছিল। এক্ষেত্রে তাঁর ভুলের অনুসরণ করা যাবে না। নতুবা সে (জেনেশুনে ভুলের অনুসরণকারী) ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। আর না হয় ব্যক্তি সত্য গ্রহণে হঠকারিতা করেছে এবং তার পূর্ববর্তী মুত্তাক্বী ব্যক্তিদের বিরোধিতা করেছে। এই ব্যক্তি নিজে ভ্রষ্ট এবং অপরকে ভ্রষ্টকারী। সে এই উম্মতের অবাধ্য শয়তান। যে ব্যক্তি তার প্রকৃত অবস্থা জানে, তার উচিত ওর থেকে মানুষকে সতর্ক করা এবং ওর ঘটনা মানুষের কাছে বর্ণনা করা। যাতে করে কেউ ওর বিদ‘আতে পতিত হয়ে ধ্বংস না হয়।” [ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৬৯-৭০; মাকতাবাতুল গুরাবাইল আসারিয়্যাহ, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] পূর্বোক্ত কথার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন,

هذا الذي خرج عن الحق متعمدًا لا يجوز السكوت عنه بل يجب أن يكشف أمره ويفضح خزيه حتى يحذره الناس ولا يقال: الناس أحرار في الرأي، حرية الكلمة، إحترام الرأي الآخر، كما يدندنون به الآن من إحترام الرأي الآخر فالمسألة ليست مسألة أرآء المسألة مسألة إتباع نحن قد رسم الله لنا طريقًا واضحًا وقال لنا سيروا عليه حينما قال وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ [ الأنعام: ١٥٣] فأي شخصٍ يأتينا ويريد منا أن نخرج عن هذا الصراط فإننا: أولا نرفض قوله. وثانيا :نبين ونحذر الناس منه ولا يسعنا السكوت عنه، لأننا إذا سكتنا عنه اقترّ به الناس، لاسيما إذا كان صاحب فصاحة ولسان وقلم وثقافة فإن الناس يغترون به فيقولون هذا مؤهل هذا من المفكرين كما هو حاصل الآن فالمسألة خطيرة جداً.
وهذا فيه وجوب الرد على المخالف عكس ما يقوله أولئك يقولون اتركوا الردود دعوا الناس كل له رأيه واحترامه وحرية الرأي وحرية الكلمة بهذا تهلك الأمة فالسلف ما سكتوا عن امثال هؤلاء بل فضحوهم وردوا عليهم لعلمهم بخطرهم على الأمة، نحن لا يسعنا ان نسكت على شرهم بل لابد من بيان ما أنزل الله وإلا فأننا نكون كاتمين من الذين قال الله فيهم: إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ ۙ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ [البقرة: ١٥٩] فلا يقتصر الأمر على المبتدع بل يتناول الأمر من سكت عنه فإنه يتناوله الذم والعقاب لأن الواجب البيان والتوضيح للناس وهذه وظيفة الردود العلمية المتوفرة الآن في مكتبات المسلمين كلها تذب عن الصراط المستقيم وتحذر من هؤلاء فلا يروج هذا الفكرة فكرة حرية الرأي وحرية الكلمة واحترام الآخر إلا مضلل كاتم للحق نحن قصدنا الحق ما قصدنا نجرح الناس نتكلم في الناس القصد هو بيان الحق وهذه أمانة حمّلها الله العلماء فلا يجوز السكوت عن أمثال هولاء لكن مع الأسف لو يأتي عالم يرد على أمثال هولاء قالوا هذا متسرع إلى غير ذلك من الوساوس فهذا لا يخذّل أهل العلم أن يبينوا شر دعاة الضلال لا يخذلونهم.

“যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় হক থেকে বেরিয়ে গেছে, তার ব্যাপারে চুপ থাকা বৈধ নয়। বরং তার বিষয়টি প্রকাশ করা এবং তার রহস্য উন্মোচন করা ওয়াজিব। যাতে করে মানুষ তার থেকে সতর্ক থাকতে পারে। একথা বলা হবে না যে, মানুষ তার মতপ্রকাশে স্বাধীন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে, অন্যের মতকে সম্মান করতে হবে। যেমন তারা ইদানীং ‘অন্যের মতকে সম্মান করতে হবে’ বলে বকবক করছে। এটি নানাজনের মতামতের ইস্যু নয়। এটি ইত্তিবা‘ তথা অনুসরণের ইস্যু। আল্লাহ আমাদেরকে সুস্পষ্ট পথ বাতলিয়ে দিয়েছেন এবং আমাদেরকে ওই পথে চলতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, “আর এটি তো আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ কোরো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করো।” (সূরাহ আন‘আম: ১৫৩)

সুতরাং যে ব্যক্তিই আমাদের কাছে আসে এবং চায় যে, আমরা এই পথ থেকে বের হয়ে যাই, আমরা প্রথমত তার কথা প্রত্যাখান করব। দ্বিতীয়ত, আমরা বিষয়টি বর্ণনা করব এবং তার থেকে মানুষকে সতর্ক করব। আমাদের কাছে তার ব্যাপারে চুপ থাকার কোনো স্কোপ নেই। কেননা আমরা যদি তার ব্যাপারে চুপ থাকি, তাহলে মানুষ তার দ্বারা ধোঁকাগ্রস্ত হবে। বিশেষত সে যখন বাগ্মিতা, ক্ষুরধার লেখনী ও উচ্চশিক্ষার অধিকারী হয়। কেননা মানুষ তার দ্বারা ধোঁকাগ্রস্ত হবে, আর বলবে—ইনি তো যোগ্য লোক, ইনি একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ইত্যাদি। যেমনটি বর্তমানে হচ্ছে। সুতরাং এটি খুবই বিপজ্জনক বিষয়।

এতে আমাদের জন্য শরিয়ত বিরোধীকে রদ করার আবশ্যকীয়তার বর্ণনা রয়েছে। ওই ব্যক্তিদের বক্তব্যের বিপরীতে, যারা বলে, ‘তোমরা রদ করা বাদ দাও এবং সকল মানুষকে দা‘ওয়াত দাও, প্রত্যেকের মতামতের সম্মান রয়েছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, কথা বলার স্বাধীনতা আছে, একারণে উম্মত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’ সালাফগণ ওদের মত ব্যক্তিদের ব্যাপারে চুপ থাকেননি। বরং তাঁরা তাদের বিষয় প্রকাশ করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে রদ করেছেন। কারণ তাঁরা জানতেন, উম্মতের জন্য ওরা কতটা বিপজ্জনক।

আমাদের নিকটেও তাদের অনিষ্টের ব্যাপারে চুপ থাকার কোনো স্কোপ নেই। বরং আবশ্যিকভাবে আল্লাহ’র নাযিলকৃত বিধান বর্ণনা করতে হবে। নতুবা আমরা শরিয়ত গোপনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব, যাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমি যে সব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, সেগুলিকে সর্বসাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা সেসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৫৯)

বিষয়টি শুধু বিদ‘আতীর উপরই সীমাবদ্ধ নয়। বরং যে বিদ‘আতীর ব্যাপারে চুপ থেকেছে, বিষয়টি তাকেও শামিল করে। উল্লিখিত ভর্ৎসনা ও শাস্তি তাকেও শামিল করে। কেননা মানুষের কাছে বিশদভাবে বর্ণনা করা ওয়াজিব। বর্তমানে মুসলিমদের লাইব্রেরিগুলোতে বিদ্যমান পর্যাপ্ত ‘ইলমী রুদূদের (রিফিউটেশনস) সকল গ্রন্থ সিরাত্বে মুস্তাক্বীম তথা সরল-সঠিক পথকে ডিফেন্ড করে এবং ওই ব্যক্তিদের থেকে সতর্ক করে। সুতরাং এই মতবাদ –সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, কথা বলার স্বাধীনতা আছে, অন্যের মতের সম্মান আছে ইত্যাদি বলার মতবাদ– হককে গোপনকারী এবং অন্যকে পথভ্রষ্টকারী ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ প্রচার করে না।

আমরা হক বর্ণনা করতে চাই। আমরা মানুষকে জারাহ করা, বা মানুষের সমালোচনা করার অভিলাষ করি না। আমাদের অভিলাষ তো স্রেফ হক বর্ণনা করা। এটি একটি আমানত, যা আল্লাহ ‘আলিমদের উপর অর্পণ করেছেন। সুতরাং ওদের মত ব্যক্তিদের ব্যাপারে চুপ থাকা না-জায়েজ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কোনো ‘আলিম এসে ওদের মত ব্যক্তিদের রদ করলে তারা বলে, ‘ইনি তাড়াহুড়া করছেন’ ইত্যাদি কুমন্ত্রণামূলক কথাবার্তা। সুতরাং কেউ ‘আলিমদেরকে পথভ্রষ্ট দা‘ঈদের অনিষ্ট মানুষের কাছে বর্ণনা করতে বারণ করবে না, তাঁদেরকে (এ থেকে) বারণ করবে না।” [ইমাম সালিহ আল ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), ইতহাফুল ক্বারী বিত তা‘লীক্বাতি ‘আলা শারহিস সুন্নাহ লিল ইমাম আল-বারবাহারী; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৯৩-৯৫; মাকতাবাতুর রুশদ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,

ومثل أئمة البدع من أهل المقالات المخالفة للكتاب والسنة، أو العبارات المخالفة للكتاب والسنة، فإن بيان حالهم وتحذير الأمة منهم واجب باتفاق المسلمين، حتى قيل لأحمد بن حنبل: الرجل يصوم ويصلي ويعتكف أحب إليك أو يتكلم في أهل البدع؟ فقال: إذا قام وصلى واعتكف فإنما هو لنفسه، وإذا تكلم في أهل البدع فإنما هو للمسلمين هذا أفضل.
فبيّن أن نفع هذا عام للمسلمين في دينهم من جنس الجهاد في سبيل الله، إذ تطهير سبيل الله ودينه ومنهاجه وشرعته ودفع بغي هؤلاء وعدوانهم على ذلك واجب على الكفاية باتفاق المسلمين، ولولا من يقيمه الله لدفع ضرر هؤلاء لفسد الدين، وكان فساده أعظم من فساد استيلاء العدو من أهل الحرب، فإن هؤلاء إذا استولوا لم يفسـدوا القلوب وما فيها من الدين إلا تبعاً، وأما أولئك فهم يفسدون القلوب ابتداءً.

“যেমন কিতাব ও সুন্নাহ বিরোধী বক্তব্য বা কিতাব ও সুন্নাহ বিরোধী কথার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত বিদ‘আতের ইমামগণ। তাদের অবস্থা বর্ণনা করা এবং উম্মাহকে তাদের থেকে সতর্ক করা মুসলিমদের সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াজিব। এমনকি আহমাদ বিন হাম্বালকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, “একজন ব্যক্তি সিয়াম পালন করে, সালাত পড়ে, ই‘তিকাফ করে– সে আপনার কাছে অধিক প্রিয়, না কি সে ব্যক্তি যে বিদ‘আতীদের সমালোচনা করে?” তখন তিনি বলেন, “যখন সে সিয়াম পালন করে, সালাত পড়ে এবং ই‘তিকাফ করে, তখন সে তা নিজের জন্য করে। আর যখন সে বিদ‘আতীদের সমালোচনা করে, তখন সে তা মুসলিমদের জন্য করে; সুতরাং এটি উত্তম।”তিনি বর্ণনা করেছেন যে, মুসলিমদের জন্য তাদের দ্বীনের ক্ষেত্রে এই কাজের উপকারিতা ব্যাপক, যা আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদ করার অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু আল্লাহ’র রাস্তা, দ্বীন, মানহাজ ও শরিয়তকে পরিশুদ্ধ করা এবং এর উপর এদের বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনকে প্রতিহত করা মুসলিমদের ঐক্যমতে ওয়াজিবে কিফায়াহ। [ওয়াজিবে কিফায়াহ’র অর্থ: উম্মাহ’র কতিপয় আদায় করলে, বাকিদের উপর থেকে তা আদায় না করার পাপ ঝরে পড়ে। – সংকলক।] আল্লাহ যদি কতিপয় ব্যক্তিকে এদের অনিষ্ট প্রতিহত করতে নিয়োগ না করতেন, তাহলে অবশ্যই দ্বীন ধ্বংস হয়ে যেত। যেহেতু এর অনিষ্ট শত্রু যোদ্ধাদলের কাছে পরাভূত হওয়ার অনিষ্ট থেকেও বেশি। কেননা তারা যখন পরাভূত করে, তখন তারা (মানুষের) অন্তর এবং অন্তরিস্থ দ্বীনকে নষ্ট করে না; তবে কেউ যদি স্বেচ্ছায় নিজের দ্বীন নষ্ট করে, তবে তার কথা ভিন্ন। পক্ষান্তরে এরা শুরুতেই মানুষের অন্তরকে নষ্ট করে।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ২৩১-২৩২; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস; বাদশাহ ফাহাদ (রাহিমাহুল্লাহ)’র রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.]
বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,

فالواجب على علماء المسلمين توضيح الحقيقة ومناقشة كل جماعة أو جمعية ونصح الجميع بأن يسيروا في الخط الذي رسمه الله لعباده ودعا إليه نبينا محمد ﷺ، ومن تجاوز هذا أو استمر في عناده لمصالح شخصية أو لمقاصد لا يعلمها إلا الله- فإن الواجب التشهير به والتحذير منه ممن عرف الحقيقة، حتى يتجنب الناس طريقهم وحتى لا يدخل معهم من لا يعرف حقيقة أمرهم فيضلوه ويصرفوه عن الطريق المستقيم الذي أمرنا الله باتباعه في قوله جل وعلا: وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ.

“মুসলিমদের ‘আলিমদের উপর প্রকৃত বিষয় বর্ণনা করা, প্রত্যেক দল বা সংগঠনের সাথে (শার‘ঈ) বিতর্ক সম্পন্ন করা এবং সবাইকে ওই পথের উপর চলতে নসিহত করা ওয়াজিব, যে পথ স্বয়ং আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য চিত্রিত করেছেন, আর যে পথের দিকে আমাদের নাবী মুহাম্মাদ ﷺ আমাদেরকে আহ্বান করেছেন। যে ব্যক্তি এই পথের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করে, কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে বা কেবল আল্লাহ জানেন এমন কোনো (গুপ্ত) উদ্দেশ্যের কারণে নিজের জিদ ও হঠকারিতায় অটল থাকে, তাহলে যারা প্রকৃত বিষয়টি জানে তাদের জন্য ওই ব্যক্তির সমালোচনা করা এবং তার থেকে সতর্ক করা ওয়াজিব। যাতে করে মানুষ এই ব্যক্তিদের পথ বর্জন করে, আর যে ব্যক্তি প্রকৃত বিষয় জানে না সে তাদের দলে প্রবেশ না করে। নতুবা তারা ওই অজ্ঞ ব্যক্তিকে পথভ্রষ্ট করবে এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে। যেই সঠিক পথ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর এটি তো আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ কোরো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন কর।” (সূরাহ আন‘আম: ১৫৩)” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২০৩; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন,

ﻓﻼ ﻳﺠﻮﺯ ﻷﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺍﻟﺴﻜﻮﺕ ﻭﺗﺮﻙ ﺍﻟﻜﻼﻡ ﻟﻠﻔﺎﺟﺮ ﻭﺍﻟﻤﺒﺘﺪﻉ ﻭﺍﻟﺠﺎﻫﻞ ﻓﺈﻥ ﻫﺬﺍ ﻏﻠﻂ ﻋﻈﻴﻢ ﻭﻣﻦ ﺃﺳﺒﺎﺏ ﺍﻧﺘﺸﺎﺭ ﺍﻟﺸﺮ ﻭﺍﻟﺒﺪﻉ ﻭﺍﺧﺘﻔﺎﺀ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻭﻗﻠﺘﻪ ﻭﺧﻔﺎﺀ ﺍﻟﺴﻨﺔ. ﻓﺎﻟﻮﺍﺟﺐ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺃﻥ ﻳﺘﻜﻠﻤﻮﺍ ﺑﺎﻟﺤﻖ ﻭﻳﺪﻋﻮﺍ ﺇﻟﻴﻪ ﻭﺃﻥ ﻳﻨﻜﺮﻭﺍ ﺍﻟﺒﺎﻃﻞ ﻭﻳﺤﺬﺭﻭﺍ ﻣﻨﻪ ﻭﻳﺠﺐ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺫﻟﻚ ﻋﻦ ﻋﻠﻢ ﻭﺑﺼﻴﺮﺓ.

“পাপাচারী, মূর্খ ও বিদ‘আতীর বিরুদ্ধে কথা বলা বর্জন করা এবং নীরব থাকা ‘আলিমদের জন্য বৈধ নয়। কেননা এটি একটি মারাত্মক গলত। এটি অকল্যান ও বিদ‘আত প্রসারিত হওয়ার অন্যতম কারণ। এটি কল্যাণ কমে যাওয়া, কল্যাণ দূরীভূত হওয়া এবং সুন্নাহ অপসৃত হওয়ারও অন্যতম কারণ। সুতরাং ‘আলিমদের জন্য হক বলা, এর দিকে লোকদের আহ্বান করা, বাতিলকে রদ করা এবং এ থেকে লোকদেরকে সতর্ক করা ওয়াজিব। তবে অবশ্যই তা হতে হবে শার‘ঈ ‘ইলম ও জাগ্রত জ্ঞান সহকারে।” [প্রাগুক্ত; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৫৩]
❏ যারা বিদ‘আতীদের ব্যাপারে চুপ থাকে, তারা ইহুদি-খ্রিষ্টানের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনকারী:

শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

ولو سكت أهل الحق عن بيانه: لاستمر المخطئون على أخطائهم، وقلدهم غيرهم في ذلك، وباء الساكتون بإثم الكتمان الذي توعدهم الله في قوله سبحانه: إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ ۙ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُولَٰئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ ۚ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ.
وقد أخذ الله على علماء أهل الكتاب الميثاق لتبيننه للناس ولا تكتمونه، وذمهم على نبذه وراء ظهورهم، وحذرنا من اتباعهم.
فإذا سكت أهل السنة عن بيان أخطـاء من خالف الكتاب والسنة شَـابَهُوا بذلك أهل الكتاب المغضوب عليهم والضالين.

“হকপন্থিরা যদি হক বর্ণনা করা থেকে চুপ থাকে, তাহলে ভুলকারীরা তাদের ভুলে অটল থাকবে এবং অন্যরা সেই ভুলের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করবে। আর নীরবতা অবলম্বনকারীরা শরিয়ত গোপনের পাপ বহন করবে, যে ব্যাপারে আল্লাহ তাদের হুঁশিয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, সেগুলিকে সর্বসাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা সেসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে। তবে তারা ছাড়া, যারা তাওবাহ করেছে, শুধরে নিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। অতএব আমি তাদের তাওবাহ কবুল করব। বস্তুত আমি তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৫৯-১৬০)

আল্লাহ আহলে কিতাব তথা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ‘আলিমদের নিকট থেকে এই অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তারা তা মানুষের কাছে বর্ণনা করবে, গোপন করবে না। কিন্তু তারা সে অঙ্গীকার তাদের পিছনে ছুঁড়ে ফেলার কারণে আল্লাহ তাদের ভর্ৎসনা করেছেন এবং আমাদেরকে তাদের অনুসরণ করা থেকে সতর্ক করেছেন।

কিতাব ও সুন্নাহ’র বিরোধীদের ভুল বর্ণনা করা থেকে আহলুস সুন্নাহ যদি চুপ থাকে, তাহলে তারা এর মাধ্যমে ইহুদি-খ্রিষ্টানের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে, যে ইহুদি-খ্রিষ্টানরা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট।” [প্রাগুক্ত; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৭২-৭৩]
❏ বিদ‘আতীদের রদ না করে তাদের ব্যাপারে চুপ থাকা মুসলিমদের সাথে ধোঁকা হিসেবে পরিগণিত:

ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছে,

يقول السَّائل: هل عدم الرَّد على أهل البدع وكتمان باطلهم والدِّفاع عنهم يعتبر من الغشّ للمسلمين؟

“প্রশ্নকারী বলছেন, বিদ‘আতীদের রদ না করা, তাদের বাতিল কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে চুপ থাকা এবং তাদেরকে ডিফেন্ড করা কি মুসলিমদের সাথে ধোঁকা হিসেবে পরিগণিত হবে?”

তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) জবাবে বলেছেন,

هذا من أكبر الغش للمسلمين، السكوت على أهل البدع وعدم بيان بدعهم هذا من الغش للمسلمين، فإذا انضاف إلى هذا أنه يمدحهم ويثني عليهم فهذا أشد وأنكر والعياذ بالله، فالواجب على من عنده علم أن يُبَيِّن البدع والمحدثات وأن ينهى عنها ويُحذِّر منها ولا يسكت،السكوت هذا من الكتمان ﴿إِنَّ الذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ البَيِّنَاتِ وَالهُدَى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الكِتَابِ أُوْلَئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللاَّعِنُونَ إِلَّا الذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُوْلَئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ﴾ لا يجوز للمسلم الذي عنده علم أن يسكت على البدع والمخالفات ولا يُبَيِّنُها للناس لأنه إذا سكت احتجَّ الناس به وقالوا لو كان هذا محرمًا أو ممنوعًا ما سكت العالم الفلاني وهو يراه، نعم.

“এটি মুসলিমদের সাথে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির অন্তর্ভুক্ত। বিদ‘আতীদের ব্যাপারে চুপ থাকা এবং তাদের বিদ‘আত বর্ণনা না করা মুসলিমদের সাথে ধোঁকাবাজির অন্তর্ভুক্ত। আর যখন এর সাথে এটা যুক্ত হয় যে, সে তাদের প্রশংসা ও গুণকীর্তন করছে, তখন তা হয় অধিক ভয়ানক ও গুরুতর। সুতরাং যার ‘ইলম আছে, তার উপর ওয়াজিব হলো বিদ‘আতসমূহ বর্ণনা করে তা থেকে নিষেধ ও সতর্ক করা এবং এ ব্যাপারে চুপ না থাকা। কেননা চুপ থাকা শরিয়ত গোপন করার অন্তর্ভুক্ত।

মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, সেগুলিকে সর্বসাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা সেসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে। তবে তারা ছাড়া, যারা তাওবাহ করেছে, শুধরে নিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। অতএব আমি তাদের তাওবাহ কবুল করব। বস্তুত আমি তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৫৯-১৬০)

যে মুসলিমের কাছে ‘ইলম আছে, তার জন্য বিদ‘আত ও শরিয়ত বিরোধিতার ব্যাপারে চুপ থাকা এবং মানুষের কাছে তা বর্ণনা না করা বৈধ নয়। কেননা সে যদি চুপ থাকে, তাহলে মানুষ তা দলিল হিসেবে গ্রহণ করবে এবং বলবে, “এটা যদি হারাম বা নিষিদ্ধই হত, তাহলে অমুক ‘আলিম তা দেখা সত্ত্বেও চুপ করে থাকতেন না”।” [দ্র.: www.sahab.net/forums/index.php… (টেক্সট-সহ অডিয়ো ক্লিপ)]
পরিশেষে প্রার্থনা করছি, আল্লাহ আমাদেরকে বিদ‘আতীদের থেকে সতর্ক থাকার, অন্যদের সতর্ক করার এবং যারা বিদ‘আতীদের থেকে সতর্ক করা থেকে বারণ করে, তাদের থেকে সাবধান থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

আমাদের দেশে প্রচলিত কতিপয় ৪৫টি বড় বিদ’আত

No photo description available.

আমাদের দেশে প্রচলিত কতিপয় ৪৫টি বড় বিদ’আত

১. ঈদ-ই মিলাদুন্নবী পালন করা
২.সকল মিলাদ।
৩.শব-ই বরাত
৪. শব-ই মিরাজের সালাত বা সাওম বা এ উপলক্ষে কোন ইবাদাত
৫. কুর’আন খানি
৬. মৃত ব্যাক্তির জন্য- কুর’আন পড়া,
কুলখানি, চল্লিশা, দু’আর আয়োজন, সওয়াব বখশে দেয়া।
৭. জোরে জোরে চিল্লিয়ে জিকির করা।
৮. হাল্কায়ে জিকির,ইসকের জিকির লাফালাফি,নাচানাচি জিকির।
৯. পীর-মুরীদি মানা বিদাত।
১০.মুখে মুখে উচ্চারণ করে নিয়্যাত পড়া।
১১. ঢিলা কুলুখ নিতে গিয়ে ৪০ কদম হাঁটা, কাঁশি দেয়া উঠা বসা
করা,লজ্জাস্থানে হাত দিয়ে হাটাহাটি ইত্যাদি নির্লজ্জতা।
১২.কুরআন ও সহীহ হাদীস বাদদিয়ে ফাজায়েলে আমল,ফাজায়েলে সাদাকাত,ফাজায়েলে হজ্জ ইত্যাদি শির্ক- বিদাত ও কুফুরী মিশ্রিত কিতাব তালিম করা বা পড়া
১৩. জায়নামাজের দুআ পড়া
১৪.প্রত্যেক ফরজ সালাতের জামাতের পর সম্মিলিতভাবে হাত
তুলে মুনাজাত করা।
১৫.কবরে হাত তুলে সবাই একএে দূ’আ করা।
১৬.খতমে ইউনুস,তাহলীল, খতমে কালিমা, বানানো দরুদ পড়া, এবং যত প্রকার তাজবীহ খতম আছে সবই বিদাত, তাজবীহ দানা গননা করাও বিদাত।
১৭.১৩০ ফরজ মানা
১৮. ইলমে তাসাউফ বা সুফীবাদ মানা।
১৯. জন্মদিন, মৃত্যুদিবস,মা, বাবা দিবস বিবাহবার্ষিকী, ভ্যালেন্টাইন ডে, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি দিবস পালন করা।
২০. অপরের কাছে তাওবা পড়া
২১. অজুতে ঘাড় মাসেহ করা
২২.আল্লাহকে “খোদা” বলা (কেননা খোদা বলা শিরক) ।
২৩.বাতেনী এলেম বা তাওয়াজ্জুহ মানা।
২৪. বার্ষিক মাহফিলের আয়োজন করে রাতভর ওয়াজ করা সম্মিলিত মুনাজাত করা ।
২৫.অন্ধভাবে মাজহাব মানা।
২৬. ওরস পালন করা।কবর পাকা, কবর সাজানো, লাইটিং করা।
২৭. এমন দু’য়া বা দুরুদ পড়া যা হাদিসে নাই
যেমনঃ দুরুদে হাজারী, দুরুদে লক্ষী, দুরুদে তাজ, ওজীফা,
দুরুদে জালালী
২৮. মালাকুল মাউতকে আজরাঈল বলে ডাকা
২৯. মিথ্যা বানোয়াট হাসির গল্প বলে মানুষকে হাসানো
৩০.“আস্তাগ ফিরুল্লাহ [রব্বি মিন কুল্লি জাম্বি ওয়া ]
আতুবুইলাইক লাহাওলা ওয়ালা কুয়াত্তা ইল্লা বিল্লাহি ‘আলিইল
‘আজিম”(এখানে রব্বি মিন কুল্লি জাম্বি অংশটুকু বিদআ’ত )
৩১. ৭০হাজারবার কালিমা খতম করা
৩২. ইসলামের নামে দলাদলি করা
৩৩. দলের আমীরের হাতে বায়াত করা
৩৪. দ্বীন প্রতিষ্ঠায় প্রচলিত রাজনীতি করা
৩৫. দ্বীনের হেফাজতের নামে হরতাল অবরোধ মারামারি করা অনেক ক্ষেত্রে হারামও ।
৩৬. আল্লাহ হাফিজ বা ফি আমানিল্লাহ বলা
৩৭. জানাজা দেয়ার সময় কালিমা শাহাদাত পাঠ করা
৩৮. মৃত ব্যাক্তির কাজা নামাজের কাফফারা দেয়া বা আদায় করা
৩৯. কুর’আনকে সবসময় চুমু খাওয়া ৪০. কুর’আন নীচে পড়ে
গেলে লবণ কাফফারা দেয়া,সালাম করা, কপালে লাগানো ইত্যাদি
৪১. দুই হাতে মোসাফা করা, মোসাফা শেষে বুকে লাগানো বিদাত।
৪২.কারোর গায়ে পা লাগলে গাঁ ছুঁয়ে সালাম করা বিদাত
৪৩.ইছালেহ সোয়াব নামে ওয়াজ ও দোয়া করা
৪৪.টুপি ছাড়া নামাজ পড়লে সোয়াব কম হয়, পাগড়ি মাথায় দিয়ে নামাজ পড়লে বেশী সোয়াব/ নেক হয় এইসব বিদাত।
৪৫. কোরআন, সহীহ্ হাদীসের বাহিরে যত দোয়া, দুরুদ,
জিকির, কালেমা আছে সবই বিদাত।

– আরো আছে সময় করে এ্যড করে দিবো ইনশাআল্লাহ

কিতাবুর রূহ” নিয়ে বিদ’আতিদের বিভ্রান্তির অপনোদন! 

No photo description available.

“কিতাবুর রূহ” নিয়ে বিদ’আতিদের বিভ্রান্তির অপনোদন! 

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি

যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। যিনি বলেছেন, “বরং আমি সত্যকে মিথ্যার উপর নিক্ষেপ করি, অতঃপর সত্য মিথ্যার মস্তক চুর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়, অতঃপর মিথ্যা তৎক্ষণাৎ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়…।”[সূরাহ আম্বিয়া: ১৮ ]

এবং অসংখ্য সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি, যিনি বলেছেন,,
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার পরে জীবিত থাকবে সে বহু ধরনের মতানৈক্য দেখতে পাবে। অতএব সে সময় তোমাদের অবশ্য কর্তব্য হবে আমার সুন্নাত ও আমার সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে চোয়ালের দাঁত দ্বারা মযবুতভাবে অাঁকড়ে ধরা। আর সাবধান! তোমরা (দ্বীনের ব্যাপারে) নতুন কাজ হতে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রত্যেক নতুন কাজই বিদ‘আত’।[আবুদাউদ হা/৪৬০৭; তিরমিযী হা/২৬৭৬; ইবনু মাজাহ হা/৪২; মিশকাত হা/১৬৫, ‘সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ, বঙ্গানুবাদ (এমদাদিয়া) ১/১২২ পৃঃ; আলবানী, সনদ ছহীহ]

প্রারাম্ভিকা,

আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত অহি-র বিধান তথা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান না থাকাই সমাজে বিদ‘আত সৃষ্টির প্রধান কারণ। সঠিক পথ না চেনার কারণে মানুষ যেমন পথ ভুল করে, তেমনি ক্বুরআন ও ছহীহ হাদীছের যথার্থ জ্ঞান না থাকার কারণে মানুষ শরী‘আত বহির্ভূত কাজকে ইবাদত হিসাবে গ্রহণ করে। আর এজন্যই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জ্ঞানার্জনকে ফরয বলে ঘোষণা দিয়েছেন। প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞানার্জন করা ফরয’।[ইবনু মাজাহ হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮; আলবানী, সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৯১৩]

শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমল ব্যতীত ইলমের দিকে আহবান করে সে পথভ্রষ্ট। আর যে ব্যক্তি ইলম বিহীন আমলের দিকে আহবান করে সেও পথভ্রষ্ট। এদের চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট সে ব্যক্তি, যে বিদ‘আতীদের পথে ইলম অন্বেষণ করে। ফলে সে কুরআন ও সন্নাত বহির্ভূত কর্মের অনুসরণ করে এবং ধারণা করে যে, ইহা ইলম; অথচ ইহা অজ্ঞতা। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি বিদ‘আতীদের পন্থায় ইবাদত করে সে ইসলামী শরী‘আত বহির্ভূত আমল করে এবং ধারণা করে যে, সে ইবাদত করছে; অথচ ইহা ভ্রষ্টতা’। [মাজমূ‘ঊ ফাতাওয়া ১১/২৭ পৃঃ]

অতএব জ্ঞান এমন এক আলোকবর্তিকা, যার মাধ্যমে মানুষ জান্নাতের পথ সুস্পষ্টভাবে দেখতে পায়।
নিজেকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে এবং অন্যকেও রক্ষা করতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে অজ্ঞতা এমন এক অন্ধকার, যার মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে নিজে জান্নাতের পথের দিশা হারিয়ে ফেলে এবং অপরকেও সে পথের সন্ধান দিতে পারে না। আর এরূপ অজ্ঞ ব্যক্তিরাই নিজে বিদ‘আতী হয় এবং ছহীহ, যঈফ ও জাল হাদীছের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণে অক্ষম হওয়ায় ভুল ফাতওয়া দেয়। সাথে সাথে মানব রচিত কিচ্ছা-কাহিনী ও স্বপ্নবৃত্তান্তের মাধ্যমে মানুষকে ভ্রষ্টতার শেষ সীমানায় নিক্ষেপ করে। ফলে নিজেরা পথভ্রষ্ট হয় এবং অপরকে পথভ্রষ্ট করে এবং পরকালে জাহান্নামের খড়ি হয়। এমতাবস্থায় কুরআন ও ছহীহ হাদীছ শুনতে তার কর্ণ বধির এবং সরল ও সঠিক পথ দেখতে তার চক্ষু অন্ধ হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা বলেন,
‘তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছ? যে তার খেয়াল-খুশীকে নিজ ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? আল্লাহ জেনেশুনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণ ও হৃদয়ে মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তার চক্ষুর উপর রেখেছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পরে কে তাকে পথনির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?’[সুরাহ জাছিয়া ৪৫/২৩]।

বিদ’আতীদের একটা কুটকৌশল হল, তার নিজের মতকে বলবৎ করার জন্য কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যায় লিপ্ত হয়। কখনো বা কুরআনের একটিমাত্র আয়াত অথবা হাদীছের কোন অংশকে নিজের মতের উপর দলীল হিসাবে পেশ করে নিজেকে কৃতার্থ মনে করে। অথচ পূর্ণ হাদীছ ও আয়াতের ব্যাখ্যা জানার প্রয়োজন মনে করে না। আর এর ফলেই সমাজে সৃষ্টি হয় নানা বিদ‘আত।

বিদ’আতীদের অন্যতম আরেকটি কুটকৌশল হল সালাফী উলামাদের কিতাবাদি থেকে দলিল পেশ করে নিজেদের বিদ’আতকে সমাজে সু-প্রতিষ্ঠিত করা। অতি সাম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করছি, কথিপয় বিদ’আতী দাঈগন নিজেদের শিরকী আক্বীদাহর পক্ষে দলিলস্বরূপ ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম [ রাহিমাহুল্লাহ ] বি’রচিত “কিতাবুর রূহ” বইটি থেকে হাওয়ালা দিচ্ছেন।
যারফলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃস্টি হচ্ছে।

পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম [রাহিমাহুল্লাহ-র] “কিতাবুর রূহ” কিতাবটিতে বেশকিছু ভাল কথা রয়েছে যা থেকে যেকেউ উপকৃত হতে পারেন। পাশাপাশি কিছু জাল-দ্বইফ হাদিসও রয়েছে। ইতিহাসবিদদের মতে,শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ [ রাহিমাহুল্লাহ -র] ছাত্রত্ব গ্রহণ করার পূর্বে তিনি এই বইটি সংকলন করেন।

“কিতাবুর রূহ” – এর উপর এক নজর :

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ [ রাহিমাহুল্লাহ’র] বিখ্যাত ছাত্র ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম [ রাহিমাহুল্লাহ ]-বি’রচিত “কিতাবুর রূহ” কিতাবটি সূফীদের পছন্দের কিতাবগুলোর একটি । এই উপমহাদেশে সর্বপ্রথম সূফীরাই বইটির অনুবাদ করে ছাপিয়েছেন।

শাইখের লিখিত এই কিতাবে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা উনার অন্য কিতাবাদির সাথে সাংঘর্ষিক ও বিপরীতমুখী। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, সূফীরা নিজেদের ভ্রান্ত আক্বীদাহকে শক্তিশালী করার জন্য উনার এই কিতাবটির ঘটনাবলী প্রচার করে সালাফী যুবকদের ধোঁকা দেয়! এক্ষেত্রে শাইখের রচিত অন্যান্য কিতাবগুলোতে উনার সর্বশেষ অবস্থান কি ছিল তা অপ্রকাশ্য রেখে দেয়।

পাঠকদের জ্ঞাতার্থে আমরা আরো জানাতে চাই যে, উক্ত কিতাবে অলৌকিক ঘটনা সম্বলিত কিছু দূর্বল হাদিস স্থান পেয়েছে যার বিশুদ্ধতা প্রমানিত নয়!

আলোচ্য কিতাব সম্পর্কে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ আশ শাইখুল আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মদ বিন ছলেহ আল উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ )-কে জিজ্ঞাস করা হয়েছিল, উত্তরে তিনি বলেন –

“এই কিতাবে ভাল এবং মূল্যবান বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেকেউ কিতাবটি পড়বে সে জানতে পারবে যে এটা ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ )-র লিখিত। যতদূর জানা যায় উক্ত কিতাবে যেসকল ঘটনাবলি (যেগুলি কিছু মৃত মানুষ সংক্রান্ত) উল্লেখ করা হয়েছে, উক্ত ঘটনাগুলির বিশুদ্ধতা সুনিশ্চিত নয়।

ঘটনাগুলো এতই মন গলানো (হৃদয় নরম করে দেয়) বিষয় এবং মনের মধ্যে কবরের আযাবের ভয়কে পুনঃজীবিত করে, পাঠককে কবরের সুখ সম্পর্কে আকুলভাবে আহ্বান করে। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ ) ঘটনাগুলোর বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করতে কঠোরতা কম দেখিয়েছেন। এইসকল বিষয়ে ঘটনাগুলো খুবই কার্যকর কিন্তু ঘটনাগুলোর বিশুদ্ধতা প্রমানিত নয়। [ফাতওয়া নুর ‘আলা আদ-দারব فتاوى نور على الدرب للعثيمين ]

গৃহীতঃ http://www.islamweb.net/emainpage/index.php…

আলোচনা দীর্ঘায়িত না করে, আমরা উপরিউক্ত কিতাব থেকে দু’একটি উদাহরণ পেশ করব [ ওয়া বিল্লাহীত তাওফীক্ব ]।

মৃতব্যক্তি যিয়ারতকারীকে চিনতে পারে এবং সালাম দেয় :

حَدثنَا مُحَمَّد بن عون حَدثنَا يحيى بن يمَان عَن عبد الله بن سمْعَان عَن زيد بن أسلم عَن عَائِشَة رضى الله تَعَالَى عَنْهَا قَالَت قَالَ رَسُول الله مَا من رجل يزور قبر أَخِيه وَيجْلس عِنْده إِلَّا استأنس بِهِ ورد عَلَيْهِ حَتَّى يقوم

আম্মাজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ [ সাঃ] বলেন, কোন ব্যক্তি যখন তার ভাইয়ের কবর যিয়ারত করে এবং তার পাশে গিয়ে বসে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে সেখান থেকে উঠে না আসে, কবরবাসী তার সানিধ্য লাভে আনন্দিত হয় এবং তার সালামের জবাব দেয়।[ কিতাবুর রূহ, এমদাদিয়া লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত। পৃষ্ঠা : ২ ]

তাহক্বীক্ব :

সানাদের রাবী ‘عبد الله بن سمعان’ মাজহুল (অজ্ঞাত)।
ইমাম ইবনু হাজার আসক্বালানী রাহিমাহুল্লাহ উক্ত বর্ণনা পেশ করে বলেন,
“سنده عبد الله بن سمعان لا أعرف حاله”
‘আব্দুল্লাহ ইবন সাম’আন এর (হাল) অবস্থা সম্পর্কে জানি না’।[ লিসানুল মিযান,রাবী নং : ৪২৬৮ ]

সানাদের আরেক রাবী ‘يحيى بن يمان’ এর পুরো নাম হচ্ছে ‘يحيى بن يمان العجلي الكوفي’

সে হাদিস বর্ণনায় শক্তিশালী নয়। জমহুর মুহাদ্দিসগণ তার ব্যাপারে জারাহ (সমালোচনা) করেছেন।

قال أحمد: ليس بحجة.
وقال ابن المديني: صدوق، فلج فتغير حفظه.
وقال ابن معين والنسائي: ليس بالقوى.

قال البخاري: فيه نظر. [ মিযানুল ই’তিদাল রাবী নং : ৯৬৬১ ]

একই পৃষ্ঠায় আরেকটি হাদিস রয়েছে!

হাদীছ :

حَدثنَا مُحَمَّد بن قدامَة الجوهرى حَدثنَا معن بن عِيسَى الْقَزاز أخبرنَا هِشَام بن سعد حَدثنَا زيد بن أسلم عَن أَبى هُرَيْرَة رضى الله تَعَالَى عَنهُ قَالَ إِذا مر الرجل بِقَبْر أَخِيه يعرفهُ فَسلم عَلَيْهِ رد عَلَيْهِ السَّلَام وعرفه وَإِذا مر بِقَبْر لَا يعرفهُ فَسلم عَلَيْهِ رد عَلَيْهِ السَّلَام[ কিতাবুর রূহ, পৃষ্ঠা : ২ ]

তাহক্বীক্ব :

সানাদের রাবী ‘محمد بن قدامة اجوهري’ এর ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণ জারাহ (সমালোচনা) করেছেন।

ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন বলেন “সে হাদিস বর্ণনায় কিছুই না”

ইমাম আবু দাউদ বলেন তাকে ‘দ্বঈফ’ বলেছেন। ইমাম আবু দাউদ এই রাবী থেকে কিছুই লিখেন নাই।[ তাহযীবুত তাহযীব,৯/৪১০-৪১১ ]

সানাদের আরেক রাবী ‘زيد بن أسلم’ কে ইমাম ইবনু হাজার আসক্বালানী তার ‘ত্বাবাক্বাত আল মুদাল্লিসীন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।[ ত্বাবাক্বাত আল মুদাল্লিসীন,রাবী নং, ১১ ]

আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) থেকে ‘زيد بن أسلم’ এর বর্ণনা মুরসাল হয়ে থাকে।[ আল মারাসিল লি ইবনু আবী হাতীম,রাবী নং ৯৭; ১/৬৪ ]

সুতরাং এই হাদিসের সানাদ দ্বঈফ জিদ্দান (খুবই দূর্বল)।

এমন অনেক অ-প্রসিদ্ধ ঘটনা উপরিউক্ত কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যা বিশুদ্ধ সুত্রে প্রমাণিত নয়।

“কিতাবুর রূহ” গ্রন্থটি নিয়ে উস্তায আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম [ হাফিয্বাহুল্লাহ’র] – বিশ্লেষণধর্মী আলোচনাটি শুনতে পারেন :
লিংক : https://youtu.be/kr7F6595dz

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা বিদ’আতীদের কুটিলতা থেকে ধোঁকাগ্রস্থ ভাইদের হিফাযত করূন।

আ-মীন।

সংকলক :
আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী,
আখতার বিন আমীর।

কুরআন খতমের অনুষ্ঠান

quran-20171218080452.png

কুরআন খতমের অনুষ্ঠান

কুরআন প্রতিটি মুসলিমের জীবন বিধান। এই কুরআন তাকে নিয়মিত তেলাওয়াত করতে হবে এবং এর মর্ম বুঝে তদনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে। কুরআন শিক্ষা ও তেলাওয়াতের ফযিলত বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

‘‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়’’।[1]

এভাবে কুরআন তেলাওয়াতের বেলায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

‘‘কুরআন পাঠকারী (মুমিনের) উদাহরণ সুস্বাদু সুগন্ধযুক্ত লেবুর ন্যায়। আর যে (মুমিন) কুরআন পাঠ করে না তার উদাহরণ এমন খেজুরের মত যা সুগন্ধহীন তবে খেতে সুস্বাদু। আর যে ফাসিক কুরআন পাঠ করে তার উদাহরণ রায়হান জাতীয় গুল্মের মত যার সুগন্ধ আছে কিন্তু খেতে বিস্বাদযুক্ত। আর যে ফাসেক কুরআন তেলাওয়াত করে না তার উদাহরণ ঐ মাকাল ফলের মত যা খেতেও বিস্বাদ (তিক্ত) আবার কোনো সুঘ্রানও নেই।[2]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেন,

‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি অক্ষর তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তার আমলনামায় একটি নেকী প্রদান করেন, আর এই নেকীটি দশটি নেকীর সমান। আমি বলি না, ‘‘ الم ’’ একটি অক্ষর, বরং ‘‘ أ ’’ একটি অক্ষর, ‘‘ل ’’ একটি অক্ষর, ‘‘ م ’’ একটি অক্ষর’’।[3]

কুরআন তেলাওয়াতের এত মর্যাদা, গুরুত্ব, ছওয়াব কুরআন হাদীস থেকে প্রমাণিত থাকা সত্বেও প্রচলিত খতমের রূপরেখায় নবী আদর্শ ও সাহাবা আদর্শের বৈপরিত্য থাকার কারণে এই কুরআন খতমের হুকুম যদি না বাচক হয় তবে যার কোনো অস্তিত্ব নবী জীবনে, নবীর শিক্ষা প্রাপ্ত সাহাবিদের জীবনে নেই তার হুকুম কী হবে তা সহজেই অনুমেয়।

রূপরেখায় বৈপরিত্য বলতে যেমন, সাহাবায়ে কেরাম কুরআন নিজে শিখতেন, নিজে পড়তেন। যিনি জানেন না তিনি শিখতেন। এই শিক্ষাই তাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন। অনেক সময় কেউ কুরআন অপরের কাছে শুনতে চাইতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও কোনো কোনো সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে শুনার আগ্রহ প্রকাশ করতেন, শুনতেন। তবে অন্যকে এনে বাড়ীতে খতম করানোর কোনো রেওয়াজ তাদের মাঝে ছিল না। কেউ মারা গেলে তাদের যা করণীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছেন তারা শুধু তাই করতেন। কেউ অসুস্থ হলে, বিপদে পড়লে কী করণীয় তাও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে দিয়েছেন। কেউ মারা গেলে বা অন্য কোনো সমস্যায় পড়লে কুরআন খতম করা বা খতম করানোর কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে একটিবার কাউকে বলেন নি নিজেও করেন নি। তাই সাহাবিরা এমন কর্ম কখনো করেন নি।

এখন আমরা জানতে চেষ্টা করব প্রচলিত খতমের হুকুম সম্পর্কে আদর্শবান আলেমদের কী মত। এ ব্যাপারে আমাদের আলেম সমাজে অত্যন্ত সুপরিচিত কিতাব ‘‘আহসানুল ফাতওয়া’’ এর লিখক প্রসিদ্ধ ফক্বিহ রশিদ আহমদ রহ. তার কিতাবে প্রচলিত কুরআন খতম সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে যে দলীলভিত্তিক আলোচনা করেছেন, অসংখ্য আলেমের বক্তব্যের উদ্ধৃতি পেশ করেছেন তার এই লেখাটির অনুবাদ তুলে দেওয়াই যথেষ্ট মনে করছি। তার এ বক্তব্যের পর এ ব্যাপারে আর কিছু লেখার কোনো প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না। এতে আমরা প্রচলিত খতমের তাৎপর্য যেমন বুঝতে পারব তেমনি অগণিত আলেমের মতামত পেয়ে যাব। তার আলোচনা পড়ার পর সত্য সন্ধানী মানুষের মনে আর কোনো দ্বিধা থাকবে না বলে আশা করি। নিম্নে তার কিতাবের প্রশ্ন ও উত্তর হুবহু তুলে ধরছি।

প্রশ্ন: বর্তমানে কুরআন খতমের প্রচলন ব্যাপক হয়ে গেছে। যেমন, নতুন ঘর ক্রয় করা হলে কুরআন খতম করা হয়। দোকান উদ্বোধন করা হলে খতম করা হয়। কারো চল্লিশা হলে কুরআন খতম করা হয়, কারো মৃত্যুর তৃতীয় দিনে কুরআন খতম করা হয়; যাতে মৃত ব্যক্তির কাছে ছওয়াব পৌঁছে। কোনো সময় এর ঘোষণা পত্রিকায় দেওয়া হয় এবং মানুষ দুর-দুরান্ত থেকে শুধুমাত্র কুরআন খতমের জন্য আসে। এমন কুরআন খতমের আমলের হুকুম কী? কুরআন হাদীসের আলোকে এর কোনো প্রমাণ আছে কি? এতে আমাদের বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের লোক শরীক হতে পারবে কি? আমরা নিজে কি এমন কর্মে শরীক হয়ে গোনাহগার হচ্ছি না?

সুমতি দানকারীর নামে উত্তর

মুহাম্মদ ইসমাইল বুখারী রাহ. বলেন: ………..মুজাহিদ (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং উরওয়া ইবনু যুবাইর (র) মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, আব্দুল্লাহ ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা- আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর হুজরার পাশে বসে আছেন। ইতোমধ্যে কিছু লোক মসজিদে সালাতুদ্দোহা আদায় করতে লাগল। আমরা তাকে এদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা বিদ‘আত।[4]

ইমাম আবুল-হুসাইন মুসলিম ইবন হাজ্জাজ ইবন মুসলিম আল-কুশাইরী বলেন: ……….. মুজাহিদ (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং উরওয়া ইবনু যুবাইর (র) মাসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, আবদুল্লাহ ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা – আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর হুজরার পাশে বসে আছেন। আর কিছু লোক মসজিদে সালাতুদ্দোহা আদায় করছে। আমরা তাকে এদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা বিদ‘আত।[5]

এবং শাইখ মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহ্ইয়া ইবন শরফ নববী রাহ. বলেন, তারা ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যারা মসজিদে সালাতুদদ্বোহা আদায় করছিল তাদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছিল, তিনি বললেন বিদ‘আত। এটা ক্বাযী[6] এবং অন্যান্যরা এর অর্থ নিয়েছেন, তার উদ্দেশ্য হলো সালাতকে মসজিদে প্রকাশ করা এবং এর জন্য সমবেত হওয়াটাই হচ্ছে বিদ‘আত। মূল সালাতুদদ্বোহা বিদ‘আত নয়। সালাত অধ্যায়ে মাসআলাটির আলোচনা হয়েছে।)[7]

ইমাম মুহাম্মদ ইবন শিহাব আল-কুরদুরী আল-হানাফী রাহ.[8] যিনি ইবনে বায্যার নামে পরিচিত, তিনি বলেন, ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত যে, তিনি শুনতে পান একদল লোক মসজিদে সমবেত হয়ে উচ্চস্বরে তাহলীল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ পড়ছে। অতএব তিনি তাদের কাছে গেলেন এবং বললেন, আমরাতো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এমনটি পাইনি। আমিতো তোমাদেরকে বিদ‘আতি ছাড়া কিছু দেখছি না। তিনি একথা বলতে বলতে তাদেরকে মসজিদ হতে বের করে দেন।)[9]

তিনি আরেক জায়গায় বলেন, আর মৃত্যুর প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিন, সাপ্তাহ পর এবং অনুষ্ঠানে খাবারের আয়োজন করা, বিভিন্ন মৌসুমে কবরে খাবার নিয়ে যাওয়া, কুরআন পড়ার জন্য দাওয়াতের আয়োজন করা এবং সৎ লোক ও ক্বারীদেরকে খতমের জন্য বা সূরা আন‘আম অথবা সূরা ইখলাস পড়ার জন্য সমবেত করা মাকরূহ।

মোটকথা, কুরআন পড়ার সময় খাওয়ার জন্য দাওয়াতের আয়োজন করা মাকরূহ।[10]

ফক্বীহ মুহাম্মদ জাফর[11]….সিন্দি বলেন, সাইরাফিয়্যাহ কিতাবে[12] ‘‘কঠিন বিষয় এবং অসুবিধার কারণে কুরআন পড়া মাকরূহ’’। (এবং এক পৃষ্ঠা পর) মুফিদুল মুস্তাফিদ কিতাবে এসেছে, ‘‘দলবদ্ধ হয়ে বৈঠকে কুরআন পড়া মাকরূহ, কেননা এতে শ্রবণ করা এবং চুপ থেকে শোনা পরিত্যাগ করা হয় অথচ এ দুটি বিষয় নির্দেশিত।’’ কেউ কেউ বলেন, ‘‘এতে অসুবিধা নেই’’। ‘মুহিত’[13] কিতাবের উদ্ধৃতিতে ‘তাতারখানিয়া’[14] কিতাবে রয়েছে, ‘‘মাশায়েখের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, নিশ্চয় দলবদ্ধ হয়ে উচ্চস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করা যাকে বলা হয় ‘সীপারা পড়া’ তা মাকরূহ। (আরো বলেন) আইনুল ইলমে রয়েছে, তিন দিনের কমে খতম করবে না ’’। (আরো এক পৃষ্ঠা পর), ‘‘মুফিদুল মুসতাফিদে নেসাব[15] থেকে বলা হয়েছে, সমাবেশস্থলে কুরআন পড়া মাকরূহ, কেননা পাঠক তা দুনিয়ার লোভে পড়ছে। এভাবে বাজারে পড়া মাকরূহ। কবরের কাছে পড়াকেও এভাবে মাকরূহ বলা হয়েছে। যদি পড়ে কিন্তু (কারো কাছে কিছু) না চায়, আর মানুষ তাকে চাওয়া ব্যতীতই দান করে তবে তাও মাকরূহ বলেছেন, কেননা চাওয়ার ইচ্ছা না থাকলে সে কেন ঘরে বসে পড়ছে না’’।[16]আল্লামা ইবনে আবেদিন[17] রাহ. বলেন, (পরিশিষ্ট) মুসান্নিফ[18] তার কথা ‘‘একা একা’’ বলে তিনি সেদিকে ইঙ্গিত করেন যা একটু পরে তিনি তার মতনে (বইয়ের মূল অংশে) এই বলে উল্লেখ করেন, ‘‘আর এই রাতগুলো জাগ্রত থেকে কাটানোর জন্য মসজিদে সমবেত হওয়া মাকরূহ’’ পুরো আলোচনা তার ব্যখ্যাগ্রন্থে রয়েছে। আল-হাবীল ক্বুদসীতে[19] তা মাকরূহ বলে স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, ‘‘এই রাতগুলোতে যে সালাতের কথার বর্ণনা রয়েছে তা একা একা পড়তে হবে, একমাত্র তারাবীহ ব্যতীত’’।

আল-বাহরে[20] বলেন, ‘‘এথেকে জানা যায় যে, সালাতুর রাগাইব যা রজবের প্রথম জুমুআয় পড়া হয়, এর জন্য সমবেত হওয়া মাকরূহ এবং এটি বিদ‘আত। এটাকে নফল ও মাকরূহ থেকে বের করার জন্য রোমবাসীরা এই সালাতের মান্নতের যে হীলা অবলম্বন করে তা বাতিল’’।

আমি বলি (ইবনে আবেদীন) বায্যাযিয়ায় তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে, যেমন ব্যাখ্যাকার অধ্যায়ের শেষে উল্লেখ করবেন। আল-মুনইয়াহ এর দুই ব্যাখ্যাকার[21] এর উপর দীর্ঘ আলোচনা করেছেন এবং তারা উভয়ে স্পষ্ঠভাবে বলেছেন যে, ‘‘এ ব্যাপারে যা বর্ণনা করা হয় সব বাতিল মনগড়া। আল্লামা নুরুদ্দীন মাক্বদিসীর[22] এ বিষয়ে একটি সুন্দর রচনা রয়েছে তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘রাদ্উর রাগিব আন সালাতির রাগাইব’ তিনি এখানে চার মাযহাবের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আলেমেদের কথার অধিকাংশ সংকলন করেছেন।[23]

তিনি আরেক জায়গায় বলেন, আর মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে যিয়াফত খাবারের আয়োজন করা মাকরূহ। কেননা তা আনন্দের বেলায় শরীয়ত সম্মত, অনিষ্টতার বেলায় নয়। আর এটা মন্দ বিদ‘আত। ইমাম আহমদ এবং ইবনে মাজাহ বিশুদ্ধ সনদে জারীর ইবন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন,[24] জারীর বলেন, ‘‘মৃত ব্যক্তির পরিবারের নিকট সমবেত হওয়া এবং তারা খাবারের আয়োজন করাকে আমরা নিয়াহাহ (বিলাপ) গণ্য করতাম’’। বায্যাযিয়ায় রয়েছে, ‘‘আর মৃত্যুর প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিন, সপ্তাহ পর এবং অনুষ্ঠানে খাবারের আয়োজন করা, বিভিন্ন মৌসুমে কবরে খাবার নিয়ে যাওয়া, কুরআন পড়ার জন্য দাওয়াতের আয়োজন করা এবং সৎ লোক ও ক্বারীদেরকে খতমের জন্য বা সূরা আন‘আম অথবা সূরা ইখলাস পড়ার জন্য সমবেত করা মাকরূহ। মোটকথা, কুরআন পড়ার সময় খাওয়ার জন্য দাওয়াতের আয়োজন করা মাকরূহ’’ এবং উক্ত কিতাবের ইসতেহসান অধ্যায়ে রয়েছে, ‘‘যদি দরিদ্র মানুষের জন্য খাবারের আয়োজন করে তবে ভাল’’। আর মি‘রাজে[25] এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন, ‘‘এই সবগুলো হচ্ছে লোক দেখানো ও লোক শুনানো। তাই এ সব থেকে বিরত থাকবে, কেননা তারা এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে না’’।)[26]

তিনি আরেক জায়গায় বলেন, তাবয়িনুল-মাহারিমের লিখক[27] স্পষ্ট উদ্ধৃতির মাধ্যমে এসব প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে অনেক দীর্ঘ আলোচনা করেন। তার বক্তব্যের মধ্য থেকে রয়েছে,‘‘তাজুশ্-শরীয়াহ বলেন,[28]পারিশ্রামিকের মাধ্যমে কুরআন পড়া ছওয়াবের উপযুক্ত হয় না, না মৃতব্যক্তির জন্য, না পাঠকের জন্য’’। হেদায়ার ব্যখ্যাগ্রন্থে আইনি[29] লিখেন, ‘‘দুনিয়ার জন্য কুরআন পাঠককে বাধা দেওয়া হবে, দাতা, গ্রহিতা উভয়ে গোনাহগার হবে’’। মোটকথা, আমাদের যুগে পারিশ্রমিকের মাধ্যমে কুরআনের অংশ পড়ার যে প্রচলন বিস্তার লাভ করেছে তা জায়েয নেই, কেননা এখানে পড়ার নির্দেশ এবং ছওয়াব নির্দেশদাতাকে দেওয়া রয়েছে, আর পড়া হচ্ছে অর্থের কারণে। অতএব বিশুদ্ধ নিয়্যাত না থাকার কারণে পাঠকই যখন ছওয়াব পাচ্ছে না তাহলে কী-ভাবে পাঠক নিয়োগকারীর কাছে ছওয়াব পৌছবে। যদি পারিশ্রমিক না থাকত তবে আজকাল কেউ কারো জন্য পড়ত না। বরং কুরআনকে তারা উপার্জনের বস্তু ও দুনিয়া সংগ্রহের মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছে। ইন্না লিল্লাহি ও ইন্না ইলাইহি রাজি‘ঊন। (কয়েক লাইন পর) যেমন তাতারখানিয়ায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে বলেন, ‘‘এই (খতমের) অসিয়্যাতের এবং পড়ার কারণে পাঠককে দানের অসিয়্যাতের কোনো অর্থ নেই। কেননা এটা ভাড়া করার ন্যায়, আর এসবের বেলায় ভাড়া করা বাতিল এবং তা বিদ‘আত। খুলাফাদের মধ্যে কেউই এমন কর্ম করেননি।)[30]

তিনি আরো বলেন, আল্লামা হুলওয়ানী ‘আল-মুনতাহাল হান্বলী’[31] এর টিকায় শায়খুল ইসলাম তাক্বী উদ্দীন থেকে বর্ণনা করেন যার ভাষ্য হলো, ‘‘পড়ার জন্য পারিশ্রমিকের উপর নিয়োগ দেওয়া এবং এর ছওয়াব মৃতব্যক্তিকে পাঠানো শুদ্ধ নয়, কেননা কোনো ইমাম থেকে এর অনুমোদন পাওয়া যায় না। বরং আলেমগণ বলেন, নিশ্চয় ক্বারী যখন সম্পদের কারণে পড়বে তখন তার কোনো ছওয়াব নেই, অতএব সে মৃতব্যক্তির কাছে কি জিনিস পাঠাবে, মৃত ব্যক্তির কাছে কেবল সৎকর্মই পৌঁছে। আর শুধুমাত্র তেলাওয়াতের উপর পারিশ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা কোনো ইমাম বলেননি’’।

(কয়েক লাইন পর) অতএব, এখন তোমার কাছে খতম এবং তাহালিলের অসিয়্যাত, যে দিকে মানুষ ঝুঁকেছে তার অন্যান্য খারাবীর দিকে দৃষ্টি দেওয়া ছাড়াই তা বাতিল হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল। দৃষ্টিশক্তি লোপ করা হয়েছে এমন ব্যক্তি ছাড়া যার খারাবী কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আমি এতে একটি পুস্তিকা সংকলন করেছি যার নাম দিয়েছি ‘শিফাউল-আলীল ও বাল্লু-গালীল ফি হুকমিল-অসিয়্যাতে বিল-খাতামাতে ওয়াত্তাহালীল’[32]

এসমস্ত বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত কুরআন খতম বিদ‘আত এবং না-জায়েয। কুরআন, হাদীস এবং কল্যাণের সাক্ষ্যপ্রাপ্ত যুগে এর কোনো প্রমাণ নেই। এতে অংশ নেওয়া জায়েয নয়। এছাড়া প্রচলিত খতমে কুরআনে আরো অসংখ্য খারাবী রয়েছে যার কিছু নিম্নে তুলে ধরছি:

  1. ঘোষণা এবং বলপূর্বক এতে লোকজনদের সমবেত করা হয়, যাকে শরীয়তের পরিভাষায় ‘‘তাদাঈ’’ (ডাকাডাকি) বলা হয় যা নফল ইবাদতে নিষিদ্ধ। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সামনে কিছু মানুষ সালাতুদ্দ্বোহা জামাতের আকারে পড়ছিল, যখন তার কাছে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো তিনি তাদের আমলকে বিদ‘আত আখ্যা দিলেন। অথচ সালাতুদ্দ্বোহা একাকি পড়া প্রমাণিত। এভাবে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এক গোত্রের ব্যাপারে শুনলেন, তারা উচ্চস্বরে তাহলিল এবং দুরূদ পড়ছে, তখন তিনি তাদেরকে বিদ‘আতি বলে মসজিদ থেকে বের করে দিলেন। অথচ একাকি তাসবীহ, তাহলীল এবং দুরূদ পড়া পূণ্য ও ছওয়াবের কাজ।
  2. ডাকার পর যদি কিছু মানুষ কুরআন খতমে না আসে তাহলে তাকে বিভিন্নভাবে তিরস্কার করা হয়। অথচ মুস্তাহাব কাজ ছাড়ার উপর তিরস্কার জায়েয নেই।
  3. অনুপস্থিতদের ব্যাপারে মনে বিদ্বেষ, ঘৃণা, ক্রোধ বদ্ধমূল করা হয়।
  4. কুরআন খতমের আয়োজকরা বেশি লোকের উপস্থিতিতে গর্ব করে।
  5. প্রচলিত কুরআন খতম এত জরুরী মনে করা হয় যে, যদি কোনো মানুষ কুরআন খতম না করায় অথবা তার খতমের আয়োজনে মানুষ কম হয় তবে সে সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
  6. পুরো কুরআন খতম জরুরী মনে করা হয়, অথচ শরীয়তে বরকত এবং ছওয়াবের জন্য কোনো পরিমাণ নির্দিষ্ট নেই। কুরআন তেলাওয়াত ছাড়া যিকর আযকার, তাসবীহাত, নফল এবং সাদাকাত ইত্যাদি অন্যান্য পদ্ধতিতেও এই উদ্দেশ্য অর্জন হয়।
  7. যদি পড়ার জন্য মানুষ কম জমা হয় তখন তার পুরো কুরআন খতমকে নিজের উপর চাপ এবং বিষের ঢোক মনে করে যে কোনভাবে তা গলা থেকে সরানোর চেষ্টা করা হয়। অথচ হাদীসে বর্ণিত হচ্ছে, “ঐ সময় পর্যন্ত কুরআন পড় যতক্ষন মনে বিরক্তিবোধ না হয় এবং যখন ক্লান্ত হয়ে পড় তখন ছেড়ে দাও”।[33]
  8. এই অবস্থায় তাজবীদের নিয়ম কানুন, হুরূফের সিফাতের বিশুদ্ধ আদায়, গুন্নাহ, ইখফা, ইজহার এবং মদসমূহের প্রতি খেয়াল করা ব্যতীত শব্দ ও অক্ষর কেটে প্রাণ পরিত্রাণের চেষ্টা করা হয়।
  9. প্রচলিত কুরআন খতমে এমন লোক আসে যে কুরআন পড়া জানে না। তখন সে কুরআন হাতে নিয়ে প্রত্যেক লাইনে বিসমিল্লাহ পড়ে অথবা শুধু আঙ্গুল ফিরিয়ে পারা রাখা দেয়। একে আঙ্গুল এবং বিসমিল্লাহ খতম বলা হয়, শরীয়তে যার কোনো প্রমাণ নেই। বরং এতে কুরআনের অবমাননা।
  10. খতমের শেষ পর্যন্ত বসাকে জরুরী মনে করা হয়। তাই কোনো ব্যক্তি নিজের পারা শেষ করে কঠিন প্রয়োজন সত্বেও উঠার সাহস করে না। কেননা এটাকে অত্যন্ত দোষনীয় মনে করা হয়।
  11. প্রচলিত কুরআন খতমে মিঠাইর ব্যবস্থা করা হয়। ‘‘প্রচলিত নিয়ম শর্তের ন্যায়’’ মূলনীতির আলোকে এটা পাঠকদের পারিশ্রমিক, আর কুরআন পড়ার পারিশ্রমিকের দাতা, গ্রহিতা উভয় গোনাহগার। তাহলে এখানে নেকীর কী প্রত্যাশা করা যায়? আর যেখানে পাঠকের নিজের ছওয়াব হচ্ছে না, সেখানে মৃত ব্যক্তির জন্য তার ঈসাল কিভাবে হতে পারে ?
  12. দাওয়াত বা মিঠাইকে এমন জরুরী করে রাখা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি এর ব্যবস্থা করে না তার উপর অভিশাপ ও তিরস্কারের ঝুড়ি পড়ে।
  13. প্রচলিত কুরআন খতমের জন্য তিনদিনা, চল্লিশা ইত্যাদি বিশেষ দিন নির্দিষ্ট করা হয়। আর অনির্দিষ্ট ইবাদতের জন্য নিজের পক্ষ থেকে দিন নির্দিষ্ট করা মাকরূহ, না-জায়েয বরং বিদ‘আত।
  14. জারীর ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, কোনো কোনো মানুষের তেলাওয়াতে সেজদার জ্ঞান থাকে না, ফলে সে সেজদার আয়াত পড়ে এবং শোনে তেলাওয়াতে সেজদা না করার কারণে নেকীর পরিবর্তে ওয়াজিব ছাড়ার গোনাহ নিজের মাথায় বহন করে। ‘‘মৃতব্যক্তির পরিবারে সমবেত হওয়া এবং তারা খাবারের আয়োজন করাকে আমরা ‘নাওহা’[34] (বিলাপ) গণ্য করতাম’’ আর বিলাপ করা হারাম।
  15. প্রচলিত কুরআন খতমে অংশগ্রহণকারী এবং যিনি অংশগ্রহণ করান সবার উদ্দেশ্য থাকে লোক দেখানো। লোকদেখানোর কারণে মানুষের বড় বড় আমল নষ্ট হয়ে যায়।

হাদীসে রয়েছে লোক দেখানো আমলকারীর আমল এমন ধ্বংস হয় যেমন আগুন লাকড়ি খেয়ে ফেলে[35] এবং আল্লাহর কাছে এমন আমল প্রত্যাখ্যাত। অতএব যে আমলটি আল্লাহর জন্য করার ছিল, বরকত এবং ছওয়াব পৌছা উদ্দেশ্য ছিল, লোকদেখানোর কারণে সমস্ত আমলে আগুন লেগে গেছে। ছওয়াব কি মিলবে? উল্টো লোকদেখানোর আযাব মাথার উপর আসলো।

এই সমস্ত খারাবী শরীয়ত এবং সুন্নাত থেকে চেহারা ফিরিয়ে নেওয়ার ফলাফল। এর বিপরীত যদি শরীয়তের পদ্ধতি অবলম্বন করা হত তাহলে আরাম হত। এত কষ্ট উঠাতে হত না। ইখলাসের সহিত ও আল্লাহর জন্য হত। যার বদলে পাঠক ছওয়াব পেত। মৃত ব্যক্তির কাছেও ছওয়াব পৌছত। লোক দেখানো মারাত্মক গোনাহও মাথায় নিতে হত না।

ঈসালে ছওয়াবে সঠিক পদ্ধতি

ঈসালে ছওয়াবের সঠিক পদ্ধতি এই যে, মৌখিক এবং শারীরিক ইবাদতের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ ঘরে একাকীভাবে যে ইবাদত করে, নফল নামায পড়ে, নফল রোজা রাখে, তাসবীহ আদায় করে, তেলাওয়াত করে, নফল হজ্ব বা উমরা করে, তাওয়াফ করে এগুলোতে শুধু এই নিয়্যাত করে নিবে যে, এর ছওয়াবটুকু আমাদের অমুক দোস্তের কাছে পৌঁছুক। তা পৌঁছে যাবে। এটাই হচ্ছে ঈসালে সওয়াব। যে ছওয়াবটুকু তোমার নিজের পাবার কথা তা তোমার জন্য অর্জিত হয়ে যাবে এবং যে সমস্ত লোকদের নিয়্যাত করা হয়েছে তারাও এর পুরো ছওয়াব পেয়ে যাবে।[36]

ইবনু যুবাইর (র) মাসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, আবদুল্লাহ ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা – আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর হুজরার পাশে বসে আছেন। আর কিছু লোক মসজিদে সালাতুদ্দোহা আদায় করছে। আমরা তাকে এদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা বিদ‘আত।[37]শাইখ মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহ্ইয়া ইবন শরফ নববী রাহ. বলেন, তারা ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যারা মসজিদে সালাতুদদ্বোহা আদায় করছিল তাদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছিল, তিনি বললেন বিদ‘আত। এটা ক্বাযী[38] এবং অন্যান্যরা এর অর্থ নিয়েছেন, তার উদ্দেশ্য হলো সালাতকে মসজিদে প্রকাশ করা এবং এর জন্য সমবেত হওয়াটাই হচ্ছে বিদ‘আত। মূল সালাতুদদ্বোহা বিদ‘আত নয়। সালাত অধ্যায়ে মাসআলাটির আলোচনা হয়েছে।[39]

ইমাম মুহাম্মদ ইবন শিহাব আল-কুরদুরী আল-হানাফী রাহ.[40] যিনি ইবনে বায্যার নামে পরিচিত, তিনি বলেন, ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত যে, তিনি শুনতে পান একদল লোক মসজিদে সমবেত হয়ে উচ্চস্বরে তাহলীল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ পড়ছে। অতএব তিনি তাদের কাছে গেলেন এবং বললেন, আমরাতো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এমনটি পাইনি। আমিতো তোমাদেরকে বিদ‘আতি ছাড়া কিছু দেখছি না। তিনি একথা বলতে বলতে তাদেরকে মসজিদ হতে বের করে দেন।[41]

তিনি আরেক জায়গায় বলেন, আর মৃত্যুর প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিন, সাপ্তাহ পর এবং অনুষ্ঠানে খাবারের আয়োজন করা, বিভিন্ন মৌসুমে কবরে খাবার নিয়ে যাওয়া, কুরআন পড়ার জন্য দাওয়াতের আয়োজন করা এবং সৎ লোক ও ক্বারীদেরকে খতমের জন্য বা সূরা আন‘আম অথবা সূরা ইখলাস পড়ার জন্য সমবেত করা মাকরূহ।

মোটকথা, কুরআন পড়ার সময় খাওয়ার জন্য দাওয়াতের আয়োজন করা মাকরূহ।[42]

ফক্বীহ মুহাম্মদ জাফর[43]….সিন্দি বলেন, সাইরাফিয়্যাহ কিতাবে[44] ‘‘কঠিন বিষয় এবং অসুবিধার কারণে কুরআন পড়া মাকরূহ’’। (এবং এক পৃষ্ঠা পর) মুফিদুল মুস্তাফিদ কিতাবে এসেছে, ‘‘দলবদ্ধ হয়ে বৈঠকে কুরআন পড়া মাকরূহ, কেননা এতে শ্রবণ করা এবং চুপ থেকে শোনা পরিত্যাগ করা হয় অথচ এ দুটি বিষয় নির্দেশিত।’’ কেউ কেউ বলেন, ‘‘এতে অসুবিধা নেই’’। ‘মুহিত’[45] কিতাবের উদ্ধৃতিতে ‘তাতারখানিয়া’[46] কিতাবে রয়েছে, ‘‘মাশায়েখের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, নিশ্চয় দলবদ্ধ হয়ে উচ্চস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করা যাকে বলা হয় ‘সীপারা পড়া’ তা মাকরূহ। (আরো বলেন) আইনুল ইলমে রয়েছে, তিন দিনের কমে খতম করবে না ’’। (আরো এক পৃষ্ঠা পর), ‘‘মুফিদুল মুসতাফিদে নেসাব[47] থেকে বলা হয়েছে, সমাবেশস্থলে কুরআন পড়া মাকরূহ, কেননা পাঠক তা দুনিয়ার লোভে পড়ছে। এভাবে বাজারে পড়া মাকরূহ। কবরের কাছে পড়াকেও এভাবে মাকরূহ বলা হয়েছে। যদি পড়ে কিন্তু (কারো কাছে কিছু) না চায়, আর মানুষ তাকে চাওয়া ব্যতীতই দান করে তবে তাও মাকরূহ বলেছেন, কেননা চাওয়ার ইচ্ছা না থাকলে সে কেন ঘরে বসে পড়ছে না’’।[48]

আল্লামা ইবনে আবেদিন[49] রাহ. বলেন, (পরিশিষ্ট) মুসান্নিফ[50] তার কথা ‘‘একা একা’’ বলে তিনি সেদিকে ইঙ্গিত করেন যা একটু পরে তিনি তার মতনে (বইয়ের মূল অংশে) এই বলে উল্লেখ করেন, ‘‘আর এই রাতগুলো জাগ্রত থেকে কাটানোর জন্য মসজিদে সমবেত হওয়া মাকরূহ’’ পুরো আলোচনা তার ব্যখ্যাগ্রন্থে রয়েছে। আল-হাবীল ক্বুদসীতে[51] তা মাকরূহ বলে স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, ‘‘এই রাতগুলোতে যে সালাতের কথার বর্ণনা রয়েছে তা একা একা পড়তে হবে, একমাত্র তারাবীহ ব্যতীত’’।

আল-বাহরে[52] বলেন, ‘‘এথেকে জানা যায় যে, সালাতুর রাগাইব যা রজবের প্রথম জুমুআয় পড়া হয়, এর জন্য সমবেত হওয়া মাকরূহ এবং এটি বিদ‘আত। এটাকে নফল ও মাকরূহ থেকে বের করার জন্য রোমবাসীরা এই সালাতের মান্নতের যে হীলা অবলম্বন করে তা বাতিল’’।

আমি বলি (ইবনে আবেদীন) বায্যাযিয়ায় তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে, যেমন ব্যাখ্যাকার অধ্যায়ের শেষে উল্লেখ করবেন। আল-মুনইয়াহ এর দুই ব্যাখ্যাকার[53] এর উপর দীর্ঘ আলোচনা করেছেন এবং তারা উভয়ে স্পষ্ঠভাবে বলেছেন যে, ‘‘এ ব্যাপারে যা বর্ণনা করা হয় সব বাতিল মনগড়া। আল্লামা নুরুদ্দীন মাক্বদিসীর[54] এ বিষয়ে একটি সুন্দর রচনা রয়েছে তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘রাদ্উর রাগিব আন সালাতির রাগাইব’ তিনি এখানে চার মাযহাবের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আলেমেদের কথার অধিকাংশ সংকলন করেছেন।[55]

وقال في موضع آخر: ويكره اتخاذ الضيافة من الطعام من أهل الميت لأنه شرع في السرور لا في الشرور وهي بدعة مستقبحة

وروى الإمام أحمد وابن ماجه بإسناد صحيح عن جرير بن عبد الله قال كنا نعد الاجتماع إلى أهل الميت وصنعهم الطعام من النياحة اهـ وفي البزازية ويكره اتخاذ الطعام في اليوم الأول والثالث وبعد الأسبوع ونقل الطعام إلى القبر في المواسم واتخاذ الدعوة لقراءة القرآن وجمع الصلحاء والقراء للختم أو لقراءة سورة الأنعام أو الإخلاص والحاصل أن اتخاذ الطعام عند قراءة القرآن لأجل الأكل يكره وفيها من كتاب الاستحسان وإن اتخذطعاما للفقراء كان حسنا اه وأطال في ذلك المعراج وقال وهذه الأفعال كلها للسمعة والرياء فيحترز عنها لأنهم لا يريدون بها وجه الله تعالى اهـ (رد المحتار:ج:2ص:240)

(এবং তিনি আরেক জায়গায় বলেন, আর মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে যিয়াফত খাবারের আয়োজন করা মাকরূহ। কেননা তা আনন্দের বেলায় শরীয়ত সম্মত, অনিষ্টতার বেলায় নয়। আর এটা মন্দ বিদ‘আত। ইমাম আহমদ এবং ইবনে মাজাহ বিশুদ্ধ সনদে জারীর ইবন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন,[56] জারীর বলেন, ‘‘মৃত ব্যক্তির পরিবারের নিকট সমবেত হওয়া এবং তারা খাবারের আয়োজন করাকে আমরা নিয়াহাহ (বিলাপ) গণ্য করতাম’’। বায্যাযিয়ায় রয়েছে, ‘‘আর মৃত্যুর প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিন, সপ্তাহ পর এবং অনুষ্ঠানে খাবারের আয়োজন করা, বিভিন্ন মৌসুমে কবরে খাবার নিয়ে যাওয়া, কুরআন পড়ার জন্য দাওয়াতের আয়োজন করা এবং সৎ লোক ও ক্বারীদেরকে খতমের জন্য বা সূরা আন‘আম অথবা সূরা ইখলাস পড়ার জন্য সমবেত করা মাকরূহ। মোটকথা, কুরআন পড়ার সময় খাওয়ার জন্য দাওয়াতের আয়োজন করা মাকরূহ’’ এবং উক্ত কিতাবের ইসতেহসান অধ্যায়ে রয়েছে, ‘‘যদি দরিদ্র মানুষের জন্য খাবারের আয়োজন করে তবে ভাল’’। আর মি‘রাজে[57] এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন, ‘‘এই সবগুলো হচ্ছে লোক দেখানো ও লোক শুনানো। তাই এ সব থেকে বিরত থাকবে, কেননা তারা এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে না’’।)[58]

وقال في موضع آخر: وقد أطنب في رده صاحب تبيين المحارم مستندا إلى النقول الصريحة فمن جملة كلامه قال تاج الشريعة في شرح الهداية إن القرآن بالأجرة لا يستحق الثواب لا للميت ولا للقارىء وقال العيني في شرح الهداية ويمنع القارىء للدنيا والآخذ والمعطي آثمان فالحاصل أن ما شاع في زماننا من قراءة الأجزاء بالأجرة لا يجوز لأن فيه الأمر بالقراءة وإعطاء الثواب للآمر والقراءة لأجل المال فإذا لم يكن للقارىء ثواب لعدم النية الصحيحة فأين يصل الثواب إلى المستأجر ولولا الأجرة ما قرأ أحد لأحد في هذا الزمان بل جعلوا القرآن العظيم مكسبا ووسيلة إلى جمع الدنيا إنا لله وإنا إليه راجعون (وبعد أسطر) كما صرح به في التاتارخانية حيث قال لا معنى لهذه الوصية ولصلة القارىء بقراءته لأن هذا بمنزلة الأجرة والإجارة في ذلك باطلة وهي بدعة ولم يفعلها أحد من الخلفاء (رد المحتار:ج:6ص:56)

(এবং তিনি আরেক জায়গায় বলেন, তাবয়িনুল-মাহারিমের লিখক[59] স্পষ্ট উদ্ধৃতির মাধ্যমে এসব প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে অনেক দীর্ঘ আলোচনা করেন। তার বক্তব্যের মধ্য থেকে রয়েছে,‘‘তাজুশ্-শরীয়াহ বলেন,[60] পারিশ্রামিকের মাধ্যমে কুরআন পড়া ছওয়াবের উপযুক্ত হয় না, না মৃতব্যক্তির জন্য, না পাঠকের জন্য’’। হেদায়ার ব্যখ্যাগ্রন্থে আইনি[61] লিখেন, ‘‘দুনিয়ার জন্য কুরআন পাঠককে বাধা দেওয়া হবে, দাতা, গ্রহিতা উভয়ে গোনাহগার হবে’’। মোটকথা, আমাদের যুগে পারিশ্রমিকের মাধ্যমে কুরআনের অংশ পড়ার যে প্রচলন বিস্তার লাভ করেছে তা জায়েয নেই, কেননা এখানে পড়ার নির্দেশ এবং ছওয়াব নির্দেশদাতাকে দেওয়া রয়েছে, আর পড়া হচ্ছে অর্থের কারণে। অতএব বিশুদ্ধ নিয়্যাত না থাকার কারণে পাঠকই যখন ছওয়াব পাচ্ছে না তাহলে কী-ভাবে পাঠক নিয়োগকারীর কাছে ছওয়াব পৌছবে। যদি পারিশ্রমিক না থাকত তবে আজকাল কেউ কারো জন্য পড়ত না। বরং কুরআনকে তারা উপার্জনের বস্তু ও দুনিয়া সংগ্রহের মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছে। ইন্না লিল্লাহি ও ইন্না ইলাইহি রাজি‘ঊন। (কয়েক লাইন পর) যেমন তাতারখানিয়ায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে বলেন, ‘‘এই (খতমের) অসিয়্যাতের এবং পড়ার কারণে পাঠককে দানের অসিয়্যাতের কোনো অর্থ নেই। কেননা এটা ভাড়া করার ন্যায়, আর এসবের বেলায় ভাড়া করা বাতিল এবং তা বিদ‘আত। খুলাফাদের মধ্যে কেউই এমন কর্ম করেননি।)[62]

10- وقال ايضا: ونقل العلامة الحلواني في حاشية المنتهى الحنبلي عن شيخ الإسلام تقي الدين ما نصه ولا يصح الاستئجار على القراءة وإهداؤها إلى الميت لأنه لم ينقل عن أحد من الأئمة الإذن في ذلك وقد قال العلماء إن القارىء إذا قرأ لأجل المال فلا ثواب له فأي شيء يهديه إلى الميت وإنما يصل إلى الميت العمل الصالح والاستئجار على مجرد التلاوة لم يقل به أحد من الأئمة (وبعد اسطر) وحينئذ فقد ظهر لك بطلان ما أكب عليه أهل العصر من الوصية بالختمات والتهاليل مع قطع النظر عما يحصل فيها من المنكرات التي لاينكرها إلا من طمست بصيرته وقد جمعت فيها رسالة سميتها (شفاء العليل وبل الغليل في حكم الوصية بالختمات والتهاليل) ) رد المحتار: ج:6ص:57)

(তিনি আরো বলেন, আল্লামা হুলওয়ানী ‘আল-মুনতাহাল হান্বলী’[63] এর টিকায় শায়খুল ইসলাম তাক্বী উদ্দীন থেকে বর্ণনা করেন যার ভাষ্য হলো, ‘‘পড়ার জন্য পারিশ্রমিকের উপর নিয়োগ দেওয়া এবং এর ছওয়াব মৃতব্যক্তিকে পাঠানো শুদ্ধ নয়, কেননা কোনো ইমাম থেকে এর অনুমোদন পাওয়া যায় না। বরং আলেমগণ বলেন, নিশ্চয় ক্বারী যখন সম্পদের কারণে পড়বে তখন তার কোনো ছওয়াব নেই, অতএব সে মৃতব্যক্তির কাছে কি জিনিস পাঠাবে, মৃত ব্যক্তির কাছে কেবল সৎকর্মই পৌঁছে। আর শুধুমাত্র তেলাওয়াতের উপর পারিশ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা কোনো ইমাম বলেননি’’।

(কয়েক লাইন পর) অতএব, এখন তোমার কাছে খতম এবং তাহালিলের অসিয়্যাত, যে দিকে মানুষ ঝুঁকেছে তার অন্যান্য খারাবীর দিকে দৃষ্টি দেওয়া ছাড়াই তা বাতিল হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল। দৃষ্টিশক্তি লোপ করা হয়েছে এমন ব্যক্তি ছাড়া যার খারাবী কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আমি এতে একটি পুস্তিকা সংকলন করেছি যার নাম দিয়েছি ‘শিফাউল-আলীল ও বাল্লু-গালীল ফি হুকমিল-অসিয়্যাতে বিল-খাতামাতে ওয়াত্তাহালীল’[64]

এসমস্ত বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত কুরআন খতম বিদ‘আত এবং না-জায়েয। কুরআন, হাদীস এবং কল্যাণের সাক্ষ্যপ্রাপ্ত যুগে এর কোনো প্রমাণ নেই। এতে অংশ নেওয়া জায়েয নয়। এছাড়া প্রচলিত খতমে কুরআনে আরো অসংখ্য খারাবী রয়েছে যার কিছু নিম্নে তুলে ধরছি:

  1. ঘোষণা এবং বলপূর্বক এতে লোকজনদের সমবেত করা হয়, যাকে শরীয়তের পরিভাষায় ‘‘তাদাঈ’’ (ডাকাডাকি) বলা হয় যা নফল ইবাদতে নিষিদ্ধ। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সামনে কিছু মানুষ সালাতুদ্দ্বোহা জামাতের আকারে পড়ছিল, যখন তার কাছে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো তিনি তাদের আমলকে বিদ‘আত আখ্যা দিলেন। অথচ সালাতুদ্দ্বোহা একাকি পড়া প্রমাণিত। এভাবে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এক গোত্রের ব্যাপারে শুনলেন, তারা উচ্চস্বরে তাহলিল এবং দুরূদ পড়ছে, তখন তিনি তাদেরকে বিদ‘আতি বলে মসজিদ থেকে বের করে দিলেন। অথচ একাকি তাসবীহ, তাহলীল এবং দুরূদ পড়া পূণ্য ও ছওয়াবের কাজ।
  2. ডাকার পর যদি কিছু মানুষ কুরআন খতমে না আসে তাহলে তাকে বিভিন্নভাবে তিরস্কার করা হয়। অথচ মুস্তাহাব কাজ ছাড়ার উপর তিরস্কার জায়েয নেই।
  3. অনুপস্থিতদের ব্যাপারে মনে বিদ্বেষ, ঘৃণা, ক্রোধ বদ্ধমূল করা হয়।
  4. কুরআন খতমের আয়োজকরা বেশি লোকের উপস্থিতিতে গর্ব করে।
  5. প্রচলিত কুরআন খতম এত জরুরী মনে করা হয় যে, যদি কোনো মানুষ কুরআন খতম না করায় অথবা তার খতমের আয়োজনে মানুষ কম হয় তবে সে সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
  6. পুরো কুরআন খতম জরুরী মনে করা হয়, অথচ শরীয়তে বরকত এবং ছওয়াবের জন্য কোনো পরিমাণ নির্দিষ্ট নেই। কুরআন তেলাওয়াত ছাড়া যিকর আযকার, তাসবীহাত, নফল এবং সাদাকাত ইত্যাদি অন্যান্য পদ্ধতিতেও এই উদ্দেশ্য অর্জন হয়।
  7. যদি পড়ার জন্য মানুষ কম জমা হয় তখন তার পুরো কুরআন খতমকে নিজের উপর চাপ এবং বিষের ঢোক মনে করে যে কোনভাবে তা গলা থেকে সরানোর চেষ্টা করা হয়। অথচ হাদীসে বর্ণিত হচ্ছে,

(اقرؤوا القرآن ما ائتلفت قلوبكم فإذا اختلفتم فقوموا عنه) (صحيحبخاري:ج:2ص:757)

অর্থাৎ (ঐ সময় পর্যন্ত কুরআন পড় যতক্ষন মনে বিরক্তিবোধ না হয় এবং যখন ক্লান্ত হয়ে পড় তখন ছেড়ে দাও)[65]

৮. এই অবস্থায় তাজবীদের নিয়ম কানুন, হুরূফের সিফাতের বিশুদ্ধ আদায়, গুন্নাহ, ইখফা, ইজহার এবং মদসমূহের প্রতি খেয়াল করা ব্যতীত শব্দ ও অক্ষর কেটে প্রাণ পরিত্রাণের চেষ্টা করা হয়।

  • প্রচলিত কুরআন খতমে এমন লোক আসে যে কুরআন পড়া জানে না। তখন সে কুরআন হাতে নিয়ে প্রত্যেক লাইনে বিসমিল্লাহ পড়ে অথবা শুধু আঙ্গুল ফিরিয়ে পারা রাখা দেয়। একে আঙ্গুল এবং বিসমিল্লাহ খতম বলা হয়, শরীয়তে যার কোনো প্রমাণ নেই। বরং এতে কুরআনের অবমাননা।
  • খতমের শেষ পর্যন্ত বসাকে জরুরী মনে করা হয়। তাই কোনো ব্যক্তি নিজের পারা শেষ করে কঠিন প্রয়োজন সত্বেও উঠার সাহস করে না। কেননা এটাকে অত্যন্ত দোষনীয় মনে করা হয়।
  • কোনো কোনো মানুষের তেলাওয়াতে সেজদার জ্ঞান থাকে না, ফলে সে সেজদার আয়াত পড়ে এবং শোনে তেলাওয়াতে সেজদা না করার কারণে নেকীর পরিবর্তে ওয়াজিব ছাড়ার গোনাহ নিজের মাথায় বহন করে।
  • কোনো কোনো জায়গায় কুরআন খতমের আয়োজক সবার পক্ষ থেকে চৌদ্দ সাজদা আদায় করে নেয়। এতে পাঠকদের দায়িত্ব আদায় হয় না এবং শরীয়ত বিরোধী কাজের কারণে সাজদাকারী গোনাহগার হয়।
  • প্রচলিত কুরআন খতমে মিঠাইর ব্যবস্থা করা হয়। ‘‘প্রচলিত নিয়ম শর্তের ন্যায়’’ মূলনীতির আলোকে এটা পাঠকদের পারিশ্রমিক, আর কুরআন পড়ার পারিশ্রমিকের দাতা, গ্রহিতা উভয় গোনাহগার। তাহলে এখানে নেকীর কী প্রত্যাশা করা যায়? আর যেখানে পাঠকের নিজের ছওয়াব হচ্ছে না, সেখানে মৃত ব্যক্তির জন্য তার ঈসাল কিভাবে হতে পারে ?
  • দাওয়াত বা মিঠাইকে এমন জরুরী করে রাখা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি এর ব্যবস্থা করে না তার উপর অভিশাপ ও তিরস্কারের ঝুড়ি পড়ে।
  • প্রচলিত কুরআন খতমের জন্য তিনদিনা, চল্লিশা ইত্যাদি বিশেষ দিন নির্দিষ্ট করা হয়। আর অনির্দিষ্ট ইবাদতের জন্য নিজের পক্ষ থেকে দিন নির্দিষ্ট করা মাকরূহ, না-জায়েয বরং বিদ‘আত।
  • জারীর ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

” كنا نعد الاجتماع إلى أهل الميت وصنعهم الطعام من النياحة “.

‘‘মৃতব্যক্তির পরিবারে সমবেত হওয়া এবং তারা খাবারের আয়োজন করাকে আমরা ‘নাওহা’[66] (বিলাপ) গণ্য করতাম’’ আর বিলাপ করা হারাম।

  • প্রচলিত কুরআন খতমে অংশগ্রহণকারী এবং যিনি অংশগ্রহণ করান সবার উদ্দেশ্য থাকে লোক দেখানো। লোকদেখানোর কারণে মানুষের বড় বড় আমল নষ্ট হয়ে যায়।

হাদীসে রয়েছে লোক দেখানো আমলকারীর আমল এমন ধ্বংস হয় যেমন আগুন লাকড়ি খেয়ে ফেলে[67] এবং আল্লাহর কাছে এমন আমল প্রত্যাখ্যাত। অতএব যে আমলটি আল্লাহর জন্য করার ছিল, বরকত এবং ছওয়াব পৌছা উদ্দেশ্য ছিল, লোকদেখানোর কারণে সমস্ত আমলে আগুন লেগে গেছে। ছওয়াব কি মিলবে? উল্টো লোকদেখানোর আযাব মাথার উপর আসলো।

এই সমস্ত খারাবী শরীয়ত এবং সুন্নাত থেকে চেহারা ফিরিয়ে নেওয়ার ফলাফল। এর বিপরীত যদি শরীয়তের পদ্ধতি অবলম্বন করা হত তাহলে আরাম হত। এত কষ্ট উঠাতে হত না। ইখলাসের সহিত ও আল্লাহর জন্য হত। যার বদলে পাঠক ছওয়াব পেত। মৃত ব্যক্তির কাছেও ছওয়াব পৌছত। লোক দেখানো মারাত্মক গোনাহও মাথায় নিতে হত না।

ঈসালে ছওয়াবে সঠিক পদ্ধতি

    ঈসালে ছওয়াবের সঠিক পদ্ধতি এই যে, মৌখিক এবং শারীরিক ইবাদতের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ ঘরে একাকীভাবে যে ইবাদত করে, নফল নামায পড়ে, নফল রোজা রাখে, তাসবীহ আদায় করে, তেলাওয়াত করে, নফল হজ্ব বা উমরা করে, তাওয়াফ করে এগুলোতে শুধু এই নিয়্যাত করে নিবে যে, এর ছওয়াবটুকু আমাদের অমুক দোস্তের কাছে পৌঁছুক। তা পৌঁছে যাবে। এটাই হচ্ছে ঈসালে সওয়াব। যে ছওয়াবটুকু তোমার নিজের পাবার কথা তা তোমার জন্য অর্জিত হয়ে যাবে এবং যে সমস্ত লোকদের নিয়্যাত করা হয়েছে তারাও এর পুরো ছওয়াব পেয়ে যাবে।[68]

আর্থিক সাদাকা খায়রাতের সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো, নিজের সামর্থানুযায়ী নগদ অর্থ কোনো কল্যাণমূলক কাজে লাগিয়ে দিবে অথবা কোনো মিসকিনকে দিয়ে দিবে।

এই পদ্ধতি এ জন্য উত্তম যে, এতে মিসকিন নিজের প্রয়োজন পুরা করতে পারে। যদি আজ তার কোনো প্রয়োজন না হয় তবে কালকের জন্য রাখতে পারে। তা ছাড়া এই ব্যবস্থাটি লোকদেখানো হতে মুক্ত। হাদীসে গোপনে সাদাকাকারীর এই ফযিলত বর্ণিত হয়েছে যে, এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ কিয়ামত দিবসে নিজের রহমতের ছায়ায় জায়গা দিবেন, যখন আর কোনো ছায়া থাকবে না এবং গরমের কারণে মানুষ ঘামে ডুবে যাবে।

ফযিলতের দিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির সাদাকা হচ্ছে, মিসকিনের প্রয়োজন অনুসারে তাকে সাদাকা করবে। অর্থাৎ প্রয়োজন দেখে তা পুরা করবে।

ঘর ও দোকানের বরকতের জন্যও মালিক নিজে উপরোক্ত ব্যবস্থাগুলো অবলম্বন করবে।

والله سبحانه وتعالى أعلم

১৪ রবিউল আওয়াল ১৪১৭ হিজরী।

পাঠক, এই হলো উনার বক্তব্য। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, উনার লেখায় অসংখ্য কিতাব ও ফকীহের বক্তব্য ও তথ্য রয়েছে। এই লেখা পড়ার পর আশা করি সত্যসন্ধানী আলেমের জন্য বিষয়টি বুঝতে কোনো সমস্যা পেতে হবে না। একমাত্র পেটপূজারী আলেম ছাড়া কেউই হিলার বাহানা তালাশ করে উনার লিখার বিরুদ্ধে কলম ধরবেন না। শরীয়তে বৈধ বা হালাল থাকা এক কথা, আর বৈধ বানানো আরেক কথা। কুরআন হাদীসে কোনো জিনিসের বৈধতা থাকা এক কথা, কুরআন হাদীস দিয়ে বৈধ বানানো আরেক কথা। তবে প্রথমটি আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আলেমদের গুণ। আর দ্বিতীয়টি গুমরাহ পেটপূজারী আলেমদের গুণ। বিষয়টি সহজে বোঝার জন্য একটি উপমা পেশ করছি। যেমন ধরুন, রাসূল আলিমুল গাইব নন বিষয়টি কুরআন ও হাদীসে দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যিনি বলছেন রাসূল আলিমুল গাইব নন, তার দলীল কুরআন ও হাদীসের একাধিক জায়গায় রয়েছে। পক্ষান্তরে যে আলেম দাবী করছেন রাসূল আলিমুল গাইব, তিনি কুরআন হাদীস থেকেই তার মতের স্বপক্ষে দলীল দিচ্ছেন। তবে তার দাবীর পক্ষে কোনো দলীল কুরআন বা হাদীসে নেই। তিনি কিছু দ্ব্যর্থবোধক আয়াত ও হাদীসকে তার মতের পক্ষে দলীল বানাচ্ছেন। এই দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যের আলেম ছাড়া কেউই প্রচলিত খতমে কুরআনের স্বপক্ষে ওকালতি করতে পারেন না, কেননা এসবের অস্তিত্ব কুরআন, হাদীস, সাহাবা জীবনে নেই, এমনকি খাইরুল কুরুন তথা সোনালী প্রজন্ম (রাসূল, সাহাবা ও তাবে‘ঈ) এর কোনো যুগেও এর অস্তিত্ব খোঁজে পাবেন না।

প্রচলিত খতমের অস্তিত্ব খাইরুল কুরুনে না থাকায় বিষয়টি বিদ‘আত হওয়ার সাথে সাথে লেখক আরো অনেক খারাবী তুলে ধরেছেন, যা উনার অভিজ্ঞতার আলোকে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে উল্লেখিত কারণ ছাড়াও আরো যে সমস্ত খারাবী রয়েছে তার কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরছি। এই অভিজ্ঞতা সবার নাও থাকতে পারে। আমি অধমের কাছে যে বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়েছে তার কয়েকটি উল্লেখ করব।

  1. পরস্পর হিংসা বিদ্বেষ সৃষ্টি। মনের হিংসার জ্বালা প্রকাশ্যে রুপ নিতে অনেকের বেলায় দেখা গেছে। যেমন, একজন কোথাও দশজন নিয়ে যাওয়ার কথা। বাস্তবতা হলো, দশজন হলে এক প্রতিষ্ঠানের সবাইকে খতমের তালিকায় রাখা সম্ভব নয়। এ থেকেই হিংসা ও সমালোচনার সুত্রপাত। যা খতমের দু একদিন পর্যন্ত বা আরো বেশি চলতে থাকে।
  2. অন্যের মনে জ্বালা সৃষ্টির জন্য অযথা ঠাট্টাস্বরূপ খতমের কথা বলা। অথচ হাদীসের দৃষ্টিতে মিথ্যা বলা কাজে হোক বা ঠাট্টায় হোক সর্বাবস্থায় হারাম। সাধারণ নিমণ শ্রেণির উস্তাদ নয় বরং অনেক শ্রদ্ধাভাজন আলেম যারা দাওরায়ে হাদীসে পড়ান তাদের অনেকের কাছ থেকেও এ সব আচরণ পাওয়া যায়, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক।
  3. মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া। যেমন অনেক সময় খতম না করেই খতমের আয়োজককে মিথ্যা বলা।
  4. কুরআনের সাথে ব্যবসায়িক পণ্যের মত লেনদেনের আচরণ করা এবং কুরআন নিয়ে বেয়াদবীমূলক কথা বলা। যেমন, অহরহ একথা বলতে শুনা গেছে, সিলেটি ভাষায় ‘যেলা পয়সা ওলা খতম’ অর্থাৎ টাকা হিসেবে খতমের মান নির্ণয় করা হয়। অনেককে আগেই ‘কয়টেকি খতম’ অর্থাৎ কত টাকার খতম, একথা বলতে শুনা যায়। এভাবে টাকার উপর কুরআন পড়ার মান নির্ণয় করা কুরআনের সাথে কতটুকু বেয়াদবী? তা পাঠক নিজেই বলুন। অসতর্কতায় আমার মুখ থেকেও দু-একদিন এমন কথা বের হয়েছে। আল্লাহর কাছে তওবা করেছি। আবারো করছি, তিনি যেন আমাকে মাফ করেন।
  5. কুরআন সামনে নিয়ে হাসি, তামাশা, গল্পগুজবের মধ্য দিয়ে তেলাওয়াত করা। আয়োজক সামনে থাকলে তার ভয়ে একটু মনোযোগ দিয়ে পড়া। এ থেকে স্পষ্ট যে, টাকাই প্রচলিত খতমের মূল টার্গেট।
  6. টাকাই যে মূল টার্গেট তা সবার মনে জানা রয়েছে। সবার আচরণে একথা স্পষ্ট। মূল টার্গেট টাকা থাকাবস্থায় আল্লাহর কাছে এসব খতমের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, আলেম বলতেই একথা জানেন। একথা জানা থাকা সত্বেও নিজের পেট পালার তাগিদে দীন সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তির অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাকে ধোঁকা দেয়া। তাকে রাসূলের শিক্ষার আদেশ না দিয়ে খতমের কথা বলা, অথবা নিজ থেকে না বললেও তাকে তার অজ্ঞতার উপর রাখা। সঠিক সুন্নাতের দিশা না দেওয়া। অথচ সঠিক ইলম প্রকাশের সুযোগ থাকা সত্বে তা গোপন রাখা অবৈধ। হাদীসে এর উপর ধমকি এসেছে।

এছাড়া সমাজিকভাবে আরো অনেক বিষয় রয়েছে যা আলেমদের জন্য লজ্জাজনক ও তাদের মান সম্মানে আঘাত, এই খতমকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে।

আহসানুল ফাতওয়ার লিখাটি অনুবাদ করার পর এ বিষয়ে নিজ থেকে কিছু লিখার প্রয়োজন ছিল না। যা নিজেই পূর্বে উল্লেখ করেছি, তথাপি দু-একটি কথা না লিখে পারলাম না। আল্লাহ প্রথমে আমাকে এবং আমাদের সবাইকে হেদায়াতের উপর পরিচালিত করুন। সহীহ সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনার তওফীক দান করুন। আমীন।


[1] সহীহুল বুখারী, কুরআনের ফযিলত সমূহ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম যে নিজে কুরআন শিখে এবং অপরকে শিখায়, নং:৪৭৩৯।

[2] সহীহুল বুখারী, কুরআনের ফযিলতসমূহ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: সব কালামের উপর কুরআনের শ্রেষ্টত্ব, নং:৪৭৩৯, সহীহ মুসলিম, কুরআনের ফযিলতসমূহ অধ্যায়, হাফিজে কুরআনের মর্যাদা অনুচ্ছেদ, নং:১৮৯৬।

[3] সুনানুত তিরমিযি, হাদীস সহীহ, কুরআনের ফযিলত সমূহ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: যে কুরআনের একটি অক্ষর পড়ল তার কতটুকু ছওয়াব রয়েছে, নং: ২৯১০।

[4] সহীহুল বুখারী, উমরা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার উমরা করেছেন।

[5] সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: উমরা, অনুচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উমরার সংখ্যার বর্ণনা।

[6] কাযী আয়ায, মালেকি মাযহাবের প্রখ্যাত আলেম মুহাদ্দীস, ফকীহ, আদীব, ঐতিহাসিক, একাধিক কিতাবের রচয়িতা। ৪৭৩-৫৪৪ হিজরী।

[7] ইমাম নববীর মুসলিমের ব্যখ্যগ্রন্থ, প্রাগুক্ত অধ্যায়। কিতাবুস-সালাত, (باب استحباب صلاة الضحى وأن أقلها ركعتانএর অধীনে আলোচনা সালাতুদ দ্বোহার আলোচনা করেছেন।

[8] ফাতওয়া বায্যাযিয়ার মুসান্নিফ, ইমাম মুহাম্মদ ইবন মুহাম্মদ ইবন শিহাব, ইবনে বায্যার আলকুরদুরী আল-হানাফী। মৃত্যু: ৮২৭ হিজরী।

[9] বায্যাযিয়া, হিন্দিয়ার টিকা, ৬/৩৭৮ (লেখকের দেওয়া তথ্য সুত্র মোতাবেক)।

[10] বায্যাযিয়া, হিন্দিয়ার টিকা, ৪/৮১ (লেখকের দেওয়া সুত্রে)

[11] মুহাম্মদ জা‘ফর ইবন আব্দুল করীম আল-বুবাকানী আস-সিন্দি আল-হানাফী। তার লিখিত কিতাব, ‘আল-মাতানাহ ফিল-মারাম্মাতে আনিল খিযানাহ’।

[12] আল-ফাতাওয়া আস-সাইরাফিয়্যাহ। লিখক, হানাফী ফক্বীহ আসআদ ইবন ইউসুফ ইবন আলী মাজ্দুদ্দীন আস-সাইরাফী আল-বুখারী। মৃত:১০৮৮ হিজরী। (আল-আ‘লাম, ১/৩০২)

[13] দেখুন, বুরহানুদ্দীন ইবনু মাযাহ (৬১৬ হি.) রচিত কিতাব ‘আল-মুহিত্বুল বুরহানী, পৃষ্টা:১৪৪, খ-:৫।

[14] ফিকহে হানাফী নিয়ে রচিত কিতাব ‘আল-ফাতাওয়া আত্তাতার খানিয়া’, লিখক, ইবনুল আলা আল-আনসারী আদ-দেহলবী আল-হিন্দি।

[15] ‘আইনুল ইলম’ ‘মুফিদুল মুস্তাফিদ’ ‘কিতাবুন-নেসাব’ ফিক্বহে হানাফীতে রচিত বিভিন্ন কিতাবের নাম।

[16] আল-মাতানাহ ফিল-মারাম্মাতে আনিল খিযানাহ, ৬৩৩,৬৩৪,৬৩৫ (লেখকের দেওয়া সুত্রে)।

[17] বিশিষ্ট হানাফী ফক্বীহ মুহাম্মদ আমীন ইবন উমর ইবন আব্দুল আযীয ইবন আবেদীন। ১১৯৮-১১২৫ হিজরী। দামেশ্কে জন্ম এবং মৃত্যু। যাকে ইমামুল হানাফিয়্যাহ ফিশ্-শাম বলে ভূষিত করা হয়। আল্লামা ইবনে আবেদীন বা আল্লামা শামী নামে তিনি প্রসিদ্ধ। তার কিতাব ‘রাদ্দুল মুহতার‘ যা ফাতওয়া শামী হিসেবে পরিচিত তা ফিকহে হানাফীর মাসাঈলে আলাউদ্দীন হাসকাফী রচিত ‘আদ্দুররুল-মুখতারের’ ব্যাখ্যাগ্রন্থ। (আল-আ‘লাম: ৬/৪২)

[18] মুসান্নিফ আর্থাৎ ‘আদ্দুররুল-মুখতারের’ রচয়িতা মুহাম্মদ ইবন আলী আলাউদ্দীন আল-হাসকাফী। দামেশ্কের একজন হানাফী মুফতী। ১০২৫-১০৮৮ হিজরী। (আল-আ‘লাম: ৬/৪২)

[19] ‘আল-হাবীল ক্বুদসী ফিল ফুরু’ লিখক, কাযী জামাল উদ্দীন আহমদ ইবন মুহাম্মদ আল-গাযনবী আল-হানাফী। (কাশ্ফুয যুনুন:১/৬২৭)

[20] যাইনুদ্দীন ইবনে নুজাইম মিসরী আল-হানাফী ৯২৬-৯৭০ হিজরী রচিত কিতাব ‘আল-বাহরুর রায়িক্ব’। সালাত অধ্যায়। বিতর ও নফল অনুচ্ছেদ, ২/৫৬।

[21] ‘আল-মুনইয়াহ’ অর্থাৎ ‘মুনইয়াতুল মুসাল্লী’, এই কিতাবের দু্ই ব্যাখ্যাকার দ্বারা উদ্দেশ্য সম্ভবত, ‘গুনইয়াতুল মুতামাল্লী’ এবং ‘আল-ক্বুনইয়া’ কিতাবদ্বয়ের রচয়িতা। দুটি কিতাবই ‘মুনইয়াতুল মুসাল্লী’র শরাহ। কিতাব দুটি দুর্লভ ও সম্মুখে না থাকায় এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারিনি। (সংকলক)

[22] ইমাম নুরুদ্দীন আলী ইব্নু গানিম আল-মাক্দিসী আল-হানাফী। মৃত্যু:১০০৪ হিজরী (কাশফুয যুনুন:১/৮৪০)। সালাতুর রাগাইব নামে সালাতের বিদ‘আত সম্পর্কে তার লিখিত কিতাবের নাম, ردع الراغب عن الجمع في صلاة الرغائب

[23] রাদ্দুল মুহ্তার, কিতাবুস সালাত, বিতর ও নফল অধ্যায়, ২/২৬

[24] ইবনে মাজাহ, সনদ সহীহ, মৃত ব্যক্তির পরিবারে সমবেত হওয়া এবং খাবারের আয়োজন করা নিষেধ অনুচ্ছেদ, হাদীস নং ১৬১২, ইবনে মাজাহ এর হাদীসটির শব্দ হলো:

كنا نرى الاجتماع إلى أهل الميت وصنعة الطعام من النياحة

মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং:৬৯০৫, মুসনাদে আহমদের শব্দ:

كُنَّا نَعُدُّ الِاجْتِمَاعَ إِلَى أَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنِيعَةَ الطَّعَامِ بَعْدَ دَفْنِهِ مِنْ النِّيَاحَةِ

[25] সম্ভবত আবুল ক্বাসিম আল-কুশাইরী নাইসাবুরী রচিত ‘কিতাবুল মি‘রাজ’ উদ্দেশ্য।

[26] রাদ্দুল মুহতার, সালাত অধ্যায়, সালাতুল-জানাযা অনুচ্ছেদ, ২/২৪০।

[27] সিনানুদ্দীন ইউসুফ আল-আমাসী আল-হানাফী, আল-মক্কী, মৃত্যু: ১০০০ হিজরীর পাশাপাশি।

[28] আল-ইমাম তাজুশ-শরীয়াহ, আহমদ ইবন উবাইদুল্লাহ আল-মাহবুবী আল-হানাফী উমর ইবন সাদরুশ-শরীয়াহ আল-আওয়াল, মৃত্যু:৬৭২ হিজরী। তার লিখিত হেদায়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘নিহায়াতুল কিফায়াহ ফি দিরায়াতিল হিদায়াহ। (কাশফুয-যুনুন ২/২০২২)

[29] প্রখ্যাত হানাফী মুহাদ্দীস আবু মুহাম্মদ আল্লামা বদরুদ্দীন আল-আইনি। ৭৬২৮৫৫ – হিজরী১৩৬১ – -১৪৫১ ঈসায়ী। তার লিখিত হেদায়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আল-বিনায়াহ’। দেখুন, বর্ণিত কিতাবের কারাহিয়্যাহ অধ্যায়, মাসাঈলু মুতাফার্রিক্বাহ, ১১/২৬৭।

[30] রাদ্দুল-মুহতার, কিতাবুল ইজারাহ, মাতলাবুন ফিল-ইসতিজার আলাত্-ত্বা‘আত, : ৬/৫৬।

[31] ফিক্বহে হাম্বলীতে রচিত কিতাব, মূল নাম ‘মুনতাহাল-ইরাদাত ফিল জাম্‘ঈ বাইনাল মুক্বান্না‘ঈ ওয়াত্-তানক্বীহি ওয়ায্-যিয়দাত’, লেখক, তাক্বীউদ্দীন মুহাম্মদ ইবন আহমদ ইবন আব্দুল আযিয ইবনুন্-নাজ্জার আল-ফুতুহী আল-মিসরী, মৃত্যু: ৯৭২ হিজরী।

[32] রাদ্দুল মুহতার, প্রাগুক্ত অধ্যায়:৬/৫৭।

[33] সহীহুল বুখারী, অধ্যায়: কুরআনের ফযিলত সমূহ, অনুচ্ছে: যতক্ষন মন চায় ততক্ষন কুরআন তেলাওয়াত করা। নং: ৪৭৭৩।

[34] ‘নাওহা’ বা ‘নিয়াহাহ’, অর্থাৎ বিলাপ করে মৃত ব্যক্তির উপর ক্রন্দন করা। ইসলাম পূর্ব জাহেলী যুগে কেউ মারা গেলে বিলাপ করে ক্রন্দনের প্রচলন ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কর্মকে জাহেলী কর্ম আখ্যা দেন এবং তা হারাম ঘোষণা করেন। দেখুন, বুখারী, ‘মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ মাকরূহ অধ্যায়’। সহীহ মুসলিম, নিয়াহার উপর কঠোরতা অধ্যায়। বুখারীর একাধিক অধ্যায়ে এ বিষয় সংক্রান্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

[35] লোকদেখানো আমলকে শরয়ী পরিভাষায় ‘রিয়া’ বলা হয়। কুরআন হাদীস উভয়ের মাধ্যমে ‘রিয়া’ হারাম প্রমাণিত। হাদীসে ‘রিয়া’কে শিরকে আসগর বা ছোট শিরক গণ্য করা হয়েছে। ‘রিয়া’ হারাম বা কবীরা গোনাহের অন্যতম এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে লেখক এখানে হাদীসে রয়েছে বলে যে কথা উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ ‘‘লোক দেখানো আমলকারীর আমল এমন ধ্বংস হয় যেমন আগুন লাকড়ি খেয়ে ফেলে’’ এই মর্মের কোনো হাদীস রয়েছে বলে অবগত হতে পারিনি। (সংকলক)

[36] আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আলেমগণ ঈসালে ছওয়াবের বেলায় দুই ভাগে বিভক্ত। একদল কুরআনের আয়াত,‘‘وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى ’’ অর্থাৎ: আর মানুষের জন্য তার চেষ্টা ব্যতীত কোনো কিছু নেই, (সূরা নাজম:৩৯) এই মর্মের আয়াত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস,

“إذا مات الإنسان انقطع عمله إلا من ثلاث صدقة جارية وعلم ينتفع به وولد صالح يدعو له”

‘‘মানুষ যখন মারা যায় তখন তাঁর তিনটি আমল ব্যতীত সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। সাদাকায়ে জারিয়াহ, যে ইলম দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং নেক সন্তান যে তার জন্য দু‘আ করে।’’ (তিরমিযী, হাদীস সহীহ, ওয়াক্বফ অনুচ্ছেদ, নং:১৩৭৬) এই হাদীসের আলোকে তারা বলেন: হাদীসে উল্লেখিত তিন বস্তু ব্যতীত অন্য কিছুর ঈসাল হয় না। কেননা; হাদীসে তিন বস্তু ছাড়া সব আ‘মাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা এসেছে। আর এ তিনটি মূলত তার নিজের চেষ্টার ফসল। সুতরাং এই হাদীস আর আয়াতে কোনো বিরোধ নেই। তবে সাদাকা যেহেতু শারীরিক ইবাদত নয়, জীবিত ব্যক্তিকে তা দেওয়া যায়, তার পক্ষ থেকে অন্যকে দেওয়া যায়, মৃত্যুর পরও তার পক্ষ থেকে দেওয়া যাবে। কিন্তু শারীরিক ইবাদত কাউকে দেওয়া যায় না তাই তার ঈসাল ও নেই। তবে শারীরিক কিছু ইবাদত যার ঈসাল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত সেগুলো মানসুস হওয়ার কারণে তা এই কায়দা থেকে মুসতাসনা বা ব্যতিক্রম থাকবে। এই দল আলেমদের মতে কুরআন তেলাওয়াত যেহেতু একটি শারীরিক ইবাদত তাই তার ঈসালই হবে না, কেননা এব্যাপারে কোনো নস নেই। আর ইবাদতে বিষয় গাইরে মা‘কুল, তাই আমরা তাকে অন্য ইবাদতের উপর ক্বিয়াস করতে পারি না। আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অপরদল মনে করেন, যে কোনো ইবাদতের ঈসাল হতে পারে। আমাদের লেখক এমতের প্রবক্তা হিসেবে কুরআন তেলাওয়াতের ঈসালের সঠিক পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন।

[37] সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: উমরা, অনুচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উমরার সংখ্যার বর্ণনা।

[38] কাযী আয়ায, মালেকি মাযহাবের প্রখ্যাত আলেম মুহাদ্দীস, ফকীহ, আদীব, ঐতিহাসিক, একাধিক কিতাবের রচয়িতা। ৪৭৩-৫৪৪ হিজরী।

[39] ইমাম নববীর মুসলিমের ব্যখ্যগ্রন্থ, প্রাগুক্ত অধ্যায়। কিতাবুস-সালাত, (باب استحباب صلاة الضحى وأن أقلها ركعتانএর অধীনে আলোচনা সালাতুদ দ্বোহার আলোচনা করেছেন।

[40] ফাতওয়া বায্যাযিয়ার মুসান্নিফ, ইমাম মুহাম্মদ ইবন মুহাম্মদ ইবন শিহাব, ইবনে বায্যার আলকুরদুরী আল-হানাফী। মৃত্যু: ৮২৭ হিজরী।

[41] বায্যাযিয়া, হিন্দিয়ার টিকা, ৬/৩৭৮ (লেখকের দেওয়া তথ্য সুত্র মোতাবেক)।

[42] বায্যাযিয়া, হিন্দিয়ার টিকা, ৪/৮১ (লেখকের দেওয়া সুত্রে)

[43] মুহাম্মদ জা‘ফর ইবন আব্দুল করীম আল-বুবাকানী আস-সিন্দি আল-হানাফী। তার লিখিত কিতাব, ‘আল-মাতানাহ ফিল-মারাম্মাতে আনিল খিযানাহ’।

[44] আল-ফাতাওয়া আস-সাইরাফিয়্যাহ। লিখক, হানাফী ফক্বীহ আসআদ ইবন ইউসুফ ইবন আলী মাজ্দুদ্দীন আস-সাইরাফী আল-বুখারী। মৃত:১০৮৮ হিজরী। (আল-আ‘লাম, ১/৩০২)

[45] দেখুন, বুরহানুদ্দীন ইবনু মাযাহ (৬১৬ হি.) রচিত কিতাব ‘আল-মুহিত্বুল বুরহানী, পৃষ্টা:১৪৪, খ-:৫।

[46] ফিকহে হানাফী নিয়ে রচিত কিতাব ‘আল-ফাতাওয়া আত্তাতার খানিয়া’, লিখক, ইবনুল আলা আল-আনসারী আদ-দেহলবী আল-হিন্দি।

[47] ‘আইনুল ইলম’ ‘মুফিদুল মুস্তাফিদ’ ‘কিতাবুন-নেসাব’ ফিক্বহে হানাফীতে রচিত বিভিন্ন কিতাবের নাম।

[48] আল-মাতানাহ ফিল-মারাম্মাতে আনিল খিযানাহ, ৬৩৩,৬৩৪,৬৩৫ (লেখকের দেওয়া সুত্রে)।

[49] বিশিষ্ট হানাফী ফক্বীহ মুহাম্মদ আমীন ইবন উমর ইবন আব্দুল আযীয ইবন আবেদীন। ১১৯৮-১১২৫ হিজরী। দামেশ্কে জন্ম এবং মৃত্যু। যাকে ইমামুল হানাফিয়্যাহ ফিশ্-শাম বলে ভূষিত করা হয়। আল্লামা ইবনে আবেদীন বা আল্লামা শামী নামে তিনি প্রসিদ্ধ। তার কিতাব ‘রাদ্দুল মুহতার‘ যা ফাতওয়া শামী হিসেবে পরিচিত তা ফিকহে হানাফীর মাসাঈলে আলাউদ্দীন হাসকাফী রচিত ‘আদ্দুররুল-মুখতারের’ ব্যাখ্যাগ্রন্থ। (আল-আ‘লাম: ৬/৪২)

[50] মুসান্নিফ আর্থাৎ ‘আদ্দুররুল-মুখতারের’ রচয়িতা মুহাম্মদ ইবন আলী আলাউদ্দীন আল-হাসকাফী। দামেশ্কের একজন হানাফী মুফতী। ১০২৫-১০৮৮ হিজরী। (আল-আ‘লাম: ৬/৪২)

[51] ‘আল-হাবীল ক্বুদসী ফিল ফুরু’ লিখক, কাযী জামাল উদ্দীন আহমদ ইবন মুহাম্মদ আল-গাযনবী আল-হানাফী। (কাশ্ফুয যুনুন:১/৬২৭)

[52] যাইনুদ্দীন ইবনে নুজাইম মিসরী আল-হানাফী ৯২৬-৯৭০ হিজরী রচিত কিতাব ‘আল-বাহরুর রায়িক্ব’। সালাত অধ্যায়। বিতর ও নফল অনুচ্ছেদ, ২/৫৬।

[53] ‘আল-মুনইয়াহ’ অর্থাৎ ‘মুনইয়াতুল মুসাল্লী’, এই কিতাবের দু্ই ব্যাখ্যাকার দ্বারা উদ্দেশ্য সম্ভবত, ‘গুনইয়াতুল মুতামাল্লী’ এবং ‘আল-ক্বুনইয়া’ কিতাবদ্বয়ের রচয়িতা। দুটি কিতাবই ‘মুনইয়াতুল মুসাল্লী’র শরাহ। কিতাব দুটি দুর্লভ ও সম্মুখে না থাকায় এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারিনি। (সংকলক)

[54] ইমাম নুরুদ্দীন আলী ইব্নু গানিম আল-মাক্দিসী আল-হানাফী। মৃত্যু:১০০৪ হিজরী (কাশফুয যুনুন:১/৮৪০)। সালাতুর রাগাইব নামে সালাতের বিদ‘আত সম্পর্কে তার লিখিত কিতাবের নাম, ردع الراغب عن الجمع في صلاة الرغائب

[55] রাদ্দুল মুহ্তার, কিতাবুস সালাত, বিতর ও নফল অধ্যায়, ২/২৬

[56] ইবনে মাজাহ, সনদ সহীহ, মৃত ব্যক্তির পরিবারে সমবেত হওয়া এবং খাবারের আয়োজন করা নিষেধ অনুচ্ছেদ, হাদীস নং ১৬১২, ইবনে মাজাহ এর হাদীসটির শব্দ হলো:

كنا نرى الاجتماع إلى أهل الميت وصنعة الطعام من النياحة

মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং:৬৯০৫, মুসনাদে আহমদের শব্দ:

كُنَّا نَعُدُّ الِاجْتِمَاعَ إِلَى أَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنِيعَةَ الطَّعَامِ بَعْدَ دَفْنِهِ مِنْ النِّيَاحَةِ

[57] সম্ভবত আবুল ক্বাসিম আল-কুশাইরী নাইসাবুরী রচিত ‘কিতাবুল মি‘রাজ’ উদ্দেশ্য।

[58] রাদ্দুল মুহতার, সালাত অধ্যায়, সালাতুল-জানাযা অনুচ্ছেদ, ২/২৪০।

[59] সিনানুদ্দীন ইউসুফ আল-আমাসী আল-হানাফী, আল-মক্কী, মৃত্যু: ১০০০ হিজরীর পাশাপাশি।

[60] আল-ইমাম তাজুশ-শরীয়াহ, আহমদ ইবন উবাইদুল্লাহ আল-মাহবুবী আল-হানাফী উমর ইবন সাদরুশ-শরীয়াহ আল-আওয়াল, মৃত্যু:৬৭২ হিজরী। তার লিখিত হেদায়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘নিহায়াতুল কিফায়াহ ফি দিরায়াতিল হিদায়াহ। (কাশফুয-যুনুন ২/২০২২)

[61] প্রখ্যাত হানাফী মুহাদ্দীস আবু মুহাম্মদ আল্লামা বদরুদ্দীন আল-আইনি। ৭৬২৮৫৫ – হিজরী১৩৬১ – -১৪৫১ ঈসায়ী। তার লিখিত হেদায়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আল-বিনায়াহ’। দেখুন, বর্ণিত কিতাবের কারাহিয়্যাহ অধ্যায়, মাসাঈলু মুতাফার্রিক্বাহ, ১১/২৬৭।

[62] রাদ্দুল-মুহতার, কিতাবুল ইজারাহ, মাতলাবুন ফিল-ইসতিজার আলাত্-ত্বা‘আত, : ৬/৫৬।

[63] ফিক্বহে হাম্বলীতে রচিত কিতাব, মূল নাম ‘মুনতাহাল-ইরাদাত ফিল জাম্‘ঈ বাইনাল মুক্বান্না‘ঈ ওয়াত্-তানক্বীহি ওয়ায্-যিয়দাত’, লেখক, তাক্বীউদ্দীন মুহাম্মদ ইবন আহমদ ইবন আব্দুল আযিয ইবনুন্-নাজ্জার আল-ফুতুহী আল-মিসরী, মৃত্যু: ৯৭২ হিজরী।

[64] রাদ্দুল মুহতার, প্রাগুক্ত অধ্যায়:৬/৫৭।

[65] সহীহুল বুখারী, অধ্যায়: কুরআনের ফযিলত সমূহ, অনুচ্ছে: যতক্ষন মন চায় ততক্ষন কুরআন তেলাওয়াত করা। নং: ৪৭৭৩।

[66] ‘নাওহা’ বা ‘নিয়াহাহ’, অর্থাৎ বিলাপ করে মৃত ব্যক্তির উপর ক্রন্দন করা। ইসলাম পূর্ব জাহেলী যুগে কেউ মারা গেলে বিলাপ করে ক্রন্দনের প্রচলন ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কর্মকে জাহেলী কর্ম আখ্যা দেন এবং তা হারাম ঘোষণা করেন। দেখুন, বুখারী, ‘মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ মাকরূহ অধ্যায়’। সহীহ মুসলিম, নিয়াহার উপর কঠোরতা অধ্যায়। বুখারীর একাধিক অধ্যায়ে এ বিষয় সংক্রান্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

[67] লোকদেখানো আমলকে শরয়ী পরিভাষায় ‘রিয়া’ বলা হয়। কুরআন হাদীস উভয়ের মাধ্যমে ‘রিয়া’ হারাম প্রমাণিত। হাদীসে ‘রিয়া’কে শিরকে আসগর বা ছোট শিরক গণ্য করা হয়েছে। ‘রিয়া’ হারাম বা কবীরা গোনাহের অন্যতম এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে লেখক এখানে হাদীসে রয়েছে বলে যে কথা উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ ‘‘লোক দেখানো আমলকারীর আমল এমন ধ্বংস হয় যেমন আগুন লাকড়ি খেয়ে ফেলে’’ এই মর্মের কোনো হাদীস রয়েছে বলে অবগত হতে পারিনি। (সংকলক)

[68] আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আলেমগণ ঈসালে ছওয়াবের বেলায় দুই ভাগে বিভক্ত। একদল কুরআনের আয়াত,‘‘وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى ’’ অর্থাৎ: আর মানুষের জন্য তার চেষ্টা ব্যতীত কোনো কিছু নেই, (সূরা নাজম:৩৯) এই মর্মের আয়াত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস,

“إذا مات الإنسان انقطع عمله إلا من ثلاث صدقة جارية وعلم ينتفع به وولد صالح يدعو له”

‘‘মানুষ যখন মারা যায় তখন তাঁর তিনটি আমল ব্যতীত সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। সাদাকায়ে জারিয়াহ, যে ইলম দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং নেক সন্তান যে তার জন্য দু‘আ করে।’’ (তিরমিযী, হাদীস সহীহ, ওয়াক্বফ অনুচ্ছেদ, নং:১৩৭৬) এই হাদীসের আলোকে তারা বলেন: হাদীসে উল্লেখিত তিন বস্তু ব্যতীত অন্য কিছুর ঈসাল হয় না। কেননা; হাদীসে তিন বস্তু ছাড়া সব আ‘মাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা এসেছে। আর এ তিনটি মূলত তার নিজের চেষ্টার ফসল। সুতরাং এই হাদীস আর আয়াতে কোনো বিরোধ নেই। তবে সাদাকা যেহেতু শারীরিক ইবাদত নয়, জীবিত ব্যক্তিকে তা দেওয়া যায়, তার পক্ষ থেকে অন্যকে দেওয়া যায়, মৃত্যুর পরও তার পক্ষ থেকে দেওয়া যাবে। কিন্তু শারীরিক ইবাদত কাউকে দেওয়া যায় না তাই তার ঈসাল ও নেই। তবে শারীরিক কিছু ইবাদত যার ঈসাল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত সেগুলো মানসুস হওয়ার কারণে তা এই কায়দা থেকে মুসতাসনা বা ব্যতিক্রম থাকবে। এই দল আলেমদের মতে কুরআন তেলাওয়াত যেহেতু একটি শারীরিক ইবাদত তাই তার ঈসালই হবে না, কেননা এব্যাপারে কোনো নস নেই। আর ইবাদতে বিষয় গাইরে মা‘কুল, তাই আমরা তাকে অন্য ইবাদতের উপর ক্বিয়াস করতে পারি না। আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অপরদল মনে করেন, যে কোনো ইবাদতের ঈসাল হতে পারে। আমাদের লেখক এমতের প্রবক্তা হিসেবে কুরআন তেলাওয়াতের ঈসালের সঠিক পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন।

 

সোর্স ঃ ইসলামিক অনলাইন মিডিয়া