সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করার দলিল সহ মাসআলা । রাফউল ইয়াদায়ন করার ফজিলত ও গুরুত্ব । নামাজে রফে ইয়াদাইন করার দলিল সহ হাদিস || Rafa Yadain Raising Hands During Prayer
সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করার দলিল সহ মাসআলা । রাফউল ইয়াদায়ন করার ফজিলত ও গুরুত্ব । নামাজে রফে ইয়াদাইন করার দলিল সহ হাদিস || Rafa Yadain Raising Hands During Prayer
রাফউল ইয়াদায়ন করার ফজিলত ও গুরুত্ব
‘রাফউল ইয়াদায়েনের অর্থ দু’হাত উঁচু করা।
এটি আল্লাহর নিকটে আত্মসমর্পনের অন্যতম
নিদর্শন।’ ১ রাফউল ইয়াদায়েন মহানবী (ছাঃ)
এর সুন্নাহ ও তরীকা। ‘হাদীছে রাফউল
ইয়াদায়েনের দুটি নিয়ম বণিত আছে। তাহলো-
দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত অথবা কানের লতি পর্যন্ত
উঁচু করা। ছালাত আদায়কালে চারটি সময়ে
রাফউল ইয়াদায়েন করতে হয়। (১) তাকবীরে
তাহররীমার সময় (২) রুকুতে যাওয়ার সময় (৩)
রুকু হতে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় (৪) তিন
বা চার রাকআত বিশিষ্ট ছালাতে প্রথম বৈঠক
শেষে তৃতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়িয়ে বুকে হাত
বাঁধার সময়। রাসূল (ছাঃ) মৃত্যুকাল পর্যন্ত
আজীবন উল্লিখিত সময়ে রাফউল ইয়াদায়েন
করেছেন এবং উক্ত নিয়মে ছালাত আদায়
করেছেন।’ ২ এ হিসাবে, নাবী (ছাঃ) এক
রাকআত বিশিষ্ট ছালাতে তিনবার, দু’রাকআত
বিশিষ্ট ছালাতে পাঁচবার , তিন রাকআত
বিশিষ্ট ছালাতে আটবার , চার রাকআত
বিশিষ্ট ছালাতে মোট দশবার রাফউল
ইয়াদায়েন করতেন।
“ইবনু ওমর (রাঃ) যখন কোন ব্যক্তিকে দেখতেন
যে, সে রুকুতে যাওয়া ও উঠার সময় রাফউল
ইয়াদায়েন করছেনা, তখন তিনি তাকে পাথর
নিক্ষেপ করতেন।” ৩
“উকবা বিন আমির (রাঃ) বলেন, ছালাতে
প্রত্যেক বারের হস্ত উত্তোলনে দশটি করে
নেকী রয়েছে।” ৪
“ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রাফউল ইয়াদায়েন
হচ্ছে ছালাতের সৌন্দর্যের একটি শোভা।
প্রত্যেক রাফউল ইয়াদায়েনের বদলে দশটি করে
নেকী রয়েছে অর্থাৎ প্রত্যেক আঙ্গুলের
বিনিময়ে রয়েছে একটি করে নেকী।” ৫
এতে প্রমানিত হয় যে, রাফউল ইয়াদায়েন করার
কারনে দু’রাকআত ছালাতে ৫০ নেকী আর চার
রাকআত ছালাতে ১০০ টি নেকী বেশি পাওয়া
যায়। এ হিসাবে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্তের ১৭
(সতের) রাকআত ফরয ছালাতে ৪৩০ (চার’শ
ত্রিশ) নেকী, একমাসে ১২,৯০০ (বারো হাজার
নয় শত) নেকী আর এক বছরে ১,৫৪,৮০০ (এক
লক্ষ চুয়ান্ন হাজার আট শত) নেকী শুধু রাফউল
ইয়াদায়েন করার জন্য বাড়তি যোগ হচ্ছে।
সুতরাং, কোন ব্যাক্তি ছালাতে রাফউল
ইয়াদায়েন করার কারনে ৩০(ত্রিশ) বছরে
৪৬,৪৪,০০০ (ছেচল্লিশ লক্ষ চুয়াল্লিশ
হাজার) নেকী আর ৬৫(পঁয়ষট্টি) বছরে
১,০০,৬২,০০০(এক কোটি বাষট্টি হাজার)
নেকী বেশি পাচ্ছেন। এ হিসাব শুধু পাঁচ
ওয়াক্ত ফরয ছালাতের। এছাড়া সুন্নাত, নফল,
বিতর, তাহাজ্জুত, তারাবীহ প্রভৃতি ছালাতে
রাফউল ইয়াদায়েন করার নেকী তো রয়েছেই, যা
এ হিসাব অনুপাতে পাওয়া যাবেই, ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং, যারা ফরয, সুন্নাত, নফল প্রভৃতি
ছালাতে রাফউল ইয়াদায়েন করেন না, তারা
কতগুলো নেকী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তা কি
ভেবে দেখেছেন? অথচ কিয়ামতের দিন হাশরের
ময়দানে মানুষ একটি নেকী কম হওয়ার কারনে
জান্নাতে যেতে পারবে না।
একটি হিসাব মতে, “রাফউল ইয়াদায়েনের
হাদীছের রাবীর সংখ্যা আশারায়ে মুবাশশারাহ
সহ অন্যূন ৫০ জন ছাহাবী এবং সর্বমোট
ছহীহ হাদীছ ও আছারের সংখ্যা অন্যূন ৪০০
(চারশত)। ইমাম সুয়ূতী ও আলবানী প্রমুখ
বিদ্বানগন রাফউল ইয়াদায়েনের হাদীছকে
মুতাওয়াতির পর্যায়ের বলে মন্তব্য করেছেন।
ফালিল্লাহিল হামদ। ইমাম বুখারী (রহঃ)
বলেন, কোন ছাহাবী রাফউল ইয়াদায়েন তরক
করেছেন বলে প্রমাণিত হয়নি।তিনি আরও
বলেন, রাফউল ইয়াদায়েনের হাদীছ সমূহের
সনদের চেয়ে বিশুদ্ধতম সনদ আর নেই।” ৬
সংগ্রহে: জুয়েল রানা
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ৩য় বর্ষ।
দিনাজপুর সরকারি কলেজ, দিনাজপুর।
তথ্য সূত্র:
(১) ছালাতুর রাসূল (ছাঃ): ড. মুহাম্মাদ
আসাদুল্লাহ আল-গালিব; ১০৮ পৃষ্ঠা, হাদীছ
ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ; ৪র্থ সংস্করন-২০১১
ঈসায়ী।
(২) ক. সহীহুল বুখারী-প্রথম খণ্ড, হাদীছ নং
৭৩৫, ৭৩৬, ৭৩৭, ৭৩৮; তাওহীদ
পাবলিকেশন্স: নবম প্রকাশ-সেপ্টেম্বর ২০১২
ঈসায়ী।
খ. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ): ড. মুহাম্মাদ
আসাদুল্লাহ আল-গালিব; ১০৮ পৃষ্ঠা, হাদীছ
ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ; ৪র্থ সংস্করন-২০১১
ঈসায়ী।
গ. বুলুগুল মারাম: তাওহীদ পাবলিকেশন্স,
প্রথম প্রকাশ- আগস্ট ২০১৩; হাদীছ নং ২৭৫,
২৭৬, ২৭৭।
ঘ. সহীহ মুসলিম: প্রথম খণ্ড, হাদীছ নং
৭৪৭, ৭৪৮, ৭৪৯, ৭৫০, ৭৫১, ৭৫২; হাদীস
একাডেমী-দ্বিতীয় সংস্করন, আগস্ট ২০১৪
ঈসায়ী।
(৩) জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
ছালাত-২০০ পৃষ্ঠা; প্রকাশক: শাইখ মুযাফফর
বিন মুহসিন, প্রকাশকাল: ২০১৩ ঈসায়ী।
(৪) ছিফাতু ছালাতিন নাবী (ছাঃ)-১৩০ পৃষ্ঠা;
তাওহীদ পাবলিকেশন্স: অষ্টম প্রকাশ,
নভেম্বর ২০১৫ ঈসায়ী।
(৫) সুনান আবূ দাঊদ: প্রথম খণ্ড, প্রকাশনায়:
আল্লামা আলবানী একাডেমী; দ্বিতীয় প্রকাশ:
জানুয়ারী ২০১৩ ঈসায়ী-৪৭৬ পৃষ্ঠা।
(৬) SALATUR RASOOL (SM) by Dr.
Muhammad Asadullah Al-Galib: 122 page;
Hadeeth Foundation Bangladesh: First
English Edition-2011 A.D
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) Sahih Al Bukhari Tawheed Publications
Sahih Al Bukhari 1st Part:
Dwonload Now Sahih Al Bukhari -1
মাসআলাহঃ সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করা
(ক) রফ‘উল ইয়াদাইন এর অর্থ, নিয়ম ও সময় এবং তৎসম্পর্কিত প্রসিদ্ধ সহীহ হাদীসসমূহঃ
রফ‘উল ইয়াদাইন এর অর্থ হচ্ছে দু’ হাত উঁচু করা। হাদীসে রফ‘উল ইয়াদাইনের দু’টি নিয়ম বর্ণিত আছে। তা হলো, দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত অথবা কানের লতি বরাবর উঁচু করা। সালাত আদায়কালে চারটি সময়ে রফ‘উল ইয়াদাইন করতে হয়। (১) তাকবীরে তাহরীমার সময় (২) রুকু‘তে যাওয়ার সময় (৩) রুকু‘ থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় (৪) তিন বা চার রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতে) প্রথম বৈঠক শেষে তৃতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে বুকে হাত বাঁধার সময়।
এ হিসেবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতে তিন বার দু’ রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতে পাঁচ বার, তিন রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতে আট বার এবং চার রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতে মোট দশ বার রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। (দেখুন, সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম, নাসায়ী আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও অন্যান্য) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুকাল পর্যন্ত আজীবন উল্লিখিত সময়ে রফ‘উল ইয়াদাইন করেছেন এবং উক্ত নিয়মেই সালাত আদায় করেছেন।
এ বিষয়ে বর্ণিত অসংখ্য সহীহ হাদীসাবলী থেকে কয়েকটি প্রসিদ্ধতম হাদীস পেশ করা হলোঃ
(১) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, তিনি যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন কাঁধ পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন, এবং যখন তিনি রুকু‘র জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন, আবার যখন রুকু‘ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এ রকম করতেন এবং সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন। তবে তিনি সিজদার সময় এমন করতেন না। (দেখুন, সহীহুল বুখারী, ৭৩৪, ৭৩৫, অনুচ্ছেদ-তাকবীরে তাহরীমা, রুকু‘তে যাওয়ার সময় ও রুকু‘ থেকে উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা, মুসলিম, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, আহমাদ, মুয়াত্তা মালিক, মুয়াত্তা মুহাম্মাদ, ত্বাহাভী, দারাকুতনী, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, বায়হাক্বী, মুসান্নাফ ‘আব্দুর রাজ্জাক, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ, নাসবুর রায়াহ, তালখীসুল হাবীব, তিরমিযী, অনুচ্ছেদ- রুকু‘র সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা, ইমাম তিরমিযী বলেন, এ অনুচ্ছেদে আলী উমার ওয়াইল ইবনু হুজর, আনাস আবূ হুরাইরাহ, মালিক ইবনু হুওয়াইবিস, আবূ হুমাইদ, আবূ উসাইদ, সাহল ইবনু সা‘দ, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ, আবূ কাতাদাহ, আবূ মূসা আল আশ‘আরী, জাবির, উমাইর লাইসী (রাঃ) প্রমুখ সাহাবায়ি কিরামের সূত্রেও হাদীস বর্ণিত আছে)।
(২) উপরোক্ত হাদীসটি বায়হাক্বীতে বর্ধিতভাবে বর্ণিত আছে যে, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভ অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত সর্বদাই উক্ত নিয়মেই সালাত আদায় করতেন (অর্থাৎ তিনি আজীবন উক্ত তিন সময়ে রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন)। (দেখুন, বায়হাক্বী, হিদায়াহ দিরায়াহ, ১/১১৪, ইমাম বুখারীর উস্তাদ ‘আলী ইবনুল মাদীনী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস আমার নিকটে সমস্ত উম্মাতের উপর হুজ্জাত বা দলীল স্বরূপ)।
(৩) ইবনু উমার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ রাক‘আত শেষে তৃতীয় রাক‘আতে দাঁড়ানোর সময়ে রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন- (দেখুন, সহীহুল বুখারী)। ‘আলী (রাঃ) ও অন্যদের থেকেও অনুরূপ বর্ণিত আছে- (দেখুন, জুযউল ক্বিরাআত)।
(৪) মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতের জন্য তাকবীর দিতেন তখন কান পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন। একইভাবে তিনি রুকু‘তে যাওয়ার সময় কান পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন এবং রুকু‘ থেকে উঠার সময়ও কান পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন ও সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন। (দেখুন, সহীহ মুসলিম, হা/ ৩৯১, সহীহ সুনানে ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাঊদ, ইরওয়া (২/৬৭, হাদীসটি সহীহ)।
(৫) ‘আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাকবীরে তাহরীমাহ সময়, রকু‘র সময় রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় এবং দু’ রাক‘আত শেষে তৃতীয় রাক‘আতে দাঁড়ানোর সময়ে রফ‘উল ইয়াদাইন করতে দেখেছেন। (দেখুন, বায়হাক্বী ২/৮০, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, সহীহ সুনানে ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাঊদ, হাদীসটি হাসান সহীহ)।
(৬) ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করেছি। তিনি তাকবীর দিয়ে সালাত আরম্ভ করে দু’ হাত উঁচু করলেন। অতঃপর রুকু‘ করার সময় এবং রুকু‘র পরেও দু’ হাত উঁচু করলেন। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, আহমাদ, সহীহ সুনানে ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাঊদ, হাদীসটি সহীহ)।
(৭) আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শুরুর সময় রুকু করার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করেছেন। (দেখুন, সহীহ ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাঊদ, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, হাদীসটি সহীহ)।
(৮) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দশজন সাহাবীর মধ্যে আবূ হুমাইদের নিকট উপস্থিত ছিলাম, তাদের (আবূ হুমাইদ, আবূ উসাইদ, সাহল ইবনু সা‘দ, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ- (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণের) মধ্যে একজন আবূ কাতাদাহ ইবনু রব্য়ী (রাঃ)ও ছিলেন। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত সম্পর্কে আপনাদের চেয়ে বেশি অবগত। তাঁরা বললেন, তা কিভাবে? আল্লাহর শপথ! আপনি তো আমাদের চেয়ে তাঁর অধিক নিকটবর্তী ও অধিক অনুসরণকারী ছিলেন না। তিনি বললেন, বরং আমি তো তাঁকে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। তাঁরা বললেন, এবার তাহলে উল্লেখ করুন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন দু’ হাত উঁচু করতেন এবং যখন রুকু‘ করতেন, রুকু‘ থেকে মাথা উঠাতেন, এবং দু’ রাক‘আত শেষে তৃতীয় রাক‘আতে দাঁড়াতেন তখনও দু’ হাত উঁচু করতেন। এ বর্ণনা শুনে তাঁরা সকলেই বললেন, আপনি সত্যই বলেছেন। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, সহীহ ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাঊদ, হাদীসটি সহীহ)।
(৯) আবূ মূসা আল আশ‘আরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত দেখাবো? অতঃপর তিনি তাকবীর দিয়ে দু’ হাত উঁচু করলেন। অতঃপর রুকু‘র জন্য তাকবীর দিয়ে দু’ হাত উঁচু করলেন। অতঃপর ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে দু’ হাত উঁচু করলেন। অতঃপর বললেন, এভাবেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেছেন, অতএব তোমরাও করো। আর তিনি দু’ সিজদার মাঝে দু’ হাত উঁচু করেননি। (দেখুন, সহীহ সনদে দারাকুতনী ১/২৯২, বায়হাক্বী, হাদীসটি সহীহ)
(১০) আবূ বাকর সিদ্দিক (রাঃ) বরেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত আদায় করেছি। তিনি যখন সালাত শুরু করতেন, তখন দু’ হাত উত্তোলন করতেন এবং যখন রুকু‘ করতেন ও রুকু‘ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও দু’ হাত উত্তোলন করতেন। (দেখুন, বায়হাক্বী ২/৭৩, ৭৪, এবং ইমাম যাহাবীর শারহু মুহাযযাব ২/৪৯)।
(১১) আবূ যুবায়র সূত্রে বর্ণিত। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) যখন সালাত আরম্ভ করতেন তখন দু’ হাত উঁচু করতেন এবং যখন রুকু‘ করতেন ও রুকু‘ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ দু’ হাত উঁচু করতেন এবং তিনি বলতেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এভাবেই রফ‘উল ইয়াদাইন করতে দেখেছি। (দেখুন, সহীহ সুনানে ইবনু মাজাহ, হাদীসটি সহীহ)।
(১২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি তিনি সালাত শুরুর সময় রুকু‘র সময় এবং (রুকু‘ থেকে উঠে) সিজদাতে যাওয়ার সময় কাঁধ বরাবর দু’ হাত উঁচু করেছেন। (সহীহ সুনানে ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাঊদ, ও অন্যান্য, হাদীসটি সহীহ)।
(১৩) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক তাকবীরে রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন- (সহীহ ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাঊদ, হাদীসটি সহীহ) একদা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে মায়মূন আল-মাক্বী বললেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু জুবায়র (রাঃ)-কে সালাতের শুরুতে, রুকু‘র সময় সিজদার প্রাক্কালে এবং তৃতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়ানোর সময় দু’ হাতে ইশারা (রফ‘উল ইয়াদাইন) করতে দেখেছি। এ কথা শুনে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, তুমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত দেখতে পছন্দ করো তাহলে ইবনু জুবায়রের সালাতরে অনুকরণ করো। (হাদীসটি সহীহ, দেখুন, আবূ দাঊদ, ত্বাবারানী কাবীর ১১/১৩৩, ও অন্যান্য)
(খ) রফ‘উল ইয়াদাইন সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস ও আসারের সংখ্যা এবং সেসবের মান-
(১) রফ‘উল ইয়াদাইন সম্পর্কে বর্ণিত সর্বমোট সহীহ হাদীস ও আসারের সংখ্যা অন্যুন ৪০০। (দেখুন, সিফরুস সাআদাত, পৃঃ ১৫)।
(২) ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীসসমূহের সনদের চেয়ে বিশুদ্ধতম সনদ আর নেই। (দেখুন, ফাতহুল বারী ২/২৫৭)।
(৩) ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে বর্ণিত রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস মুতাওয়াতির পর্যায়ের। (দেখুন, তুহফাতুল আহওয়াযী ২/১০০, ১০৬, দিরায়াতুল লাবীব, ১৬৯)।
(৪) হাদীসের অন্যতম ইমাম হাফিয তাকীউদ্দিন সুবকী (রহঃ) বলেন, সালাতের মধ্যে রফ‘উল ইয়াদাইন করার হাদীস এতো বেশি যে, রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীসকে মুতাওয়াতির বলা ছাড়া উপায়ই নেই। (দেখুন, সুবকীর জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন)।
(গ) রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণের সংখ্যা-
* রুকু‘তে যাওয়া ও রুকু‘ থেকে উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা সম্পর্কে চার খালীফাহ প্রায় ২৫ জন সাহাবী থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহ রয়েছে। (সালাতুল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃঃ ৬৫, হাদীস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)।
* আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম জাওযী (রহঃ) বলেন, তাকবীরে তাহরীমাহ রুকু‘র সময় ও রুকু থেকে উঠে এ তিন সময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রফ‘উল ইয়াদাইন করেছেন এ সম্পর্কে প্রায় ৩০ জন সাহাবী বর্ণনা করেছেন। (দেখুন, যাদুল মা‘আদ)
* হাফিয ইবনু হাজার আসকালানীর উস্তাদ হাফিয আবূল ফাযল (রহঃ) রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর সংখ্যা তন্ন তন্ন করে খুঁজে মোট ৫০জন পেয়েছেন। (দেখুন, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৭, ফাতহুল বারী ২/২৫৮)।
* মুহাদ্দিস ইরাক্বী (রহঃ) তাঁর ফাতহুল মুগীস গ্রন্থে বলেন, আমি সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস প্রায় ৫০জন সাহাবা থেকে একত্রিত করেছি। তিনি তাকরীবুল আসানীদ ও তাকরীবুল মাসানীদ গ্রন্থে বলেন, জেনে রাখো! সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস ৫০জন সাহাবায়ি কিরাম থেকে বর্ণিত হয়েছে। (দেখুন, ফাতহুল মুগীস ৪/৮, কিতাবু তাকরীবুল আসানীদ ও তাকরীবুল মাসানীদ, পৃষ্ঠা ১৮)।
* মূলতঃ অসংখ্য সাহাবায়ি কিরাম রফ‘উল ইয়াদাইনে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে হাদীসের অন্যতম ইমাম হাফিয তাকীউদ্দিন সুবকী (রহঃ) স্বীয় ‘জুযঊ রফ‘উল ইয়াদাইন’ গ্রন্থে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহাবী সহ এমন ৪৯জন বিশিষ্ট সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছেন যাঁরা সকলেই রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনা করেছেন। নিম্নে তাঁদের নামসমূহ উল্লেখ করা হলোঃ
(১) আবূ বাকর সিদ্দিক (রাঃ), (২) উমার (রাঃ), (৩) ‘উসমান (রাঃ), (৪) ‘আলী (রাঃ), (৫) তালহা (রাঃ), (৬) যুবায়র (রাঃ), (৭) সা‘দ (রাঃ), (৮) সাঈদ (রাঃ), (৯) ‘আবদুর রাহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ), (১০), আবূ ‘উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রাঃ), (১১) মালিক ইবনু হুওয়াই রিস (রাঃ), (১২) যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ), (১৩) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ), (১৪) আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ), (১৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ), (১৬) ইমাম হাসান (রাঃ), (১৭) ইমাম হুসাইন (রাঃ), (১৮) বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ), (১৯) যিয়াদ ইবনু হারিস (রাঃ), (২০) আবূ কাতাদাহ (রাঃ), (২১) হাসান ইবনু সাআদ (রাঃ), (২২) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ), (২৩) সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রাঃ), (২৪) ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ), (২৫) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ), (২৬) ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ), (২৭) বারিয়াহ (রাঃ), (২৮) ‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ), (২৯) ‘আদী ইবনু ‘আজলান (রাঃ), (৩০) আবূ মাস‘উদ আল-আনসারী (রাঃ), (৩১) ‘উমার লাইসী (রাঃ), (৩২) ‘আয়িশাহ (রাঃ), (৩৩) আবুদ দারদা (রাঃ), (৩৪) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ), (৩৫) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ), (৩৬) আনাস (রাঃ), (৩৭) ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ), (৩৮) জাবির (রাঃ), (৩৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু জুবায়র (রাঃ), (৪০) আবূ হুমাইদ সাঈদী (রাঃ), (৪১) আবূ সাঈদ (রাঃ), (৪২) মুহাম্মাদ ইবনু সালামাহ (রাঃ), (৪৩) উম্মু দারদা (রাঃ), (৪৪) আরাবী (রাঃ), (৪৫) মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ), (৪৬) সালমান ফারিসি (রাঃ), (৪৭) বারিরাহ ইবনু খাদির (রাঃ), (৪৮) হাকিম ইবনু ‘উমাইর (রাঃ), (৪৯) এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু জাবিন (রাঃ)। উল্লিখিত সমস্ত সাহাবায়ি কিরামই রফ‘ঊল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনা করেছেন। (দেখুন, জুযয়ি সুবকী, পৃঃ ৭)।
(ঘ) রফ‘উল ইয়াদাইনের উপর সমস্ত সাহাবায়ি কিরামের ‘আমল ও ফাতাওয়াহ-
সাহাবায়ি কিরাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেই ক্ষ্যান্ত হননি বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণে সমস্ত সাহাবীগণও সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। তার প্রমাণঃ
(১) ‘আলী (রাঃ)-এর পুত্র হাসান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের সকলেই রুকু‘তে যাওয়ার সময়, এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, বায়হাক্বী ২/৭৫)।
(২) সা‘দ ইবনু জুবায়র (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমস্ত সাহাবীই সালাত শুরুর সময়, রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। (দেখুন, বায়হাক্বী ২/৭৫)।
(৩) ইমাম বুখারী বলেন, ইমাম হাসান (রাঃ) ও হুমাইদ ইবনু হিলাল বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমস্ত সাহাবীগণ রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। তাঁর কোনো সাহাবী রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন না বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত)।
(৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার সাহাবী ছিলেন। তাঁদের সম্পর্কে সহীহুল বুখারীর শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, একমাত্র ইবনু মাস‘ঊদ ছাড়া বাকী সমস্ত সাহাবায়ি কিরাম রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। (দেখুন, ফাতহুল বারী ২/২১৯)।
(৫) ইমাম হাকিম (রহঃ) বলেন, রফ‘উল ইয়াদইন ছাড়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এমন কোনো সুন্নাতের কথা আমরা জানি না যে ব্যাপারে খুলাফায়ি রাশিদীন, আশারায়ি মুবাশশিরীন এবং বিভিন্ন শহরে অবস্থানকারী বচড় বড় সাহাবীগণ একমত হয়েছেন। (দেখুন, নাসবুর রায়াহ ১/৪১৬-৪১৮, তালখীসুল হাবীর, পৃঃ ৮২, নায়লুল ফারকাদাইন, পৃঃ ২৬, ইমাম যায়লায়ী হানাফী, আবদুল হাই লাখনৌভী হানাফী, আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমিরী হানাফী (রহঃ) ও অন্যান্যরা একে ইমাম হাকিম সূত্রে বর্ণনা করেছেন)।
(ঙ) সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইনের পক্ষে ৫৩জন বিশিষ্ট তাবিঈ ও তাবে তাবিঈন ইমামগণ-
ইমাম বুখারী, ইমাম বায়হাক্বী ও ইমাম তাক্বীউদ্দীন সুবকী (রহঃ) ৫৩ জন এমন বিশিষ্ট তাবেঈ এবং তাবে তাবেঈনের নাম উল্লেখ করেছেন- যাঁরা সালাত আদায়কালে সর্বদা তিন জায়গায় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। উক্ত ৫৩ জন হলেনঃ
(১) সা‘দ ইবনু জুবায়র (২) ‘আত্বা ইবনু আবূ রিবাহ (৩) মুজাহিদ (৪) কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (৫) সালিম ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (৬) ‘উমার ইবনু ‘আবদুল আযীয (৭) নু‘মান ইবনু আবুল আয়াশ (৮) ইবনু সিরীন (৯) হাসান বাসরী (১০) ‘আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (১১) নাফি‘ (১২) হাসান ইবনু মুসলিম (১৩) ক্বায়িস ইবনু সা‘দ (১৪) মাকহুল (১৫) তাউস (১৬) আবূ নাজরাহ (১৭) আবূ আহমাদ (১৮) ইবনু আবূ নাজীহ (১৯) ইসহাক্ব ইবনু রাহওয়াহ (২০) ইমাম আওযায়ী (২১) ইসমাঈল (২২) ইসহাক্ব ইবনু ইবরাহীম (২৩) ইবনু মুঈন (২৪) আবূ ‘উবাইদাহ (২৫) আবূ সাত্তার (২৬) হুমাইদী (২৭) ইমাম ইবনু জারীর (২৮) হাসান ইবনু জা‘ফর (২৯) সালিম ইবনু ‘আবদুল আযীয (৩০) ‘আলী ইবনু হুসাইন (৩১) ‘আবদ ইবনু ‘উমার (৩২) ঈসা ইবনু মুসা (৩৩) ‘আলী ইবনু হাসান (৩৪) কাতাদাহ (৩৫) ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (৩৬) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উসমান (৩৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (৩৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু জুবায়র (৩৯) ‘আলী ইবনু মাদীনী (৪০) ‘আবদুর রাহমান (৪১) মুহাম্মাদ ইবনু সালাম (৪২) মু‘তামির (৪৩) কা‘ব ইবনু সা‘দ (৪৪) কা‘ব ইবনু সাঈদ (৪৫) ইয়াহইয়া (৪৬) ইয়াহইয়া ইবনু মুঈন (৪৭) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (৪৮) ইয়াকূব (৪৯) ইবনু মুবারক (৫০) ইমাম যুহরী (৫১) মালিক ইবনু আনাস (৫২) ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (৫৩) এবং ইমাম শাফিঈ (রহঃ)। উল্লিখিত ৫৩ জন বিশিষ্ট তাবেঈ ও তাবে‘ তাবেঈন রুকু‘তে যাওয়ার সময় ও রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় দু’ হাত উত্তোলন করতেন। (দেখুন, বুখারীর জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন, বায়হাক্বী ২/৭৫, সুবকীর জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন, পৃঃ ২ এবং আয়নী ৩/১০)।
(চ) রফ‘উল ইয়াদাইনের পক্ষে জমহুর মুহাদ্দিস, জমহুর ফাক্বীহ ও মুজতাহিদ ইমামগণের অভিমত-
(১) ইমাম বুখারী ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ)- মক্কাহ, মদীনাহ, হিজাজ, ইয়ামান, সিরিয়া, ইরাক, বাসরাহ, খুরাসান প্রভৃতি দেশের লোকেরা সকলেই রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত)।
অসংখ্য সহীহ হাদীস ও আসার বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যারা রফ‘উল ইয়াদাইন করেন না তাদের বিরুদ্ধে ইমাম বুখারী (রহঃ) ‘জুযউল রফ‘উল ইয়াদাইন’ নামে একটি স্বতন্ত্র কিতাবই রচনা করেছেন এবং সেখানে এর পক্ষে ১৯৮টি দলীল বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে হাদীসে অন্যতম হাফিয তাকিউদ্দিন সুবকী (রহঃ)ও রফ‘উল ইয়াদাইনের পক্ষে ‘জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন’ নামে একখানা স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেছেন। সুতরাং মুহাদ্দিসগণের নিকট রফ‘উল ইয়াদাইন যে কত বড় গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত তা সহজেই অনুমেয়।
(২) ইমাম ইবনু হিব্বান (রহঃ) তার সহীহ ইবনু হিব্বান গ্রন্থে রফ‘উল ইয়াদাইন সম্পর্কে হাদীস উল্লেখ করে বলেন, উল্লিখিত হাদীস এটাই প্রমাণ করে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মাতকে সালাতের রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রুকু‘ থেকে উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করার নির্দেশ দিয়েছেন। অতঃপর তিনি মালিক ইবনু হুয়াইরিস বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা সেভাবে সালাত আদায় করো যেভাবে তোমরা আমাকে আদায় করতে দেখো। (দেখুন, সহীহ ইবনু হিববান, ৫/১৯০)।
(৩) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ ইমাম আবদুল্লাহ ইবনু মুবারাক বলেছেন, রফ‘উল ইয়াদাইন সম্পর্কিত হাদীস সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুপ্রমাণিত। কিন্তু ইবনু মাসঊদ যে বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমবার (তাক্ববীরে তাহরীমা) ছাড়া আর কোথাও রফ‘উল ইয়াদাইন করেননি- এ হাদীসটি প্রমাণিত নয় এবং প্রতিষ্ঠিতও নয়। (দেখুন, জামি‘আত তিরমিযী, অনুঃ রফ‘উল ইয়াদাইন প্রসঙ্গ)। ইবনু মুবারাক আরো বলেন, রফ‘উল ইয়াদাইন সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস ও ইসনাদ বিদ্যমান থাকার কারণে আমি যেন দেখতে পাচ্ছি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রফ‘উল ইয়াদাইন করেছেন। (দেখুন, বায়হাক্বী মা‘রিফাহ ২/১৪২)
(৪) ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু নাসর (মৃতঃ ২৯৪ হিঃ) বলেনঃ রফ‘উল ইয়াদাইন করার পক্ষে প্রায়ই সকল দেশের আলিমগণের অভিমত আছে। একমাত্র কুফার একটি গ্রুপ ছাড়া বাকী সবাই রফ‘উল ইয়াদাইন করেন। (দেখুন, ফাতহুল বারী)
(৫) ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম ইবনুল মাদীনী (রহঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহীহ হাদীসসমূহ মূলে মুসলিমদের উপর ইসলামের হাক্ব হচ্ছে সালাতের রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা।
(৬) ইবনু আবদুল বার (রহঃ) বলেনঃ (সমস্ত সাহাবায়ি কিরামের বিপরীতে) একমাত্র ইবনু মাসঊদই রুকু‘র সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন না করার কথা বর্ণনা করেছেন। (দেখুন, ফাতহুল বারী)।
(৭) শাহ ইসমাঈল শহীদ (রহঃ) বলেনঃ রফ‘উল ইয়াদাইন এমনই নির্ভরযোগ্য প্রমাণাদি দ্বারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ি কিরাম ও পরবর্তী সমস্ত স্তরের শ্রেষ্ঠতম ইমাম ও মুজতাহিদগণ দ্বারা সর্বোতভাবে সাব্যস্ত ও সমর্থিত হয়েছে যে, একে রহিত বা পরস্পর বিরোধ দোষে দুষ্ট বলা অবান্তর ও অবাস্তব। (দেখুন, রওজাতুন নাদিয়া, ১/৯৬)।
(৮) হাফিয ইবনু কাইয়্যিম আল জাওযী (রহঃ) বলেনঃ সালাতের রুকু‘র সময় এবং রুকু‘ থেকে মাঠা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন না করা সম্পর্কে যতগুলো হাদীস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বলে রয়েছে তার সবই বাতিল। এগুলোর একটি সঠিক নয়। যেমন ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদের হাদীস, যা তিনি শেষ দিকে বলেছেন বরং বায়হাক্বী খিলাফিয়াত গ্রন্থে সনদ সহকারে ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে রুকু‘র সময় রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করেছেন। (দেখুন- আল-মানার, পৃষ্ঠা ৪৯)।
তিনি আরো বলেন, তাকবীরে তাহরীমার সময়, রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা সম্পর্কে প্রায় ত্রিশজন সাহাবী বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এর বিপরীত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। মৃত্যু পর্যন্ত সারা জীবন তিনি এ নিয়মেই সালাত আদায় করেছেন। আর বারাআ ইবনু ‘আযিব থেকে বর্ণিত এ সংক্রান্ত হাদীসটি সহীহ নয়। মূলতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো এ নিয়ম পরিত্যাগ করেননি এবং এর থেকে প্রত্যাবর্তনও করেননি। আর ইবনু মাস‘ঊদের রফ‘উল ইয়াদাইন ত্যাগ করাটা এজন্য ছিলো না যে, তিনি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জানতে পেরেছেন...। অথচ (শেষ বয়সে) ইবনু মাসঊদের রফ‘উল ইয়াদাইন না করার নিয়মের বিপরীতে রয়েছে বিপুল সংখ্যক সহীহ হাদীস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রফ‘উল ইয়াদাইন সম্পর্কে এতোগুলো সহীহ, অকাট্য ও সুপ্রমাণিত ‘আমলী হাদীস বর্তমান থাকা সত্ত্বেও কী করে তা বর্জন করা যেতে পারে? এমনটি অকল্পনীয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্মনীতি অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন- আমীন। (দেখুন, যাদুল মাআদ)।
(৯) আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেনঃ রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা মুতাওয়াতির সূত্রে সাব্যস্ত। এটাই হচ্ছে ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল এবং অধিকাংশ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহগণের অভিমত। ইবনু আসাকীরের বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম মালিক এর উপরই মারা গেছেন। হানাফীদের অনেকেই এ মত গ্রহণ করেছেন। (দেখুন, সিফাতু সালাতুন নাবী)
(১০) শায়খ সালিহ আল-উসাইমিন (রহঃ) বলেনঃ জেনে নেয়া আবশ্যক যে, সালাতে চারটি স্থানে রফ‘উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। তা হচ্ছেঃ ১) সালাতের প্রারম্ভে তাকবীর তাহরীমা বলার সময় ২) রুকু‘তে যাওয়ার সময় ৩) রুকু‘ থেকে উঠার সময় ৪) প্রথম তাশাহুদ শেষ করে তৃতীয় রাক‘আতে উঠার সময়। এ চারটি স্থানের বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধভাবে বর্ণনা এসেছে। আর জানাযা ও দু’ ঈদের সালাতে প্রত্যেক তাকবীরে রফ‘উল ইয়াদাইনবা হাত উত্তোলন করা শারী‘আত সম্মত। (দেখুন, ফাতাওয়াহ আরকানুল ইসলাম)।
(১১) স‘উদী আরবের প্রাক্তন গ্রান্ড মুফতী শায়খ আবদুল আযীয বিন বায (রহঃ) বলেনঃ মুসল্লীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে, সে তাকবীরে তাহরীমাহ সময়, রুকু‘কালে, রুকু থেকে উঠার সময় এবং প্রথম তাশাহহুদ শেষে তৃতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়ানোর সময় উভয় কাঁধ বা কান বরাবর ক্বিবলাহর দিকে মুখ করে দু’ হাত উত্তোলন করবে। এটাই সুন্নাত, যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে প্রমাণিত। (দেখুন, ফাতাওয়াহ শায়খ বিন বায)।
(চ) রফ‘উল ইয়াদাইন সম্পর্কে হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠ আলিমগণের অভিমত-
(১) মোল্লা ‘আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ সালাতে রুকু‘তে যাওয়ার সময় ও রুকু‘ থেকে উঠার সময় দু’ হাত না তোলা সম্পর্কে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সবই বাতিল হাদীস। তন্মধ্যে একটিও সহীহ নয়। (দেখুন, মাওযু‘আতে কাবীর, পৃঃ ১১০)।
(২) হানাফী মুহাদ্দিস আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (রহঃ) রুকু‘তে যাওয়ার পূর্বে রফ‘উল ইয়াদাইন করার ব্যাপারে ইমাম আবূ হানিফা সম্পর্কে লিখেছেনঃ ইমাম আবূ হানিফা সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তা ত্যাগ করলে গুনাহ হবে। (দেখুন, ‘উমদাতুল ক্বারী ৫/২৭২)।
(৩) শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ যে মুসল্লী রফ‘উল ইয়াদাইন করে ঐ মুসল্লী আমার কাছে অধিক প্রিয় সেই মুসল্লীর চেয়ে যে রফ‘উল ইয়াদাইন করে না। কারণ রফ‘উল ইয়াদাইন করার হাদীসগুলো সংখ্যায় বেশি এবং অধিকতর মজবুত। (দেখুন, হুজ্জাতুল্লাহলিল বালিগাহ ২/১০)।
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) আরো বলেন, রফ‘উল ইয়াদাইন হচ্ছে সম্মান সূচক কর্ম। যা মুসল্লীকে আল্লাহর দিকে রুজু হওয়ার ব্যাপারে এবং সালাতে হওয়ার ব্যাপারে হুশিয়ার করে দেয়। (দেখুন, হুজ্জাতুল্লাহহিল বালিগাহ ২/১০)।
(৪) আল্লামা আবুল হাসান সিন্ধী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ যারা এ কথা বলে যে, তাকবীরে তাহরীমাহ ছাড়া রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবঙ রুকু‘ থেকে উঠার সময় দু’ হাত তোলার হাদীস মানসুখ ও রহিত তাদের ঐ দাবী দলীলবিহীন এবং ভিত্তিহীন। (দেখুন, শারহু সুনানে ইবনু মাজাহ, মিসরের ছাপা ১খন্ড ১৪৬ পৃঃ টিকা)।
(৫) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমিরী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ এ কথা জানা উচিত যে, সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করার হাদীস সূত্র ও আমলের দিক দিয়ে মুতাওয়াতির, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এটা মানসুখও নয় এবং এর একটি হরফও নাকচ নয়। (দেখুন, নাইলুল ফারকাদাইন, পৃষ্ঠা ২২, রসূলে আকরাম কী নামায, পৃঃ ৬৯)।
(৬) আল্লামা আবদুল হাই লাখনৌভী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে রফ‘উল ইয়াদাইন করার প্রমাণ বেশি এবং প্রাধান্যযোগ্য। আর এটা মানসূখ বা নাকচ হবার দাবী যা ত্বাহাভী, ইবনুল হারাম ও আইনী প্রমুখ আমাদের দলের মনীষীদের পক্ষ থেকে প্রচারিত হয়েছে, তা এমনই প্রমাণহীন যে তদ্বারা রোগী নিরোগ হয় না এবং পিপাসার্তও তৃপ্ত হয় না। (দেখুন, আত-তা‘লীকুল মুমাজ্জাদ, পৃষ্ঠা ৯১)।
তিনি আরো বলেন, রুকু‘তে যাওয়ার সময় ও রুকু‘ থেকে উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনেক সাহাবী (রাঃ) থেকে দৃঢ় সূত্রে ও সহীহ হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত ও সাব্যস্ত হয়েছে। (দেখুন, সিফরুস সাআদাত, মালাবুদ্দাহ মিনহু, রওযাতুন নাদিয়্যাহ ও হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ)।
(৭) ইমাম মুহাম্মাদের সাথী ও ইমাম আবূ ইউসুফের শিষ্য ইসাম ইবনু ইউসুফ আল বালাখী (রহঃ)-এর রফ‘উল ইয়াদাইন করা সম্পর্কে আল্লামা আবদুল হাই লাখনৌভী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ ইসাম ইবনু ইউসুফ ছিলেন ইমাম আবূ ইউসুফের সাগরীত এবং হানাফী। তিনি রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রকু‘ থেকে মাথা উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন- (আল-ফাওয়ায়িদুল বাহিয়্যাহ ফী তারাজিমিল হানাফীয়া, পৃঃ ১১৬)। আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারাক (রহঃ) সুফয়ান সওরী এবং শু‘বাহ (রহঃ) বলেন, ইসাম ইবনু ইউসুফ মুহাদ্দিস ছিলেন। সেজন্য তিনি রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। (আল-ফাওয়ায়িদুল বাহিয়্যাহ, পৃঃ ১১৬)।
(৮) শায়খ আবুত ত্বালীব মাক্কী হানাফী (রহঃ) তার ‘কুতুল কুলূব’ গ্রন্থে সালাতের সুন্নাতসমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রুকু‘তে যাওয়ার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা ও তাকবীর বলা সুন্নাত। তারপর ‘সামিআল্লাহু লিমান হামীদাহ’ বলে রফ‘উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। (দেখুন কুতুল কুলুব ৩/১৩৯)।
(৯) ক্বাজী সানাউল্লাহ পানিপত্তি হানাফী (রহঃ) বলেনঃ বর্তমান সময়ে অধিকাংশ আলিমের দৃষ্টিতে রফ‘উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। অধিকাংশ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিসসিনে কিরাম একে প্রমাণ করেছেন। (দেখুন, মালাবুদ্দাহ মিনহু, পৃঃ ৪২, ৪৪)।
(১০) শায়খ আব্দুল ক্বাদীর জ্বিলানী (রহঃ) সালাতের সুন্নাতসমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ সালাত শুরু করার সময়, রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রুকু‘ থেকে উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। (দেখুন, গুনিয়াতুত ত্বালিবীন, পৃঃ ১০)।
(১১) দ্বিতীয় আবূ হানীফা নামে খ্যাত আল্লামা ইবনু নুজাইম (রহঃ) বলেনঃ রুকু‘তে যাওয়ার সময় ও রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করলে সালাত বরবাদ হওয়া কথা যা মাকহুল নাসাফী ইমাম আবূ হানীফা থেকে বর্ণনা করেছেন তা বীরল বর্ণনা, যার রিওয়ায়াত ও দিরায়াত উভয়েরই পরিপন্থি অর্থাৎ বর্ণনা সূত্র তোঃ ও জ্ঞানত্যঃ ঠিক না। (দেখুন, বাহরু রায়িক ১/৩১৫, যাহরাতু রিয়াযুল আবরার, পৃঃ ৮৯)।
(১২) দেওবন্দের শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেনঃ রফ‘উল ইয়াদাইন মানসূখ নয়। আর এর স্থায়িত্ব প্রমাণিত নয়- (দেখুন, ইযাহুল আদিল্লাহ)। ইতোপূর্বে ইমাম যায়লায়ী হানাফীর বরাত দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে যে, এর স্থায়িত প্রমাণিত। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত আজীবন রফ‘উল ইয়াদাইন করেছিলেন। (দেখুন, নাসবুর রায়াহ তাখরীজ আহাদিসিল হিদায়াহ ১/৪১০)।
(১৩) মুফতী আমিমুল ইহসান লিখেছেনঃ যারা বলেন, রফ‘উল ইয়াদাইন করার হাদীস মানসূখ- আমি বলি তাদের একটি মাত্র দলীল (অর্থাৎ ইবনু মাসঊদের হাদীস), দ্বিতীয় কোনো দলীল নেই। (দেখুন, ফিক্বহুস সুন্নাহ ওয়াল আসার, পৃঃ ৫৫)।
[উল্লেখ্য, ইবনু মাসঊদের উক্ত হাদীসটি বিশুদ্ধতা নিয়ে মুহাদ্দিসগণ মতভেদ করেছেন। কতক মুহাদ্দিস সেটিকে হাসান বা সহীহ আখ্যায়িত করলেও অধিকাংশ মুহাদ্দিসিনে কিরাম ইবনু মাসঊদের বর্ণনাকে দুর্বল, বাতিল এবং দলীলের অযোগ্য বলেছেন। সামনে ৭৪৮৯নং হাদীসের টিকায় এর আলোচনা আসছে]
(১৪) হানাফী মাযহাবের ফিক্বাহ গ্রন্থাবলীতেও রফ‘উল ইয়াদাইনের পক্ষে বক্তব্য রয়েছে। তন্মধ্যকার কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
(ক) রুকু‘র পূর্বে ও পরে রফ‘উল ইয়াদাইন করার হাদীস প্রমাণিত আছে। দেখুন, আয়নুল হিদায়া ১/৩৮৪, নুরুল হিদায়া)
(খ) রফ‘উল ইয়াদাইন করার হাদীস রফ‘উল ইয়াদাইন না করার হাদীসের চেয়ে শক্তিশালী ও মজবুত। (দেখুন, আয়নুল হিদায়া ১/৩৮৯)।
(গ) বায়হাক্বীর হাদীসে আছে, ইবনু উমার বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত সালাতের মধ্যে রফ‘উল ইয়াদাইন করেছেন। (দেখুন, আয়নুল হিদায়া ১/৩৮৬)।
(ঘ) রফ‘উল ইয়াদাইন না করার হাদীস দুর্বল। (দেখুন, নুরুল হিদায়া, পৃঃ ১০২)
(ঙ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রফ‘উল ইয়াদাইন প্রমাণিত আছে এবং এটাই হাক্ব। (দেখুন, আয়নুল হিদায়া ১/৩৮৬)।
মূলতঃ হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট ইমাম ও মুহাক্কিক আলিমগণসহ ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল ও তাদের সমস্ত অনুগামী ও আলেমগণ এবং প্রায় সমস্ত ফুকাহায়ি মুহাদ্দিসিন সালাতে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়াও রুকু‘র আগে, রুকু‘র পরে এবং তৃতীয় রাক‘আতের প্রারম্ভে কাঁধ বা কান পর্যন্ত দু’ হাত উঠানোর পক্ষে অভিমত পোষণ করেছেন। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগ থেকে অদ্যাবধি সালাতে চারটি স্থানে রফ‘উল ইয়াদাইন করার পক্ষে এমন একটা সামগ্রিক ও বলিষ্ঠ সমর্থনকে হেয় বা লঘু করে দেখা অবান্তর ও নিন্দনীয় সংকীর্ণতা নয় কি? অতএব এরূপ সুস্পষ্ট বিশুদ্ধ সুন্নাত কি করে বর্জন করা যায়?! এমনটি অকল্পনীয়।
(ছ) রফ‘উল ইয়াদাইন এর গুরুত্ব ও ফাযীলাত-
(১) মালিক বলেন, ইবনু উমার (রাঃ) কোনো ব্যক্তিকে সালাতে রুকু‘র সময় ও রুকু‘ থেকে উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন না করতে দেখলে তাকে ছোট পাথর ছুড়ে মারতেন, যতক্ষণ না সে রফ‘উল ইয়াদাইন করে। (দেখুন, বুখারীর জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন, আহমাদ, দারাকুতনী-নাফি‘ থেকে সহীহ সনদে)
(২) উক্ববাহ ইবনু আমির (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি রুকু‘র সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করে তার জন্য রয়েছে প্রত্যেক ইশারার বিনিময়ে দশটি করে নেকী। (দেখুন, বায়হাক্বীর মা‘রিফাত ১/২২৫, মাসায়িলে আহমাদ কানজুল উম্মাল)
(৩) ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রফ‘উল ইয়াদাইন হচ্ছে সালাতের সৌন্দর্যের একটি শোভা। প্রত্যেক রফ‘উল ইয়াদাইন এর বদলে দশটি করে নেকী রয়েছে, অর্থাৎ প্রত্যেক আঙ্গুলের বিনিময়ে রয়েছে একটি করে নেকী। (দেখুন, আল্লামা আইনী হানাফীর উমদাতুল ক্বারী ৫/২৭২)। এতে প্রমাণিত হয়, রফ‘উল ইয়াদাইন করার কারণে দু’ রাক‘আত সালাতে পঞ্চাশ ও আর চার রাক‘আত সালাতে ১০০টি নেকী বেশি পাওয়া যায়। এ হিসেবে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের রাক‘আত ফারয সালাতে ৪৩০টি নেকী, একমাসে বারো ১২,৯০০টি আর এক বছরে ১,৫৪৮০০ (এক লক্ষ চুয়ান্ন হাজার) নেকী শুধু রফ‘উল ইয়াদাইন করার জন্য বাড়তি যোগ হচ্ছে। সুতরাং কোনো ব্যক্তি সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করার কারণে ৩০ বছরে ৪৬,৪৪০০০ নেকী আর ৬৫ বছরে ১০০৬২০০০ (এক কোটি বাষট্টি হাজার নেকী বেশি পাচ্ছেন)। এ হিসাব শুধু পাঁচ ওয়াক্ত ফারয সালাতে। এছাড়া সুন্নাত নাফল বিতর তাহাজ্জুত তারাবী প্রভৃতি সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করার নেকী তো রয়েছেই, যা এই হিসাব অনুপাতেই পাওয়া যাবে। সুতরাং যারা ফারয, সুন্নাত, নাফল প্রভৃতি সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করেন না তারা কতগুলো নেকী থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা কি ভেবে দেখেছেন? অথচ ক্বিয়ামাতের দিন মানুষ হাশরের ময়দানে একটি নেকী কম হওয়ার কারণে জান্নাতে যেতে পারে না!
নামাযে রফয়ে ইয়াদাইন করার পদ্ধতি। যদি মুসল্লি এতে ভুল করে তাহলে কী করণীয়?
প্রশ্ন
আমি নামায পড়েছি। রুকু থেকে উঠার সময় আমি দুই কাঁধ বা দুই কান বরাবর আমার হাতদ্বয় রাখিনি; নীচে ছিল। যখন টের পেলাম তখন হাত সঠিকভাবে হাত রাখলাম। এমতাবস্থায় আমার নামায কী সহিহ? নাকি সহিহ নয়?
উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের চারটি স্থানে হাত উঠাতেন। সে স্থানগুলো হচ্ছে: তাকবীরে তাহরীমার সময়, রুকুকালে, রুকু থেকে উঠার সময় এবং দ্বিতীয় রাকাত তথা প্রথম তাশাহ্হুদ থেকে উঠার সময়।
এর সপক্ষে দলিল হচ্ছে ইমাম বুখারী (৭৩৯) কর্তৃক নাফে (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, "ইবনে উমর (রাঃ) যখন নামাযে প্রবেশ করতে চাইতেন তখন তাকবীর দিতেন এবং হাতদ্বয় উত্তোলন করতেন। যখন রুকুতে যেতেন তখনও হাতদ্বয় উত্তোলন করতেন। যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলতেন তখনও হাতদ্বয় উত্তোলন করতেন। যখন দুই রাকাত থেকে উঠতেন তখনও হাতদ্বয় উত্তোলন করতেন। এ পদ্ধতিকে ইবনে উমর (রাঃ) আল্লাহ্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে সম্বোন্ধিত করেছেন।"
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
"হাত উঠানোর স্থান চারটি: তাকবীরে তাহরীমার সময়, রুকুকালে, রুকু থেকে উঠার সময় এবং প্রথম তাশাহ্হুদ থেকে দাঁড়ানোর সময়।"[আল-শারহুল মুমতি' (৩/২১৪) থেকে সমাপ্ত]
হাত তোলার পদ্ধতি:
এক বর্ণনাতে এসেছে: "কাঁধ বরাবর হাত তুলতে হবে"। অপর এক বর্ণনাতে এসেছে: "কানের উপর পর্যন্ত হাত তুলতে হবে"। আব্দুল্লাহ্বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, "আমি রাসূলুল্লাহ্সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি, যখন তিনি নামাযে দাঁড়াতেন তখন তিনি হাতদ্বয় এতটুকু উত্তোলন করতেন; যাতে করে হাতদ্বয় কাঁধদ্বয় বরাবর হত। তিনি এটি করতেন যখন রুকুর জন্য তাকবীর দিতেন, যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন এবং যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলতেন। তিনি সেজদাকালে এভাবে করতেন না।"[সহিহ বুখারী (৭৩৬) ও সহিহ মুসলিম (৩৯০)]
মালিক বিন আল-হুওয়ারিছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: "রাসূলুল্লাহ্সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাকবীর (তাহরীমা) উচ্চারণ করতেন তখন হাতদ্বয় এতটুকু উত্তোলন করতেন যাতে করে হাতদ্বয় কানদ্বয় বরাবর হত। যখন রুকু করতেন তখনও হাতদ্বয় এতটুকু উত্তোলন করতেন যাতে করে সে দুটি কানদ্বয় বরাবর হত। যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন এবং سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলতেন তখনও এভাবে করতেন।"[সহিহ মুসলিম (৩৯১)]
এর ভিত্তিতে আলেমগণ হাত তোলার পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ করেছেন:
কোন কোন আলেমের অভিমত হচ্ছে: কাঁধ পর্যন্ত হাত তোলা। উদ্দেশ্য হচ্ছে— হাতের তালুদ্বয় কাঁধ বরাবর হওয়া। এটি উমর বিন খাত্তাব (রাঃ), তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) এর অভিমত। এটি "আল-উম্ম" গ্রন্থে ইমাম শাফেয়ির অভিমত। ইমাম শাফেয়ির ছাত্রগণও এই অভিমত পোষণ করেন। ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ, ইসহাক ও ইবনুল মুনযির প্রমুখ আলেমের অভিমতও এটা; যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে আল-মাজমু গ্রন্থে (৩/৩০৭)।
আর ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মাযহাব হচ্ছে— কান বরাবর হাত তুলতে হবে।
ইমাম আহমাদ থেকে অন্য এক রেওয়ায়েতে এসেছে— দুটো পদ্ধতির মধ্য থেকে যে কোন একটি নির্বাচন করতে পারবে। একটি পদ্ধতির উপর অপর পদ্ধতির বিশেষ কোন মর্যাদা নেই। ইবনুল মুনযির কিছু কিছু আহলে হাদিস থেকেও এ অভিমতটি বর্ণনা করেছেন এবং এ অভিমতের প্রশংসা করেছেন।
আলবানী বলেন: এটাই হক্ব। উভয়টি সুন্নাহ। আমাদের মুহাক্কিক আলেমগণের অনেকে যেমন- আলী আল-ক্বারী, সিন্দি হানাফী প্রমুখ এ অভিমতের প্রতি ঝুঁকেছেন।
[দেখুন: আলবানীর রচিত "আসলু সিফাতি সালাতিন নাবিয়্য সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম" (১/২০২)]
দুই:
নামাযে পূর্বোক্ত স্থানগুলোতে হাত তোলা নামাযের সুন্নত।
"আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা" গ্রন্থে (২৭/৯৫) এসেছে: শাফেয়ি মাযহাব ও হাম্বলি মাযহাবের আলেমগণ ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন যে, রুকুকালে ও রুকু থেকে উঠার সময় 'হাত-তোলা' শরিয়তের বিধান এবং এটি নামাযের একটি সুন্নত। সুয়ূতী বলেন: "রফয়ে ইয়াদাইন (হাত-তোলা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে পঞ্চাশজন সাহাবীর বর্ণনা দ্বারা সাব্যস্ত।"[সমাপ্ত]
সুন্নত ছেড়ে দিলে নামাযের কোন ক্ষতি হয় না। কোন মুসল্লি যদি গোটা নামাযের কোথাও রফয়ে ইয়াদইন (হাত উত্তোলন) না করে তাতেও তার নামাযের শুদ্ধতার উপর কোন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু সে ব্যক্তি নামাযের একটি সুন্নত ছেড়ে দিল এবং সওয়াব থেকে বঞ্চিত হল।
রফয়ে ইয়াদাইন বা হাত উত্তোলন করা সত্ত্বেও যদি হাত উঠানোর পদ্ধতিতে কিছু ঘাটতি হয় যেমনটি আপনার ক্ষেত্রে ঘটেছে সে বিষয়টি রফয়ে ইয়াদাইন একেবারে ছেড়ে দেয়ার চেয়ে সহজতর।
পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে: হাত উত্তোলনের ক্ষেত্রে আপনার সামান্য যে ভুল হয়েছে এবং আপনি সে ভুলটি সংশোধন করে নিয়েছেন; এটি আপনার নামাযের শুদ্ধতার উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। আপনার জন্য উপদেশ হল: আপনি হাত তোলার ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন করা ও কৃত্রিমতা করার দরকার নেই। আপনি যদি দেখেন যে, আপনার হাতদ্বয় কাঁধের পুরোপুরি বরাবর হয়নি তবুও পুনরায় হাত উত্তোলন করার দরকার নাই। কারণ এটি আপনার মাঝে ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা) ও সন্দেহ টেনে আনবে এবং বিনা কারণে নামাযের কাজগুলো বারবার করার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর সেটা হাত উত্তোলনের ক্ষেত্রে সামান্য একটু ত্রুটি ঘটার চেয়ে জঘন্য।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।